কাবিননামায় উসুল উল্লেখ না করলে ভবিষ্যতে যে ঝামেলা হতে পারে
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 04-06-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন: আমি একজন প্রবাসী। গত বছর দেশে গিয়ে বিয়ে করি। কনে দেখার পর এক রাতের সিদ্ধান্তে সাত লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে হয়। আমার যে ভুল একটা মানুষের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে, বিয়ের পর সেটা বুঝতে পারি। বিয়ের পরপরই মতপার্থক্য এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে ছয় মাসের মধ্যেই ডিভোর্স হয়ে যায়। বিয়েতে স্ত্রীকে দেওয়া ৬ ভরি সোনার গয়না সে তার বাবার বাড়ি যাওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যায়। সোনার বিষয়টি এ জন্যই উল্লেখ করছি, কারণ কাবিনে এই গয়না উসুল দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু ভুলবশত সেটা করা হয়নি। যেহেতু আমি বর, তাই স্বাক্ষর করার সময় এ বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখার মতো পরিবেশ পাইনি। পরে কাবিননামা তুলতে যখন কাজির কাছে গিয়েছি, তখন টের পেয়েছি, আর ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।

রেজিস্ট্রি চিঠির মাধ্যমে ডিভোর্স লেটার স্ত্রীর হাতে পৌঁছানোর পর দুই পক্ষ দেনমোহরের মীমাংসা করার চেষ্টা করেও সমাধানে আসতে পারেনি। কারণ, কাবিনে সোনার উসুল লেখা হয়নি। বর্তমানে সোনার ভরি দেড় লাখ টাকার বেশি। ৬ ভরি সোনা দেওয়ার পরও শুধু কাবিনে উসুল উল্লেখ না থাকায় আমাকে আবার দেনমোহরের সাত লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। তবে বিয়েতে ৬ ভরি সোনা দিয়ে আবার এখন সাত লাখ টাকা দেনমোহর পরিশোধ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

এত পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে শখ করে গয়না কিনলাম, কিন্তু শুধু একমুহূর্তের ভুলের এমন মাশুল দিতে হবে! কাবিননামায় উসুলের কলাম না পড়ে স্বাক্ষর করার মূল্য কি এভাবে দিতে হবে? আমার কি কিছুই করার নেই?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

 

উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য অনেক ধন্যবাদ। মুসলিম আইনে বিয়ে একটি দেওয়ানি চুক্তি। মুসলিম বিয়ের আইন অনুযায়ী দেনমোহর একটি অন্যতম শর্ত। দেনমোহর স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে পরিশোধযোগ্য একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা। দেনমোহরের একটি অংশ বিয়ের সময় পরিশোধ (উসুল) করে দেওয়া হয়, সেটা তাৎক্ষণিক দেনমোহর। কাবিননামার ক্রমিক নম্বর ১৫ কলামে এই সম্পর্কে বলা আছে। বাকিটা বিলম্বিত দেনমোহর হিসেবে ধরা হয়। তাৎক্ষণিক দেনমোহর স্ত্রী চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ করতে হয়। আর বিলম্বিত দেনমোহর বিয়ের পর যেকোনো সময় পরিশোধ করা যায়। তবে বিবাহবিচ্ছেদের পর দেনমোহর অবশ্যই পরিশোধ করতে হয়।

কাবিননামা বা নিকাহনামা বিয়ের একমাত্র লিখিত প্রামাণ্য দলিল। বিবাহসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় এর প্রয়োজন হয়। আপনি জানিয়েছেন বিয়েতে স্ত্রীকে ৬ ভরি সোনার গয়না দিয়েছেন, যা তিনি তাঁর বাবার বাড়ি যাওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছেন। কাবিনে এই গয়না উসুল দেখানোর কথা ছিল, ভুলবশত যেটা করা হয়নি। আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ স্বাক্ষর করার সময় এটি খেয়াল করেননি।

 

সে ক্ষেত্রে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আইনগতভাবে দেনমোহরের যে টাকার পরিমাণ কাবিননামায় উল্লেখ করা আছে, সেই টাকা পরিশোধ করতে আইনত আপনি বাধ্য। বিষয়টি তখনই আপনার বা আপনার পরিবারের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির খেয়াল করা উচিত ছিল। তবে যদি আলোচনা সাপেক্ষে আপনার স্ত্রী দেনমোহর মওকুফ করে দেন এবং সেই মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা দেন যে ভবিষ্যতে তিনি কোনো মামলায় যাবেন না, তবে সে ক্ষেত্রে আপনার পরিশোধ না করলেও হবে।

বিবাহবিচ্ছেদের পর স্ত্রী তাঁর অপরিশোধিত মোহরানা পাওয়ার অধিকারী। দেনমোহর যদি অপরিশোধিত থাকে, তাহলে স্বামীকে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। আর এটা নির্ধারণের একমাত্র প্রমাণপত্রই কাবিননামা। সেখানে যা লিখিত হয়েছে, তা দ্বারাই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নির্ধারিত হয়ে থাকে। এ জন্যই কাবিননামার গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে আইনের কোনো ভুল নেই; বরং লিখিত না থাকলে অনেক সময় অন্যায়ভাবে অনেক কিছু চাপিয়ে দেওয়া যায়। এ কারণেই লিখিত চুক্তির গুরুত্ব অনেক। আপনার নিজের ও পরিবারের লোকের ভুলের কারণে আপনাকে এর মাশুল দিতে হচ্ছে।

শেয়ার করুন