ছোটবেলায় এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর ছিল সামাজিক ভীতি। ‘নিউরোডাইভারজেন্ট’ আচরণ করতেন। তথ্য প্রক্রিয়ার পদ্ধতিও ছিল অন্যদের তুলনায় আলাদা। কিছু মানুষ এক জায়গায় হওয়ার কথা শুনলেই দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিতেন। স্কুলেও মানিয়ে নিতে সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। গণিত, বিজ্ঞান ও যন্ত্রপাতিই ছিল তাঁর খেলার সঙ্গী।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত হতে চলেছে বিল গেটসের স্মৃতিকথা ‘সোর্স কোড: মাই বিগিনিংস’। সেই বইয়েরই একটা প্রকাশিত অংশে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
বিল গেটস তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘আমি যদি এই সময়ে জন্মাতাম, আমাকে নিশ্চিতভাবেই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু হিসেবে ধরে নেওয়া হতো। কিন্তু সে সময় কেউ বুঝতে পারেনি। অটিজমের উল্লেখযোগ্য সব লক্ষণই আমার মধ্যে ছিল। অন্যদের অনেক কিছুই আমি বুঝতাম না। আবার আমার অনেক কিছু অন্যরা বুঝত না। আমার মা–বাবা অবাক হয়ে লক্ষ করতেন, আমি আপনমনে নিজের প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত, দাওয়াতে যেতে হবে শুনলেই পালিয়ে যেতাম, পারতপক্ষে নিজের ঘর থেকে বের হতাম না, আর প্রজেক্ট ব্যর্থ হলে রেগে যেতাম!’
শুরুর দিকে বিল গেটসের মা–বাবা তাঁকে বেসবল ও স্কাউট ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিলেন। চেষ্টা করেছিলেন ‘সামাজিক’ করে তোলার। তবে বিল গেটস জানান, তিনি ছোটবেলায় যতই বাইরের বিশ্ব দেখেছেন আর মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, ততই সেসব সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়েছেন। তবে তিনি তাঁর মা–বাবাকে একটা ধন্যবাদ দিতে চান। কেননা তাঁরা শিশু বিল গেটসকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।
প্রকাশিত হতে চলেছে বিল গেটসের স্মৃতিকথাফাইল ছবি: গেটসনোটস
বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, সামাজিকতা—বিল গেটস এসব উপভোগ করতে শুরু করেছেন অনেক পরে, চল্লিশের কোঠায়। মূলত সন্তানেরা জন্ম নেওয়ার পর তাঁদেরকে সামাজিক করে গড়ে তুলতে গিয়ে তিনি ধীরে ধীরে সামাজিক হয়েছেন।
প্রযুক্তি খাতে বিল গেটসের সফলতা আকাশচুম্বী। তবে সেখানে মেধা আর পরিশ্রমের পাশাপাশি ভাগ্যটাকেই বড় করে দেখেন তিনি। স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘আমি আমার মা–বাবার ঘরে জন্মেই সবচেয়ে বড় লটারিটা জিতে গেছি। কম্পিউটারবিজ্ঞানে বৈপ্লবিক সফলতার অবস্থান তাই দ্বিতীয়। আমি ধনী, মার্কিন পরিবারে একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ হিসেবে জন্মেছি। ফলে আমি সমাজের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী সৌভাগ্যবানদের একজন।’
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ