সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয়গুলো আগামী ৮ থেকে ১৯ মের মধ্যে ও পদসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্ভাব্য জুনের শেষ সপ্তাহে শুরু হয়ে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে। তাই হাতে সময় নেই বললেই চলে। বিসিএস পরীক্ষায় লিখিত ধাপের নম্বর ক্যাডার নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। একটি ভালো পরীক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তের গোছানো প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শেষ মুহূর্তে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন।
বাংলা
বাংলার প্রস্তুতিতে ব্যাকরণ অংশে আনকমন বাগ্ধারা, শব্দ, পদ, বানান, বাক্যশুদ্ধি—এই অংশগুলো চোখ বুলিয়ে নিন। সাহিত্য অংশে আন্দোলন, বিদ্রোহ–সম্পর্কিত রচনা বা বিখ্যাত সাহিত্যিকদের রচনা কীভাবে আমাদের দেশের বিভিন্ন সময়ের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেভাবে প্রশ্ন ভেবে উত্তর তৈরি করুন। সংলাপ, পত্র ও রচনার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ চলমান ঘটনার তথ্য নোট করে রাখুন। সেসব তথ্য ও পয়েন্ট ব্যবহার করে উত্তর সাজাতে পারবেন। গ্রন্থ সমালোচনার জন্য বিভিন্ন আন্দোলননির্ভর (ভাষা আন্দোলন, গণ–অভ্যুত্থান বা একাত্তর), দেশের ইতিহাসনির্ভর বা বিখ্যাত লেখকদের একটি করে গ্রন্থ (যেমন নজরুলের মৃত্যুক্ষুধা, রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা বা চার অধ্যায়, শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত ইত্যাদি) নির্ধারণ করে ১০-১২টি গ্রন্থ সমালোচনা চূড়ান্ত করুন।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি
দৈনিক পত্রিকা থেকে সর্বশেষ তথ্যগুলো তারিখ, সোর্সসহ নোট করে রাখুন। অর্থনীতি, দুর্নীতি, গ্রামীণ অর্থনীতি ও ক্ষুদ্রঋণ, নারীর ক্ষমতায়ন, দেশের স্বাধীনতার বিভিন্ন ধাপে (১৯৪৭-৭১) ছাত্রসমাজের ভূমিকা, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশ, রপ্তানি খাতে শুল্কের প্রভাব ইত্যাদি ভালোভাবে দেখে যাবেন। সংবিধানের বাতিলকৃত ধারাগুলো খেয়াল রাখবেন এবং সংস্কার সুপারিশগুলোর যৌক্তিকতা/অযৌক্তিকতার পয়েন্টগুলো সাজিয়ে নোট রাখবেন।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি
মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যু, লেবানন-ইসরায়েল ইস্যু, সিরিয়ার বাশার সরকারের পতন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের ভূমিকম্প ও আমাদের দেশের সতর্কতা, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ, এর প্রভাব ও মন্দার আশঙ্কা, ইসলামোফোবিয়া, সর্বশেষ কপ-২৯ সম্মেলন—এই ইস্যুগুলো থেকে পরীক্ষার আগের রাত পর্যন্ত আপডেট তথ্য রাখার চেষ্টা করবেন। এ ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো আপনার জন্য খুবই উপকারী হবে।
ইংরেজি
এবার আন্দোলন-বিদ্রোহ-যুদ্ধসংক্রান্ত প্যাসেজ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ইংরেজি দৈনিকে চোখ রেখে এ–সংক্রান্ত ভোকাবুলারি আয়ত্তে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ট্রান্সলেশন দুটিতে ৫০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য ট্রান্সলেশনে ভালো করা জরুরি। তাই শেষ মুহূর্তে ট্রান্সলেশন এবং ইংরেজি রচনার জন্য বিশ্বশান্তি, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কপ সম্মেলন, আন্দোলন-অভ্যুত্থান বা গ্রামীণ অর্থনীতি—এ বিষয়গুলো নজরে রাখা উচিত। এ–সংক্রান্ত তথ্য–উপাত্তগুলো নোট করে রাখলে তা বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি—সব বিষয়েই কাজে লাগবে।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
পরীক্ষার আগে এখন রিভিশন দিয়ে সব নিয়ম-কৌশল নখদর্পণে রাখা উচিত। গণিতের সূত্রগুলো অবশ্যই এক পাতায় নোট রাখবেন পরীক্ষার আগের রাতে দ্রুত দেখে যাওয়ার জন্য। মানসিক দক্ষতার ব্যতিক্রমী নিয়ম বা প্রশ্নগুলো মার্ক করে রাখুন। কিছু প্রশ্নের উত্তর বের করার জন্য যে কৌশল বা শর্টকাটগুলো আছে, সেগুলো নোট করে রাখুন। জ্যামিতি (উপপাদ্য) বা ত্রিকোণমিতি অংশের কিছু সূত্রের প্রয়োগ বা ধারাবাহিকতা মনে রাখতে সমস্যা হলে তা খাতায় লিখে রাখতে পারেন। পরীক্ষার দিন সকালে উঠে শেষ মুহূর্তেও একবার চোখ বুলিয়ে যাওয়া যায়। বিন্যাস, সমাবেশ, সম্ভাব্যতা বা সেটের কঠিন প্রশ্নগুলো শেষ সময়ে এসেও বারবার চর্চা করুন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
এ বিষয়ের সবচেয়ে কঠিন অংশ হলো তড়িৎকৌশল অংশটি। তাই এ বিষয়ে শেষ সময়ে এসে নতুন টপিক না পড়াই ভালো। পূর্বে যা পড়েছেন, তা–ই রিভিশন দিন। চিত্র/ফ্লো চার্ট আঁকার চর্চা করুন। যাঁরা বিজ্ঞানে বেশ দুর্বল বা খুব ভয় পান, তাঁরা অন্তত বিগত প্রশ্নগুলোর সমাধান আয়ত্ত করুন। কম্পিউটার অংশের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির বিষয়, যেমন থ্রি–ডি পেইন্টিং, ব্লক চেইন, ডিপসিক, জেমিনি, চ্যাট বট ইত্যাদি সম্পর্কে আপডেট থাকবেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন সংখ্যা বেশি বলে টু দ্য পয়েন্ট লেখার চর্চা অব্যাহত রাখুন।