ঢাকায় যেখানে সরাসরি কৃষকের থেকে পণ্য কিনতে পারবেন
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 13-05-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন। যে কৃষক তাঁর ঘামে ভেজা শ্রমে পরম মমতায় ফসল উৎপাদন করেন, তিনিই আবার সেটা নিজে বহন করে নিয়ে আসেন এই বাজারে। ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের জাতীয় সংসদের বিপরীতে সেচ ভবনের পরই এই বাজারের অবস্থান। ৩৪টি দোকান নিয়ে এই বাজার। মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, নরসিংদী, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ ঢাকার নিকটবর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এই বাজারে আসেন কৃষকেরা। এমনকি খাগড়াছড়ির পাহাড়ি অঞ্চল থেকেও আসে পণ্য।

 

তিন সপ্তাহ ধরে সিরাজগঞ্জ থেকে এই বাজারে পণ্য নিয়ে আসছেন খোকন তালুকদার। তিনি জানান, আশার এক কর্মকর্তার কাছ থেকে এই বাজারের খোঁজ পান। নিজের ও প্রতিবেশীর ফলানো টাটকা শাকসবজি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে পা বাড়ান। লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, উচ্ছে, করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙে, কাঁচা মরিচসহ অনেক সবজিই নিয়ে আসেন। তিনি বললেন, শুক্রবার সকালেই মূলত বিক্রি হয় বেশি। সকাল ১০টার মধ্যেই ১০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি শেষ। দুপুর গড়াতেই বাকি সব বিক্রি করে আবার সিরাজগঞ্জের পথ ধরবেন। হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে এসেছেন বদু মিয়া। কৃষিতে সাফল্যের জন্য নানা সময়ে নানা পুরস্কার জিতে নেওয়া এই কৃষক নিয়মিত নিয়ে আসেন লাল-হলুদসহ কয়েক রকমের তরমুজ, ভিনদেশি বাঙ্গি সাম্মাম, বোম্বাই লিচুসহ মৌসুমি শাকসবজি।

 

নরসিংদীর শিবপুর থেকে এসেছেন নাঈম মিয়া। নরসিংদী পলিটেকনিক থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সদ্য ডিপ্লোমা শেষ করা নাঈম নিয়ে এসেছেন নরসিংদীর বিখ্যাত সাগর কলা, চম্পা কলা ও বাংলা কলা। কলার জাত ও মানভেদে দাম প্রতি ডজন ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। ঢাকায় যাঁদের ছাদবাগান আছে এবং যাঁরা নিয়মিত এখানে বাজার করতে আসেন, তাঁদের অনেকের চাহিদা অনুযায়ী বস্তাভর্তি জৈব সারও নিয়ে আসেন নরসিংদী থেকে। বিক্রি করেন প্রতি কেজি ৩০ টাকা।

কৃষকেরা সরাসরি পণ্য বিক্রি করেন

কৃষকেরা সরাসরি পণ্য বিক্রি করেন

ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারের নারী উদ্যোক্তা রেখা মিত্র। নিজ হাতে বানানো খাদ্যদ্রব্যের সমারোহ সাজিয়ে বসেন দোকানে। আম, আমলকী, জলপাই, বরই, তেঁতুল, চালতা, রসুনসহ ২৬ রকমের আচার। আছে আখের গুড়, চাকের মধু, তিলের নাড়ু, নারকেলের নাড়ু, কফি নাট, ছাতু, বেসন, হাতে ভাজা মুড়ি, লাল চিড়া, চিংড়ির বালাচাও আর বরিশাল থেকে দেশি তেজপাতা।

 

গাজীপুর থেকে আসেন মাহফুজা আক্তার। তিনি বিখ্যাত নিজ খামারে উৎপাদিত মাশরুম ও মাশরুম দিয়ে বানানো বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য যেমন মাশরুমের চপ, পেঁয়াজু, পাঁপড় ভাজা ও স্যুপের জন্য। প্রতিদিন সকালে নিজ খামারের মাশরুম আর খেতের সবজি চাষে সময় দেন। সপ্তাহের শুক্রবার ও অন্যান্য দিন বিকেলবেলা এই কৃষকের বাজার–সংলগ্ন চত্বরে নিয়মিতই পণ্য নিয়ে বসেন তিনি। তাঁর সঙ্গে আরও ৩-৪ জন সবজি বিক্রেতা প্রতিদিন বিকেলবেলা চালু রাখেন তাঁদের বেচাকেনা।

যা যা কিনতে পারবেন

পাবেন নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারসদাই

পাবেন নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারসদাই

মৌসুমের সব রকমের শাকসবজি ও ফলের উপস্থিতি আছে বাজারে। শাকের মধ্যে আছে লালশাক, ডাঁটাশাক, পুঁইশাক, পাটশাক, কচুশাক। দাম ১০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। সবজির মধ্যে আছে ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, উচ্ছে, করলা, ঢ্যাঁড়স, পটোল, চালকুমড়া, বরবটি, কচু, লেবু, মরিচ, ফুলকপি। প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৬০ টাকায় মিলবে। লাউ প্রতিটি ৩০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতি কেজি মিষ্টিকুমড়া ৪০ আর প্রতিটি ১৫০ টাকা। ছোট আকারের ৪টি ফুলকপি ১০০ টাকায় মিলছে। গাঢ় সবুজ আর সাদা ডোরাকাটার দেশি পটোল যেমন আছে, তেমনি আছে সাদাটে সবুজ বীজহীন চীনা পটোলও। প্রতি কেজি ৪০ টাকা। কাঁচা হলুদ ১২০ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি। কোনো কোনো দোকানে দেশি হাঁস–মুরগির ডিম মিলছে প্রতি ডজন ২৪০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হয় ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়। সকালে গেলে হাওর আর নদীর মাছও পাবেন।

মৌসুমি ফলের মধ্যে বোম্বাই লিচু ১০০টির মূল্য ২০০ টাকা। কাঁচা টক আম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচামিঠা আম ১২০ টাকা, পেঁপে ও বাঙ্গি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, তরমুজ ৫০ টাকা প্রতি কেজি। আনারস ৪০ টাকা, কাঁঠাল প্রতিটি ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। ছোট বেল প্রতিটি ৫০ থেকে ১০০ টাকা, বড় বেল প্রতিটি ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

শেয়ার করুন