ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট শুরু
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 10-04-2022
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

ইউক্রেনে রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্থানের ইমরানের আগ্রাসনের ডামাডোলে চাপা পড়ে গেছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর। নিরুত্তাপ নির্বাচনি প্রচারণা শেষে আজ ১০ এপ্রিল (ররবিবার) নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট শুরু হয়েছে স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় (বাংলাদেশ দুপুর ১২টায়)। সংবাদ মাধ্যম ফ্রান্স২৪ এ খবর জানিয়েছে।

মোট ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বী—বামপন্থি থেকে শুরু করে কট্টর ডানপন্থি ও অভিবাসন বিরোধী প্রার্থীরা—বর্তমান ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে সরিয়ে ক্ষমতায় যেতে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। আর, ২০০২ সালে জ্যাক শিরাকের পর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনরায় নির্বাচনে জয়ী হতে চান ম্যাক্রোঁ।

প্রথম দফার নির্বাচনে কোনো প্রার্থী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে, সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত দুই প্রার্থী ২৪ এপ্রিল নির্বাচনের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত পর্বে ভোটে লড়বেন।

জনগণের ক্রয় ক্ষমতা এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ নির্বাচনি প্রচারণায় অস্বাভাবিকভাবে প্রভাব ফেলেছে। প্রায় পাঁচ কোটি ভোটার ভোটদানে নিবন্ধিত হলেও, এক সমীক্ষায় দেখা গেছে—প্রতি চার জনের মধ্যে এক জন ভোটদানে বিরত থাকতে পারেন। অর্থাৎ ১০০% ভোটের মধ্যে ২৫% ভোটদানে বিরত থাকতে পারেন।

প্যারিসসহ ফ্রান্সের অন্যান্য শহরে ভোটকেন্দ্র বন্ধ হবে প্যারিস সময় রাত ৮টায়। ততক্ষণ পর্যন্ত ফরাসি গণমাধ্যমকে প্রার্থীদের উদ্ধৃতি বা কোনো জরিপ প্রকাশ করতে মানা করা হয়েছে, যাতে করে ভোটারদের ওপর অযাচিত কোনো প্রভাব না পড়ে।

ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডজুড়ে স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় প্রথম পর্বের ভোট শুরু হয়। বেশির ভাগ অঞ্চলে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় এবং প্যারিসসহ বড় শহরগুলোতে রাত ৮টায় ভোট বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর রাত ৮টায় সব জায়গায় ভোট শেষ হওয়ার পরে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

ভোট পাওয়ার সংখ্যা খুব কাছাকাছি না হলে, বুথফেরত ফলেই বোঝা যাবে কোন দুই প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। এর ভিত্তিতে ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে দুজন উৎরানোর যোগ্যতা অর্জন করবেন। প্রাথমিক ভোট গণনার ভিত্তিতে বুথফেরত ফলাফল স্থানীয় সময় সন্ধ্যাজুড়ে হালনাগাদ করা হবে৷

এদিকে, ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডের বাইরের অঞ্চলগুলোতে এরই মধ্যেই গতকাল শনিবার ভোট হয়ে গেছে। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সময়ের পার্থক্য বিবেচনায় নিয়ে কানাডার উপকূলে ছোট্ট দ্বীপ সেন্ট-পিয়ের-এট-মিকেলন থেকে শুরু করে ক্যারিবীয় অঞ্চল এবং সবশেষে ফরাসি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে ভোট হয়ে গেছে।

তবে, সাংহাইয়ে থাকা ফরাসি ভোটারেরা ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, দুই কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার ওই শহরে কোভিডের প্রাদুর্ভাবের জেরে চীনা কর্তৃপক্ষ লকডাউন জারি করেছে এবং লকডাউনের মধ্যে ফরাসি কনস্যুলেটের ভেতরে ভোটকেন্দ্র খোলার অনুমতি দেয়নি সাংহাই প্রশাসন।

ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হতে ভোটের লড়াইয়ে যোগ দিয়েছেন। ম্যাক্রোঁসহ নির্বাচনে মোট প্রার্থী ১২ জন। তাঁদের মধ্যে ৮ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী।

প্রধান ছয় প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ৩ জন ডানপন্থি এবং ২ বামপন্থি ফরাসি রাজনীতিক।

ফ্রান্সে বেকারত্বের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৪ শতাংশে। ইউরোপ অঞ্চলের দেশগুলোর গড় হারের তুলনায় এ হার সামান্য বেশি। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ক্ষমতা গ্রহণের সময় যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, বর্তমান হার তার খুব কাছাকাছি।

এ ছাড়া অভিবাসনের বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে—২০২০ সালে ফ্রান্সে বসবাসরত অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৬৮ লাখ। তাদের এক-তৃতীয়াংশ ইউরোপীয়, যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য বা সদস্য নয়—এমন দেশগুলো থেকে ফ্রান্সে গেছেন। সবচেয়ে বেশি অভিবাসী গেছেন আলজেরিয়া থেকে। তার পরেই রয়েছে মরক্কো ও পর্তুগাল।

ডানপন্থি প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচারণায় অভিবাসনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে। জিম্যো নির্বাচিত হলে ‘জিরো ইমিগ্রেশন’ নীতি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; অর্থাৎ তিনি একজন অভিবাসীকেও ফ্রান্সে আশ্রয় দেবেন না।

জিম্যো এও বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট হলে প্রতি বছর এক লাখ করে অভিবাসীকে আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও মরক্কোতে ফেরত পাঠানো হবে।

জিম্যোর এই দৃষ্টিভঙ্গির নিন্দা করেছেন মারিন লা পেন, তবে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর ব্যাপারে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

শেয়ার করুন