তেহরানে ধবধবে খেলনা রাজহাঁস ও শিশুর হাতে রক্তের দাগ
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 17-06-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

শিশুদের মন কত দূর পৌঁছাতে পারে? এই মন কি পৌঁছাতে পারে তেরো নদী সাত সমুদ্দুর? এসব চেনে? এসব প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে বলা যেতে পারে—তেরো নদী সাত সমুদ্দুরের জল নয় বরং শিশুরা যে জল চেনে, তাতে বড়জোড় কাগজের নৌকা ভাসানো যায়। আর সেই নৌকায় যাত্রী বলতে শুধুই শিশুর কল্পনা। পানিতে ঢেউ দিলে দুলে দুলের নৌকা চলে যাবে দূরে।

কিন্তু শিশুদের কি কেবল এই-ই নিয়তি? না। নিয়তি তাদের একদিন ছোট থাকতেই শিশুজীবন থেকে বের করে নিয়ে আসে। পুতুলের জন্য মালা গাঁথবে বলে বসে ছিল যে শিশু, তাকে একদিন ছোট বয়সেই বড়দের মতো ভার নিতে হয়। ছোট্ট জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভার নিতে হয় তার সব খেলনার। কারণ, খেলনার সঙ্গে তো তার হৃদয়ের সম্পর্ক। ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার দিনে সব ছেড়ে তুলতুলে কোমল হাতে কোলে তুলে নিতে হয় প্রিয় খেলনা। যে করেই হোক গুলি বা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত থেকে বাঁচাতে হবে তাকে।

 

যেমনটা করেছে তেহরানের ছোট্ট এ মেয়েটি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সামনে ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়ে রক্তাক্ত ইরানি একজন নারী। আর তাঁর পেছনে ছোট্ট শিশুটি ডান হাতে জড়িয়ে আছে প্রিয় খেলনা রাজহাঁস। রাজহাঁসটির গায়ে রক্ত বা কোনো কিছুর দাগ নেই। একদম পরিষ্কার। আর শিশুটির বাম হাতে রক্তের দাগ।

বার্তা সংস্থা এএফপি এই ছবিটি প্রকাশ করেছে। গত ১৫ জুন তেহরানের কেন্দ্রস্থল কেশাভার্জ বুলেভার্ডে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক ভবন। নিজেদের বাড়িঘর হারিয়ে প্রাণে বাঁচার জন্য এই নারী ও ছোট্ট মেয়েটি নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করছে। কিন্তু শুধু নিজে বাঁচলে হবে! খেলনাগুলোর কী হবে—এই ভাবনায় হয়তো ছোট্ট শিশুটি আঁতিপাঁতি করে খুঁজেছে খেলনাগুলো। হাতের কাছে এই রাজহাঁসটি পেয়ে বুকে জড়িয়ে নেমে পড়েছে অনিশ্চিত পথে। এই পথে হয়তো আবারও তাদের মুখোমুখি হতে হবে বুলেট-গুলির।

 

শিশুদের হৃদয়ে কী মায়া দেখুন, ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া ঘর থেকে জীবনের ঝুঁকি যেন কোনো রকমে সে বের করে এনেছে খেলনা রাজহাঁসটিকে। নিজে কোথায় আশ্রয় নেবে, সেই ভাবনা হয়তো তার নেই। তবু গুলি থেকে বাঁচিয়ে এনে খেলনা রাজহাঁস বুকে আগলে সে তাকে দিচ্ছে শুশ্রূষা। সে কী অদ্ভুত মায়া! কী আশ্চর্য একটা আদর!

আর মানুষ, যারা বড়! মানুষের দ্বন্দ্বময় মন। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে মানুষ ছুড়ছে গুলি, ছুড়ছে ক্ষেপণাস্ত্র। গুলির আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে আর সব মানুষের ঘরবাড়ি। রক্তে ভেসে যাচ্ছে শিশুসহ বড়রাও। কী হিংস্র, কী ভয়ংকর সেই সব দৃশ্য! মানুষ হত্যা করছে মানুষকে, শিশুকে।

 

যে শিশুটি এত দিন জেনে এসেছে এ পৃথিবী নয়নাভিরাম, যে শিশুটি খেলনা কোলে আড়াল করে শোক। ইচ্ছা করে ডাক দিয়ে বলি—মাতৃমনা পরির সঙ্গে তোমার লুকিয়ে দেখা হোক।


 

শেয়ার করুন