আবার বড় ধরনের বিপদে পড়েছেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি। তাঁর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার ঘুষ ও আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠার পরই আজ বৃহস্পতিবার আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
পরিণামে গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদের মূল্য কমেছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আদানি গ্রিন এনার্জির যে বন্ড ছাড়ার কথা ছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমস
ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্যানুসারে, আজ একপর্যায়ে গৌতম আদানির সম্পদমূল্য কমে যায় ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২৪০ কোটি ডলার। তবে পরে শেয়ারের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্পদমূল্য হ্রাসের পরিমাণ কিছুটা কমে ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫০ কোটি ডলারে নেমে আসে।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় ফোর্বস ম্যাগাজিনের ধনীদের তালিকায় গৌতম আদানির অবস্থান ছিল ২৫তম। তাঁর মোট সম্পদমূল্য ৫৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার।
গৌতম আদানিসহ এই সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভারতের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি পেতে দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের প্রায় ২ হাজার ২৩৭ কোটি রুপি ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা। নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের ইউএস অ্যাটর্নি অফিস থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে এই অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। তারপরেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দামেও তার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
আজ বাজার খুলতেই আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ কমেছে। আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারের দর কমেছে ১৭ শতাংশ। আদানি এনার্জি সলিউশনের দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। এই কোম্পানির শেয়ারের দাম ২০ শতাংশ কমেছে। হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের মতো এবারও আমেরিকার অভিযোগের পর গৌতম আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দর হু হু করে কমতে থাকে। ভারতীয় শেয়ারবাজারে আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন এক ঘণ্টায় দুই লাখ কোটি রুপির বেশি কমেছে।
ঘুষ-কাণ্ডে নাম এসেছে গৌতম আদানির ভাতিজা সাগর আদানিরও। গৌতম ও তাঁর ভাতিজার বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আমেরিকার প্রশাসন। বাকি অভিযুক্তের মধ্যে আছেন আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের সিইও বিনীত জৈন, রঞ্জিত গুপ্ত, রুপেশ আগরওয়াল, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের নাগরিক সিরিল ক্যাবানেস, সৌরভ আগরওয়াল ও দীপক মালহোত্র।
আদানি গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শিগগিরই আদানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এই অভিযোগ সম্পর্কে বিবৃতি দেওয়া হবে।
বিবৃতিতে আদানি গ্রিন এনার্জি বলেছে, ‘যুক্তরাজ্যের বিচার বিভাগ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন একটি ফৌজদারি ও একটি দেওয়ানি মামলা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জেলা আদালতে এসব মামলা দায়ের হয়েছে। এতে আমাদের কোম্পানির পর্ষদ সদস্য গৌতম আদানি ও সাগর আদানির নাম আছে।’
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য প্রস্তাবিত ডলারভিত্তিক বন্ডের বিষয়ে অগ্রসর না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গ্রিন এনার্জি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৬০ কোটি ডলার মূল্যের বন্ড ছাড়ার কথা ছিল আদানি গ্রিন এনার্জির।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয় হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদনে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগ ওঠে। ধস নামে আদানির বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দরে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আদানির সখ্যের জেরে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও তখন আদানিদের বিরুদ্ধে সরব হয়।
অনেকে বলতে শুরু করেন, আদানির সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে। রাতারাতি এই গোষ্ঠীর বাজার মূলধন কমে যায়। যাদের বাজার মূলধন ছিল ১৯ লাখ কোটি রুপি, তা প্রায় ৭ লাখ কোটি হারিয়ে সাড়ে ১২ লাখ কোটি রুপিতে নামে। এক বছর পর পরিস্থিতি কিন্তু অনেকটাই সামলে নিয়েছিলেন আদানি। হারানো আসন অনেকটাই ফিরে পেয়েছিলেন, যদিও বিতর্ক পিছু ছাড়ছিল না তাঁকে।
হিনডেনবার্গের পর এটা আদানির জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা। দেখা যাক, এবার তিনি কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলান।