ইউক্যালিপটাস-আকাশমণি বিতর্ক: পরিবেশের শত্রু নাকি কাঠের উৎস
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 21-06-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের মাটি–পানি ও আবহাওয়ার সঙ্গে একীভূত হয়ে এ দেশের গাছগাছালির অংশ হয়ে উঠেছে অনেক বিদেশি গাছ। তবে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি নিয়ে বিতর্ক আছে। সম্প্রতি গাছ দুটির চারা তৈরি, রোপণ ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্কের বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।

অতিরিক্ত পানি শোষণ, মাটি অনুর্বর করা, পাখির অনুপযোগী পরিবেশ তৈরি করা—এমন নানা অভিযোগ আছে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ নিয়ে। যদিও দেশের কাঠের চাহিদা মেটাতে গাছ দুটির বড় ভূমিকা আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাঠের চাহিদা মেটানোসহ প্রাকৃতিক বনের ওপর চাপ কমাতে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট গত শতকের ৮০–এর দশকে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির চারার পরীক্ষামূলক রোপণ শুরু করে।

উদ্ভিদবিদ ও গবেষকেরা বলছেন, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি দ্রুত বাড়ে এবং কাঠের চাহিদা মেটায় ঠিকই, তবে এগুলো বেশি পানি শোষণ করে ও মাটিকে রুক্ষ করে তোলে। গরু-ছাগল এসব গাছের পাতা খায় না। গাছ দুটিতে পাখিও বাসা বাঁধে না।

 

 

ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির এককভাবে বনায়ন করা ঠিক না। যেহেতু এসব গাছ দ্রুত বাড়ে, তাই অন্যান্য প্রজাতির গাছের চেয়ে তারা অতিরিক্ত পানি ও পুষ্টি শোষণ করে।

অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

 

বন অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর কাঠের চাহিদা ৮০ লাখ ঘনফুট। মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ থেকে ৩০ লাখ ঘনফুট কাঠ আমদানি করা হয়। আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসগাছ থেকে আসা কাঠ কতটুকু চাহিদা পূরণ করে, সে তথ্য অবশ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।

গত ১৫ মে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছের চারা তৈরি, রোপণ ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে, জাতীয়-আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে এমন সিদ্ধান্ত বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন জারি প্রসঙ্গে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখার উপসচিব তুষার কুমার পাল বলেছিলেন, নানা গবেষণায় দেখা গেছে, এসব গাছের পানি শোষণক্ষমতা বেশি ও মাটিকে রুক্ষ করে তোলে। তাই দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আগ্রাসী প্রজাতির গাছের চারা রোপণের পরিবর্তে দেশি প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে বনায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

বাংলাদেশে যেভাবে এল

২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস ‘ইউক্যালিপটাস ডিলেমা ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ওই গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৩০ সালে সিলেটের চা–বাগানে সৌন্দর্য বাড়াতে ইউক্যালিপটাস গাছ আনা হয়। সেখান থেকে তা ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি (একাশিয়া) বাংলাদেশের জন্য উপযোগী কি না, তা জানতে ১৯৬৫ সালে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে এই গাছ রোপণ করা হয়। তবে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের করা ওই পরীক্ষামূলক পর্বের তেমন কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি। পরে আশির দশকে ৩৪ প্রজাতির ইউক্যালিপটাস ও ১০ প্রজাতির আকাশমণি এনে আবারও পরীক্ষামূলক বনায়ন করা হয়। এর মধ্যে তিন প্রজাতির আকাশমণি ও তিন প্রজাতির ইউক্যালিপটাস বাংলাদেশে রোপণের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।

ওই তিন প্রজাতির আকাশমণি হলো একাশিয়া অরিকিউলিফরমিস, একাশিয়া ম্যানগিয়াম ও একাশিয়া নাইলোটিকা। আর ইউক্যালিপটাস ক্যামালডালেন্সিস, ইউক্যালিপটাস টেরাটিকরনিস ও ইউক্যালিপটাস ব্রেসানিয়া—এই তিন প্রজাতি রোপণের জন্য নির্বাচিত করে বন গবেষণা ইনস্টিটিউট।

তিন প্রজাতির ইউক্যালিপটাস তখন দেশের ১৪টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় ইউক্যালিপটাস ক্যামালডালেন্সিস প্রজাতির রোপণ করা চারার মধ্যে টিকে ছিল ৮৯ শতাংশ, যা তিন প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকে থাকার হার। এ হার সবচেয়ে কম ছিল শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়ায়, ৫৬ শতাংশ।

এ ছাড়া প্রতি হেক্টর জায়গায় রোপণ করা ইউক্যালিপটাস থেকে পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি ৯৫ ঘনমিটার কাঠ উৎপাদন হয় টাঙ্গাইলের মধুপুরে। আর সবচেয়ে কম (১৫ দশমিক ৩ ঘনমিটার) কাঠ পাওয়া যায় লাউয়াছড়ায়।

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক বনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে গাছ রোপণ শুরু হয় ১৮৭১ সালে, পার্বত্য অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার সীতা পাহাড়ে। সেখানে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার মিয়ানমার থেকে আনা সেগুনের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিকভিত্তিতে বনায়নের সূচনা করে। সেগুনের বনায়ন বনভূমিকে শুষ্ক করে তোলে ও উদ্ভিদ আচ্ছাদন নষ্ট করলেও বিষয়টি খুব আলোচনায় আসেনি, যতটা আলোচনায় এসেছে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির কথা।

ইউক্যালিপটাস গাছ

ইউক্যালিপটাস গাছফাইল ছবি

উপনিবেশ স্থাপনকারী, ইউরোপীয় ও আরব বণিকদের হাত ধরে এ পর্যন্ত ৩০২ প্রজাতির গাছ ও লতাগুল্ম বাংলাদেশে এসেছে। এর মধ্যে গাছ ৯৪ প্রজাতির। যেমন উত্তর আমেরিকা থেকে এসেছে লিলি ট্রি ও নাগলিঙ্গম, দক্ষিণ ভারত থেকে মহুয়া, মিয়ানমার ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে জারুল, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে রাবার, অস্ট্রেলিয়া থেকে সিলভার ওক, ফিজি ও ফিলিপাইন থেকে বিলাতি গাব, মাদাগাস্কার থেকে কৃষ্ণচূড়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে নারকেল ও আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলো থেকে এসেছে বাওবাবগাছ।

বিতর্ক ও বাস্তবতা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের গবেষণা বলছে, উপনিবেশ স্থাপনকারী, ইউরোপীয় ও আরব বণিকদের হাত ধরে এ পর্যন্ত ৩০২ প্রজাতির গাছ ও লতাগুল্ম বাংলাদেশে এসেছে। এর মধ্যে গাছ ৯৪ প্রজাতির। যেমন উত্তর আমেরিকা থেকে এসেছে লিলি ট্রি ও নাগলিঙ্গম, দক্ষিণ ভারত থেকে মহুয়া, মিয়ানমার ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে জারুল, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে রাবার, অস্ট্রেলিয়া থেকে সিলভার ওক, ফিজি ও ফিলিপাইন থেকে বিলাতি গাব, মাদাগাস্কার থেকে কৃষ্ণচূড়া, ইন্দোনেশিয়া থেকে নারকেল ও আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলো থেকে এসেছে বাওবাবগাছ।

সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় ব্যাপকভাবে ইউক্যালিপটাসগাছ রোপণ নিয়ে প্রথম বিতর্কের শুরু আশিরর দশকে, ভারতে। এই বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল বাস্তুতন্ত্রে ইউক্যালিপটাসগাছের নেতিবাচক প্রভাব। যেমন এই গাছ অতিরিক্ত পানি শোষণ করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের করা গবেষণায় ইউক্যালিপটাসগাছ কী পরিমাণ বেশি পানি শোষণ করে, সেই চিত্র উঠে এসেছে। ওই গবেষণা অনুযায়ী, এক ঘন সেন্টিমিটার কাঠ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি পানি শোষণ করে কদমগাছ, ৪ হাজার ২৩৩ মিলিলিটার। ইউক্যালিপটাসের ক্যামালডালেন্সিস প্রজাতি প্রতি ঘন সেন্টিমিটার কাঠ উৎপাদনে শোষণ করে ৩ হাজার ১৪৫ মিলিলিটার পানি। প্রতি ঘন সেন্টিমিটারের জন্য একাশিয়া বা আকাশমণি শুষে নেয় ২ হাজার ২২৩ মিলিমিটার পানি। সবচেয়ে কম পানি শোষণ করে মেহগনিগাছ। প্রতি ঘন সেন্টিমিটার কাঠ উৎপাদনে এই গাছের পানি লাগে ১ হাজার ৬১৫ মিলিলিটার।

ইউক্যালিপটাস নিয়ে আরও অভিযোগ হলো—এটি মাটির পুষ্টিগুণ ও আর্দ্রতা নষ্ট করে। চারপাশে থাকা ফসলেরও ক্ষতি করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এককভাবে ইউক্যালিপটাস না লাগিয়ে মিশ্র প্রজাতির সঙ্গে রোপণ করা হলে মাটির গুণাগুণ ঠিক থাকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ রকম একটি মিশ্র প্রজাতির বাগানের মাটির অম্লত্ব-ক্ষার (পিএইচ), বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা (ইসি), নাইট্রোজেন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ মোট সাতটি উপাদানের আদর্শ মান পাওয়া গেছে।

ওই গবেষণা অনুযায়ী, ইউক্যালিপটাসগাছের পাতার নির্যাস কিছু ফসলের বীজের অঙ্কুরোদগমে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। শর্ষে, শসা, মুলা, বরবটি ও ছোলার বীজ ব্যবহার করে এই পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব দেখা গেছে মুলা ও ছোলার ক্ষেত্রে। ইউক্যালিপটাসের সতেজ পাতার তুলনায় শুষ্ক পাতার নির্যাস ফসলের বীজের অঙ্কুরোদগমকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। ভারতের এক গবেষণাতেও একই ফল পাওয়া গেছে। ১৯৮৪ সালে দেশটিতে হওয়া এক গবেষণায় দেখা যায়, কিছু ফসলের বীজ অঙ্কুরোদগমে ইউক্যালিপটাসগাছ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য বলছে, ইউক্যালিপটাসগাছের প্রথম বনায়ন শুরু হয় প্রায় ৪০০ বছর আগে, পর্তুগালে। পরে ব্যাপকভিত্তিতে এই গাছের বনায়ন করে ব্রাজিল। বিশ্বে বর্তমানে ১৩ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৩০ লাখ হেক্টর ভূমিতে বর্তমানে ইউক্যালিপটাসগাছের বনায়ন আছে।

বন সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা আরণ্যক ফাউন্ডেশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে যে চারটি গাছ নিয়ে সবচেয়ে বেশি গবেষণা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি অন্যতম। যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭০০ মিলিমিটারের কম, সেখানে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস রোপণ করা যাবে না। বাংলাদেশে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ হাজার ২০০ মিলিমিটার।

ফরিদ উদ্দিন বলেন, আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস দ্রুত বাড়ে। এগুলোর টিকে থাকার ক্ষমতাও বেশি। যেখানে অন্য কোনো গাছ হচ্ছে না, সেখানেও এই গাছ বেড়ে উঠতে পারে। তবে একটি খারাপ বিষয় হলো, যখন কোনো গাছ লাগাই, তখন শুধু সেটিই রোপণ করতে থাকি। মনোকালচার বা কোনো জায়গায় একধরনের গাছ থাকা ভালো নয়।

ইউক্যালিপটাস ফসলের ক্ষতি করলেও আকাশমণিগাছ করে না উল্লেখ করে ফরিদ উদ্দিন বলেন, এসব গাছ থেকে মাত্র ১০ বছরে কাঠ পাওয়া যায়। দেশে কাঠের চাহিদা মেটাতে এই গাছ সাহায্য করে। না হলে প্রাকৃতিক বনের ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ত। অবক্ষয়িত বন, জলাভূমির আশপাশে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস রোপণ করা যায় বলে তিনি মত দেন।

মেহগনিগাছ ইউক্যালিপটাসের ভালো বিকল্প বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম মাহফুজুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির সমস্যা তিনটা। অতিরিক্ত পানি শোষণ করে মাটিকে শুষ্ক করে তোলে; এই গাছ তার নিচের উদ্ভিদ আচ্ছাদন (আন্ডারগ্রোথ ভেজিটেশন) নষ্ট করে ফেলে এবং এটি থেকে রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরিত হয়। মাহফুজুর রহমান বলেন, বৃষ্টির সময় ইউক্যালিপটাসের পাতায় থাকা রাসায়নিক উপাদান মাটিতে পড়ে মাটিও দূষিত হয়। এতে উদ্ভিদ আচ্ছাদন নষ্ট হয়ে যায়। মাটির উর্বরতা ও গুণাগুণও নষ্ট হয়ে যায়।

 

‘ইউক্যালিপটাস ডিলেমা ইন বাংলাদেশ’ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক মো. কামাল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির এককভাবে বনায়ন করা ঠিক নয়। যেহেতু এই গাছ দ্রুত বাড়ে, তাই অন্যান্য প্রজাতির গাছের চেয়ে তারা অতিরিক্ত পানি ও পুষ্টি শোষণ করে।

ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছের পাতা ও বাকলের মধ্যে ফেনলিকম্পাউন্ড নামের এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আছে জানিয়ে অধ্যাপক কামাল বলেন, বদ্ধ জলাশয়ের পাশে এসব গাছ লাগালে গাছ থেকে পাতা পড়ে পানিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া হতে পারে। গরু-ছাগল এ গাছের পাতা খায় না।

অধ্যাপক মো. কামাল হোসাইন অবশ্য এ–ও বলেন, এসব গাছের কয়েকটি সুবিধাও আছে। অবক্ষয়িত জায়গায় যেখানে অন্য কোনো গাছ হয় না, সেখানে এটা হয়। কিছুটা লবণাক্ত জায়গা, রুক্ষ ও শুষ্ক মাটিতে এ গাছ জন্মাতে পারে এবং দ্রুত বড় হয়। ৮ থেকে ১০ বছরে কাঠ পাওয়া যায়। তবে প্রাকৃতিক বন কেটে এ গাছ লাগানো ঠিক হবে না। লবণাক্ত এলাকা, খালি জায়গায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি লাগানো যেতে পারে।

শেয়ার করুন