মানুন আর না–ই মানুন, আমরা এখন তথ্যযুদ্ধের মধ্যে আছি। যুদ্ধ এখন নানাভাবে হয়। এখন সম্মুখযুদ্ধ থেকে রণাঙ্গন বিস্তৃত হয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি, ভূরাজনীতি, মহাকাশ, ইন্টারনেট, তথ্য নিরাপত্তা, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, এমনকি আপনার কম্পিউটার বা হাতের ফোন পর্যন্ত। এখানে যে যুদ্ধের কথা বলছি, তা হলো তথ্যযুদ্ধ। এর মূল অস্ত্র হলো তথ্য আর অপতথ্য। বাংলাদেশ এখন এক অপতথ্য যুদ্ধে আক্রান্ত।
বাংলাদেশের কমবেশি সবাই জানে, কারা এই অপতথ্য ছড়াচ্ছে এবং কেন করছে। সে আলোচনায় যাচ্ছি না। কিন্তু এই আক্রমণের পরিণাম সুদূরপ্রসারী হবে, যা গণ-অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থান করতে পারে। সর্বোপরি আমাদের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করতে পারে।
এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র, সামরিক বাহিনী বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়েও অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে দেশের জনসাধারণ। মানে আপনি। ইউটিউব, এক্স (সাবেক টুইটার), ফেসবুক, লিংকডইন বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে যেসব তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তার অধিকাংশই এসব যোগাযোগমাধ্যমের নীতির পরিপন্থী। তাই আপনি যদি এগুলো সম্পর্কে রিপোর্ট করেন, তাহলে মাধ্যমগুলো তদন্ত সাপেক্ষে সেই সব পোস্ট সরিয়ে নেবে এবং যারা পোস্ট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে।
আরও একটা ব্যাপার হচ্ছে, অনেকে এসব গুজব ছড়ায় বেশি ভিউ পাওয়ার জন্য। যত বেশি ভিউ তত বেশি উপার্জন। কিন্তু যদি ভিডিও বা পোস্টে অনেক বেশি রিপোর্ট হয়, তাহলে অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই সেই পোস্টের জন্য কোনো অর্থ দেয় না। সে ক্ষেত্রেও আমরা অনেককে মিথ্যা ভিডিও ছড়ানো থেকে বিরত রাখতে পারব। মনে হতে পারে, একটা রিপোর্টে কী আর হবে। কিন্তু ভেবে দেখুন, অনেক রিপোর্ট পেলে তারা অবশ্যই এটা গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। মাত্র কয়েকটা ক্লিকেই আপনি এ তথ্যযুদ্ধের একজন সৈনিক হয়ে দেশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।
কীভাবে রিপোর্ট করবেন?
প্রায় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই মোটামুটি একই ধরনের পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হয়। যেসব শ্রেণিতে আপনি রিপোর্ট করতে পারেন, তার মধ্যে অপতথ্য (মিসইনফরমেশন), ঘৃণামূলক বক্তব্য (হেটফুল স্পিচ) অথবা সহিংসতা-উদ্দীপক (ইনসাইটিং ভায়োলেন্স) বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
ইউটিউব
ইউটিউবে কোনো ভিডিও সম্পর্কে রিপোর্ট করা হলে কর্তৃপক্ষ রাতদিন ২৪ ঘণ্টাই সেসব তদন্ত করে থাকে। ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর যেকোনো সময় রিপোর্ট করা যেতে পারে। যদি ইউটিউবের তদন্তে নীতির পরিপন্থী বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে ভিডিও এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
* আপনার ইউটিউব অ্যাকাউন্টে সাইন-ইন করুন।
* যে ভিডিও নিয়ে রিপোর্ট করতে চান, সেই ভিডিওতে যান।
* ভিডিওর নিচে ‘MORE...’-এ লিংকে ক্লিক করুন।
* রিপোর্টে যান।
* রিপোর্টের ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন।
* NEXT বাটন ক্লিক করুন।
* যদি আনুষঙ্গিক কোনো তথ্য থাকে (সঠিক সংবাদ বা এই সংবাদ–সম্পর্কিত কোনো ফ্যাক্ট চেক যদি জানা থাকে) সেটা এখানে জানান, এমনকি সম্ভব হলে ভিডিওর ঠিক কোন জায়গায় অপতথ্য দেওয়া হয়েছে, সেটা বর্ণনা করুন।
* REPORT করুন।
* আপনার রিপোর্টিং হিস্ট্রিতে এ তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
বিস্তারিত তথ্য পাবেন এই ওয়েবসাইটে
এক্স (সাবেক টুইটার)
* যে পোস্টে রিপোর্ট করতে চান, সেই পোস্টে যান।
* পোস্টের ওপরে তিন ডট (...) আইকনে ক্লিক করুন।
* ‘Report Tweet’ সিলেক্ট করুন।
* পরবর্তী পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন।
* আপনার রিপোর্টের ভিত্তিতে টুইটার আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে রিপোর্টের ফলাফল জানাতে, আবার না–ও পারে।
বিস্তারিত তথ্য পাবেন এই ওয়েবসাইটে।
ফেসবুক
*যে পোস্টে রিপোর্ট করতে চান, সেখানে যান।
* পোস্টের ওপরে তিন ডট (...) আইকনে ক্লিক করুন।
* ‘Report Post’ ক্লিক করুন।
* কী কারণে পোস্টে রিপোর্ট করতে চান, সেটা কয়েকটা অপশন থেকে বেছে নিন।
* ‘Submit’ করুন।
বিস্তারিত তথ্য এই ওয়েবসাইটে।
লিংকডইন
*পোস্টের ওপরের কোনার ‘More’-এ ক্লিক করুন।
* ‘Report Post’-এ ক্লিক করুন।
* কী কারণে পোস্টে রিপোর্ট করতে চান, সেটা কয়েকটা অপশন থেকে বেছে নিন।
* Submit করুন।
বিস্তারিত তথ্য পাবেন এই ওয়েবসাইটে।
এভাবে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিপোর্ট করা যাবে। আপনি পোস্ট, ভিডিও, আলোচনাসহ যেকোনো আধেয় বা কনটেন্ট সম্বন্ধে রিপোর্ট করতে পারবেন। এর প্রোফাইল, পেজ বা চ্যানেল তাকেও রিপোর্ট করতে পারবেন।
ডা. শাহেদ ইকবাল: যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সমাজকর্মী ও লেখক