ফারদিনের মৃত্যু: ‘নির্দোষ’ বুশরার দ্রুত মুক্তি চান বাবা
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 17-12-2022
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় কারাবন্দি তাঁর বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরা। তিনি বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। হত্যা নয়, ফারদিনের মৃত্যু 'আত্মহত্যাজনিত'- পুলিশ ও র‌্যাবের এমন তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের পর বুশরার দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছে পরিবার।

 

গতকাল শুক্রবার বুশরার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, 'আমার নির্দোষ মেয়েটা ফেঁসে গেল। ফারদিনের মৃত্যুতে তাঁর কোনো সংশ্নিষ্টতা নেই। অহেতুক তাঁকে দীর্ঘদিন কারাগারে কাটাতে হচ্ছে। দ্রুত মেয়েটার মুক্তি চাই। যত দ্রুত তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে আনা যাবে, তা পরিবারের জন্য মঙ্গল হবে।'

 

অবশ্য শুরু থেকেই পরিবার বলে আসছে, ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনায় বুশরার কোনো হাত নেই। সন্দেহের বশে তাঁকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এতে তাঁর জীবন বিপর্যস্ত। শিক্ষাজীবনেও নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা। কাশিমপুর কারাগারে দেখা করতে গেলে বুশরাও স্বজনের কাছে জানতে চেয়েছেন, তাঁর মুক্তিতে বাধা কোথায়, জামিনে দেরি হচ্ছে কেন? স্বজনরা আদালতে ছুটি চলছে বলে সান্ত্বনা দিয়েছেন। আগামী ৫ জানুয়ারি ঢাকার একটি আদালতে বুশরার জামিন আবেদনে শুনানি হবে। তার আগ পর্যন্ত তাঁকে কারাগারেই থাকতে হবে বলে আদালতের একটি সূত্র জানিয়েছে।

 

ফারদিনের মৃত্যু 'আত্মহত্যাজনিত'- নতুনভাবে পুলিশের এমন দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা। তদন্ত নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে। এখন আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে।' পুলিশের প্রতিবেদনে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ থাকলে নারাজি দেওয়ার কথা জানান রানা। তাঁর ভাষ্য, পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ড থেকে কাউকে আড়াল করা হচ্ছে।

 

এদিকে গতকাল ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, পুলিশ ও র‌্যাব ভালোভাবে বিশ্নেষণ করে ফারদিনের বিষয়ে জানিয়েছে। আরও তথ্য জানতে তদন্ত সংস্থার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশিদ বলেন, 'ফারদিন হত্যায় যে বুশরার সংশ্নিষ্টতা নেই, তা আমরা আদালতকে জানাব। কারণ ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। বাকিটা আদালতের সিদ্ধান্ত।'

 

এদিকে ফারদিনের 'আত্মহত্যার' প্রমাণ দেখতে গতকাল বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলা র‌্যাব কার্যালয়ে যান বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষে তাহমিদ হোসেন বলেন, 'র‌্যাবের আলামত আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। তারা এগুলোর পেছনে বেশ অ্যাফোর্ট দিয়েছে। কিছু জায়গায় হয়তো গ্যাপ আছে, এগুলো নিয়ে তারা আরও অগ্রসর হবে বলে আশা করি এবং আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।' এ সময় আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা এখনই চূড়ান্ত কিছু বলছি না।'

 

গত ৪ নভেম্বর রাতে নিখোঁজ হন ফারদিন। পরদিন পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়। এর তিন দিন পর ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসক বলেছিলেন, ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর মাথা ও বুকে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মারা যাওয়ার আগে তাঁকে শারীরিকভাবেও নির্যাতন করা হয়।

 

এ বিষয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যে কোনো ঘটনার পরপরই ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মন্তব্য করলে, তা থেকে বিভ্রান্তির আশঙ্কা থাকে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন বা ভিসেরা রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যু নিয়ে ধারণাগত তথ্য দেওয়া থেকে চিকিৎসকদের বিরত থাকাই ভালো।

 

ফারদিনের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ১০ নভেম্বর তাঁর বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাসহ অচেনা কয়েকজনকে আসামি করে রামপুরা থানায় হত্যা মামলা করেন নূর উদ্দিন রানা। ওই মামলায় বুশরাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

শেয়ার করুন