সংবিধান সংস্কারে বিএনপি যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে তার প্রায় সবটাই এসেছে। সংবিধান সংস্কারে এই কমিশনে বিএনপি গত ২৬ নভেম্বর ৬২টি প্রস্তাব দিয়েছিল। এর মধ্যে সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রী পদ তৈরি করাসহ ৬২টি সংস্কার প্রস্তাব সংস্কার কমিশনে লিখিতভাবে দিয়েছিল বিএনপি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংস্কারের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সুপারিশের সারসংক্ষেপ কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।
তাতে দেখা যায়, সংবিধান সংস্কার কমিশন ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানোসহ সংবিধানে আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। তাতে একজন ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
বিএনপিও প্রস্তাব করেছে, ‘দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।’ তবে বিএনপির এই প্রস্তাবের সঙ্গে সংবিধান সংস্কার কমিশন আরও কিছু বিষয় যুক্ত করেছে। যেমন ‘একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিনি একাদিক্রমে দুই বা অন্য যেকোনোভাবেই এই পদে আসীন হন না কেন, তাঁর জন্য এ বিধান সমভাবে প্রযোজ্য হবে। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।’
এর আগে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোকে নিয়ে সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল। এই ৩১ দফা রূপরেখাকে দলীয় ‘প্রতিশ্রুতি’ উল্লেখ করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাতে সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত আটটি প্রস্তাব ছিল। পরে সংবিধান সংস্কার কমিশনের জন্য বিএনপি আলাদাভাবে দলীয় সংস্কার প্রস্তাব করেছে।
এর সারসংক্ষেপে সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রী পদ তৈরি করাসহ ৬২টি সংস্কার প্রস্তাব করে বিএনপি। এর মধ্যে একই ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এমন বিধান; সংসদে উচ্চকক্ষ সৃষ্টি, অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ যাতে সুপ্রিম কোর্টের অধীন থাকে, গণভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তনের প্রস্তাব ছিল। এ ছাড়া প্রজাতন্ত্র, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ আরও অনেক বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হয়। বিএনপি বলছে, এর মূলকথা হচ্ছে, সংবিধানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাধিত হয় এবং রাষ্ট্রের সব অঙ্গে যেন ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি হয়।
সংবিধানপ্রতীকী ছবি
বিএনপি তাদের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে বলেছে, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে।’
তবে সংবিধান সংস্কার কমিশন নির্বাচন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। এটি মূলত কাজের দিক দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো। এ বিষয়ে কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, আইনসভার (সংসদ) মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কিংবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগ, সরকারের প্রধান ‘প্রধান উপদেষ্টা’ বলে অভিহিত হবেন। আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগে অথবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সর্বোচ্চ ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে কার্য পরিচালনা করবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৯০ দিন।
বিএনপি প্রস্তাব করেছে, ‘সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সমন্বয় করা হবে।’
সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করার কথা বলেছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিরোধীদলীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে হবে এই কাউন্সিল। নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার, অ্যাটর্নি জেনারেল ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানসহ কিছু পদে নিয়োগের জন্য কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবে।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেছেন, যাতে কোনো একক ব্যক্তির কাছে বা প্রতিষ্ঠানের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে না পারে, সে জন্য ভারসাম্যের বিষয় হিসেবে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল নামে একটি সংস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিএনপি বলেছে, ‘পরপর দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।’
সে জায়গায় সংবিধান সংস্কার কমিশন বলেছে, আইনসভার নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হবেন। আইনসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে যদি কখনো প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা আস্থা ভোটে হেরে যান কিংবা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতিকে আইনসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেন, সে ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রপতির কাছে এটা স্পষ্ট হয় যে নিম্নকক্ষের অন্য কোনো সদস্য সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন অর্জন করতে পারছেন না, তবে রাষ্ট্রপতি আইনসভার উভয় কক্ষ ভেঙে দেবেন। একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিনি একাদিক্রমে দুই বা অন্য যেকোনোভাবেই এই পদে আসীন হন না কেন, তাঁর জন্য এ বিধান সমভাবে প্রযোজ্য হবে। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।
বিএনপি বলেছে, ‘বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ-জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে উচ্চকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন করা হবে।’
সংবিধান সংস্কার কমিশন বলছে, উচ্চকক্ষ মোট ১০৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে। এর মধ্যে ১০০ জন সদস্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের সংখ্যানুপাতে নির্ধারিত হবেন। রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ ১০০ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে ৫ জন সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করবেন। বাকি ৫টি আসন রাষ্ট্রপতি মনোনীত করবেন। যাঁরা কোনো কক্ষেরই সদস্য ও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। উচ্চকক্ষের স্পিকার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের সদস্যদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন। আর উচ্চকক্ষের একজন ডেপুটি স্পিকার থাকবেন, যিনি সরকারদলীয় সদস্য ব্যতীত উচ্চকক্ষের অন্য সব সদস্যের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন।
সংস্কার কমিশন বলেছে, সংবিধানের যেকোনো সংশোধনীতে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদন প্রয়োজন হবে। প্রস্তাবিত সংশোধনী উভয় কক্ষে পাস হলে এটি গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটের ফলাফল সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
বিএনপি বলেছে, আস্থা ভোট, অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত—এমন সব বিষয় ছাড়া অন্য সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করতে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।‘
এ ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন একটি বড় সুপারিশ করেছে। তারা বলেছে, অর্থবিল ছাড়া নিম্নকক্ষের সদস্যদের মনোনয়নকারী দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে। আইনসভার স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি সব সময় বিরোধীদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হবেন।
বিএনপি বলেছে, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও বিশিষ্টজনের মতের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে বর্তমান “প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২” সংশোধন করা হবে।’
এ ক্ষেত্রে একটি স্থায়ী জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। আর নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন
বিএনপি তাদের প্রস্তাবে বাংলাদেশের সংবিধান ও সাবেক জেলা জজ মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান বিচারব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি “জুডিশিয়াল কমিশন” গঠন করা হবে। অধস্তন আদালতগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের কর্তৃত্ব সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত করা হবে। বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি পৃথক সচিবালয় থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অভিশংসন প্রশ্নে সংবিধানে বর্ণিত “সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল” ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হবে। এ জন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে বিচারক নিয়োগ করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের ৯৫ (গ) ধারা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও মানদণ্ডসংবলিত “বিচারপতি নিয়োগ আইন” প্রণয়ন করা হবে।’
সংবিধান সংস্কার কমিশন উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ করে দেশের সব বিভাগে হাইকোর্ট বিভাগের সমান এখতিয়ারসম্পন্ন হাইকোর্টের স্থায়ী আসন চালুর সুপারিশ করেছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আসন রাজধানীতেই থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশনের (জুডিশিয়াল অ্যাপয়েনমেন্টস কমিশন) সুপারিশ করা হয়েছে। এর সদস্যরা হবেন প্রধান বিচারপতি (পদাধিকারবলে কমিশনের প্রধান) ; আপিল বিভাগের পরবর্তী দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারক (পদাধিকারবলে সদস্য); হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম দুজন বিচারপতি (পদাধিকারবলে সদস্য); অ্যাটর্নি জেনারেল এবং একজন নাগরিক (সংসদের উচ্চকক্ষ কর্তৃক মনোনীত)।
এ ছাড়া কমিশন অধস্তন আদালতের পরিবর্তে ‘স্থানীয় আদালত’ ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে। স্থানীয় আদালতের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি, ছুটি, শৃঙ্খলাসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে ন্যস্ত থাকবে। এ জন্য একটি বিচারিক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিশন একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে।
সংবিধানের মূলনীতি ও সংসদের কাঠামোতে পরিবর্তনসহ সংবিধানের নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এর বিস্তারিত প্রস্তাব হাতে না পেয়ে এ বিষয়ে বিএনপির নেতারা কোনো মন্তব্য করতে চান না।
তবে বিএনপিদলীয় সংবিধান সংস্কারবিষয়ক কমিটির সদস্য ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেটুকু দেখছি, তাতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, ক্ষমতার ভারসাম্য আনা—এ ধরনের কিছু বিষয় আমাদের প্রস্তাব থেকে এসেছে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিষয়ে তো আদালত থেকে আগেই রায় এসেছে। কমিশনও সেটা প্রস্তাব করেছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন কেবল তাদের প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে। তাঁরা বিস্তারিত হাতে পেলে কমিশনের প্রস্তাবগুলো নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করবেন। এরপর এ বিষয়ে দলীয় অবস্থান জানানো হবে।