চট্টগ্রামে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলায় অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এতে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নগরের জামালখানের চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্র জোটের ব্যানার কেড়ে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
শাহবাগবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে এই হামলা চালানো হয়। এতে ছাত্রশিবিরের কর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের নেতা–কর্মীদের দেখা গেছে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাসের প্রতিবাদে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। কর্মসূচি শুরুর পরপর সেখানে মিছিল নিয়ে আসে শাহবাগবিরোধী ঐক্য। সাড়ে তিনটার দিকে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে পুলিশ দুই পক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শাহবাগবিরোধী ঐক্যের লোকজন ছাত্র জোটের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এরপর ছাত্র জোটের নেতা–কর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে সরে যাওয়ার সময় বাগ্বিতণ্ডার পর আবার হামলা চালানো হয়।
হামলায় ১২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁরা হলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নগর সভাপতি রিপা মজুমদার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত বিশ্বাস ও অর্থ সম্পাদক সুদীপ্ত গুহ।
আহত বাকি নেতা-কর্মীরা হলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইদুল হক, সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী, ঢাকা নগরের সংগঠক তানভীর হোসেন, চটগ্রাম শাখার সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া, ইউএসটিসির সংগঠক সৌমেন, নগর শাখার অর্থ সম্পাদক অর্পিতা নাথ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠক রিশাদ আমিন, সংগঠক ইশান বড়ুয়া ও শফিক ইসলাম। তাঁরা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
একপর্যায়ে শাহবাগবিরোধী ঐক্যের লোকজন প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে জুলাই ঐক্য চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়কারী আবরার হাসান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নগর শাখার মুখ্য সংগঠন তওসিফ ইমরোজ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দাবি করেন, হামলার সময় তাঁরা ছিলেন না। গন্ডগোলের খবর পেয়ে সেখানে এসেছেন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচির ব্যানার কেড়ে নিয়ে পোড়ানো হয়। আজ বিকেলে
জুলাই ঐক্য চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়কারী আবরার হাসান বলেন, একজন জামায়াত নেতার রায় নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ব্যানারে কয়েকজন দাঁড়িয়েছিল। একই সময় শাহবাগবিরোধী ঐক্যও সেখানে স্লোগান দিচ্ছিল। পুলিশ তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করছিল। তবে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে মারামারি লেগে যায়।
হামলার প্রসঙ্গে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নগর শাখার সহসভাপতি পুষ্পিতা নাথ বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে হামলার প্রতিবাদে আজ বিকেলে প্রেসক্লাবের সামনে তাঁরা কর্মসূচি পালন করতে যান। এ সময় ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একাংশের নেতা–কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিলেও হামলাকারীদের বাধা দেয়নি। এ ঘটনায় ১২ জন আহত হয়েছে।
এ ঘটনায় ছাত্রশিবিরের জড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখা। শাখার সভাপতি মো. তানজীর হোসেন ও সেক্রেটারি মুমিনুল হক এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংঘটিত শাহবাগপন্থী ও শাহবাগবিরোধী দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
ঘটনাস্থলেই হামলার ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল করিমের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।