ডাবল সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়েও মুশফিক দেখালেন শেষ নন তিনি
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 18-06-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

শেষটা হলো আক্ষেপ দিয়ে। সম্ভাবনা জাগিয়েও মুশফিকুর রহিমের আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন আপাতত অপূর্ণ রয়ে গেল। ১৬৩ রান করে আসিতা ফার্নান্দোর বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরে গেছেন তিনি।

তবে নিজেকে ফিরে পাওয়া এই ইনিংস দিয়েই মুশফিক জানিয়ে দিলেন, বয়স ৩৮ পার হলেও তিনি হারিয়ে যাননি। শততম টেস্টের দিকে তাঁর দৃষ্টি ফেলে রাখা অযথা নয়।

নভেম্বরের আগে বাংলাদেশের আর টেস্ট ম্যাচ নেই। নভেম্বর-ডিসেম্বরে পূর্ণাঙ্গ হোম সিরিজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। তিনটি করে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির সঙ্গে হবে দুটি টেস্ট ম্যাচ।

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এ বছরই ১০০তম টেস্ট খেলতে ফেলতে পারেন মুশফিকুর রহিম

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এ বছরই ১০০তম টেস্ট খেলতে ফেলতে পারেন মুশফিকুর রহিমছবি: এএফপি

সেই সিরিজের প্রায় পাঁচ মাস আগে এখনই লিখে দেওয়া যায়—সব ঠিক থাকলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টটিই হবে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের খেলা প্রথম শততম টেস্ট ম্যাচ। গৌরবের সেই মালা পরার অপেক্ষায় আছেন মুশফিকুর রহিম।

 

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগে বাংলাদেশ দল খেলবে আর দুটি টেস্ট। কলম্বোয় চলতি শ্রীলঙ্কা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি শুরু হবে ২৫ জুন। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট। ‘সব ঠিক থাকলে’ বলতে যদি মুশফিক নিজে এই ম্যাচগুলোতে খেলার মতো অবস্থায় থাকেন এবং কোনো দৈবদুর্বিপাকে পড়ে এই তিন টেস্টের কোনোটি বাতিল না হয়ে যায়।

ভাবছেন, যে ক্রিকেটার এই মুহূর্তে গলে ক্যারিয়ারের ৯৭তম টেস্ট খেলছেন, সেঞ্চুরির পর দেড় শও পেরিয়ে যাঁর ব্যাট ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্নও দেখাচ্ছিল; তাঁর শততম টেস্ট খেলার নিশ্চয়তা দিতে এত কিছু বলার কী আছে! আর তো মাত্র তিনটি টেস্টই। ১০০তম টেস্ট খেলতে মুশফিককে ঠেকাবে কে!

 

তবে কথাটা এখন যত জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে, কদিন আগেও কি তা বলা যেত? গত বছরের আগস্টে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯১ রানের ইনিংসটি খেলার পর থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগপর্যন্ত কেমন যাচ্ছিল মুশফিকের পারফরম্যান্স?

গল টেস্টে ১৫০ ছোঁয়ার পর মুশফিকুর রহিম

গল টেস্টে ১৫০ ছোঁয়ার পর মুশফিকুর রহিমছবি: এএফপি

টেস্টে টানা ১৩ ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই, সর্বোচ্চ ইনিংস ৪০ রানের, দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি ছয় ইনিংসে। ব্যাট হাতে এমন ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর ৯৬ টেস্ট খেলা মুশফিকও যদি শ্রীলঙ্কা সিরিজের দলে না থাকতেন, সেটা নিয়ে বড়জোর দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে কিছু বাড়তি প্রশ্নই হতো। এ নিয়ে হইচই ফেলার মতো পরিস্থিতি তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণেই সৃষ্টি হতো না।

 

টেস্ট, ওয়ানডে মিলিয়ে ক্যারিয়ারে সাতবার নার্ভাস নাইনটিতে আউট হয়েছেন মুশফিক, ওয়ানডেতে একবার অপরাজিত থেকেছেন ৯৮ রানে। সব সংস্করণ মিলিয়ে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১টি সেঞ্চুরির মালিককে যেন শততম টেস্টের আগেও পেয়ে বসেছিল ‘নার্ভাস নাইনটি’তে!

 

মুশফিকের শ্রীলঙ্কা সিরিজের দলে থাকা নিয়ে ইতিউতি প্রশ্ন যে ওঠেনি, তা নয়। নির্বাচকেরা তবু মুশফিকের অভিজ্ঞতায় আস্থা রেখেছেন। বাইরে যে আলোচনাই থাকুক, তাঁদের কখনো মনে হয়নি টানা ১৩ ইনিংসে একটিও ফিফটি না পাওয়া মুশফিককে বাদ দেওয়ার সময় হয়েছে।

মুশফিকুর রহিমকে বাদ দেওয়ার গুঞ্জনও উঠেছিল

মুশফিকুর রহিমকে বাদ দেওয়ার গুঞ্জনও উঠেছিলছবি: এএফপি

গলে আজ মুশফিক যখন ১৫০ রান পেরিয়েও ইনিংসটাকে টেনে নিচ্ছিলেন, তখন মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ঢাকায় থাকা প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনের সঙ্গে।

শ্রীলঙ্কা সিরিজের টেস্ট দল নির্বাচনের আগে মুশফিককে নিয়ে নির্বাচক কমিটির ভাবনা জানাতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘মুশফিক আমাদের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। তার ওপর আস্থা ছিল বলেই তাকে চুক্তিতে রাখা হয়েছে। কাজেই ওকে বাদ দিয়ে আমরা কিছু ভাবিনি। হ্যাঁ, যেকোনো ক্রিকেটারেরই খারাপ সময় যেতে পারে, মুশফিকেরও গেছে। কিন্তু মুশফিক যে রকম ক্রিকেটার, আমাদের বিশ্বাস ছিল সে ফিরে আসবে। কবে ফিরবে, সেটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’

পাকিস্তানের বিপক্ষে মুশফিকের ১৯১ রানের ইনিংসটি রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে বসেই দেখেছিলেন প্রধান নির্বাচক। ওই ইনিংসে খেলাটার প্রতি মুশফিকের যে নিবেদন তিনি দেখেছেন, যে ধৈর্য দেখেছেন; মুশফিকের টানা ১৩ ইনিংসের রানখরাও সেটা মন থেকে মুছতে পারেনি গাজী আশরাফের।

পাকিস্তানের বিপক্ষে গত বছর রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ১৯১ রানের ইনিংস উপহার দেন মুশফিকুর রহিম

পাকিস্তানের বিপক্ষে গত বছর রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ১৯১ রানের ইনিংস উপহার দেন মুশফিকুর রহিমছবি: এএফপি

সঙ্গে শ্রীলঙ্কার উইকেটে মুশফিকের ব্যাট থেকে ভালো কিছু আসবে, এই বিশ্বাসও তাঁর ছিল, ‘ওখানে বলে বাউন্স থাকে, বল ব্যাটে আসে। এ রকম উইকেটে ব্যাটসম্যানরা ভালো করবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে সবাই আবার সেটা পারে না। মুশফিক যে সেঞ্চুরির পরও ইনিংসটাকে এভাবে লম্বা করতে পারছে, এটা তার কাছে প্রত্যাশিতই ছিল।’

গলে যে আস্থার অনিন্দ্যসুন্দর প্রতিদানই দিলেন মুশফিক। চতুর্থ উইকেটে ২৬৪ রানের জুটির সঙ্গী অধিনায়ক নাজমুল হোসেন আজ ১৪৮ রানে লাঞ্চের আগেই আউট হয়ে গেলেও পরের ব্যাটসম্যান লিটন দাসকে নিয়ে মুশফিক বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন ৪৫০–এর ওপারে।

ক্যারিয়ারের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে দলে নিজের ভূমিকাও বদলে নিয়েছেন মুশফিক। একটা সময় ছিল যখন নিজের খেলা আর অনুশীলন নিয়েই বেশি সময় কাটাতেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ বছর পার করে ফেলা এই ক্রিকেটার। অন্য কিছুতে মনোযোগ ছিল কম। কিন্তু এখন জুনিয়র সতীর্থদের পাশেও তাঁকে দেখা যায় সক্রিয় পরামর্শকের ভূমিকায়। তিনি নিজেও যেন এখন চাইছেন তাঁর অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হোক দলের অন্যরা।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিকের ১৬৩ রানের ইনিংসটির প্রশংসা করেছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিকের ১৬৩ রানের ইনিংসটির প্রশংসা করেছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ

প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফও মুশফিকের কাছে এ রকম কিছুই আশা করেন তাঁর ক্যারিয়ারের এই সময়ে, ‘মুশফিকের যে অভিজ্ঞতা, সেটা আমরা কোথাও থেকে কিনতে পারব না। মাহমুদউল্লাহ আগেই টেস্ট ক্রিকেট ছেড়েছে; সাকিব, তামিমও নেই। এ রকম অবস্থায় মুশফিকই একমাত্র আছে, যার ছায়ায় অন্য ক্রিকেটাররা বেড়ে উঠতে পারে, যার কাছ থেকে তারা কিছু শিখতে পারে।’

খেলার প্রতি মুশফিকের নিবেদন আর কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা থেকে শেখার আছে অনেক কিছুই। আর শেখা যায় কীভাবে খারাপ সময় কাটিয়ে ফিরে আসার সাধনা। গলে আরেকবার সেই সাধনার সুফল পাওয়া মুশফিক এখন তাকিয়ে শততম টেস্টের দিকে।

শেয়ার করুন