অতীতের মতোই আফগানিস্তানের উন্নয়নের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে দিল্লি প্রস্তুত। ভারত ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবদের এক বৈঠকের পর গত বুধবার জানিয়েছে ভারত।
দুবাইতে বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এদিন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভি আমির খান মুত্তাকির মধ্যে একটি বৈঠক হয়।
এ বৈঠকে ভারত জানায়, আফগানিস্তানের উন্নয়নে শামিল হতে দিল্লি প্রস্তুত। বিবৃতির ভাষায়, ‘পররাষ্ট্রসচিব আফগান জনগণের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব এবং দুই দেশের জনগণের শক্তিশালী যোগাযোগের কথা তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আফগান জনগণের জরুরি উন্নয়নমূলক প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার জন্য ভারতের প্রস্তুতির ওপর জোর দেন।’ দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ প্রতিনিধিদের মধ্যে এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক ও ঘোষিত বৈঠক।
আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে আফগানিস্তান থেকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী দেশে ফিরে যায়, তখন ভারত প্রবল দ্বিধা ও উদ্বেগের মধ্যে ছিল। আফগানিস্তান নিয়ে ভারতের নীতি কী হবে, তা নিয়ে ছিল এ উদ্বেগ।
একদিকে আফগানিস্তানে ভারতের সরকার ও বেসরকারি শিল্পপতিদের যে বিনিয়োগ আছে তা এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো বাঁচানোর একটা তাগিদ ছিল; অন্যদিকে তালেবান নেতৃত্বাধীন ইসলামি আমিরাতের সরকারের সঙ্গে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের সম্পর্কের চরিত্র কী হবে, তা নিয়ে সরকার ও বিজেপির মধ্যেই ছিল নানান আলোচনা ও মতবিরোধ।
আফগানিস্তানের এই সরকারে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা সরাসরি আল–কায়েদার সঙ্গে একসময় সম্পৃক্ত ছিলেন।
চীনের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্কের ক্রমে উন্নতি হচ্ছে। শুধু কূটনৈতিক নয়, ব্যবসায়িক স্তরেও তাদের সম্পর্ক ক্রমে দৃঢ় হচ্ছে।
কিন্তু এই সময়পর্বে (২০২১-২৪) দেখা যায়, চীনের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্কের ক্রমে উন্নতি হচ্ছে। শুধু কূটনৈতিক নয়, ব্যবসায়িক স্তরেও তাদের সম্পর্ক ক্রমে দৃঢ় হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারতও ধীরে ধীরে আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা শুরু করে।
মনে রাখা প্রয়োজন, আফগানিস্তানের এই সরকারে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা সরাসরি আল–কায়েদার সঙ্গে একসময় সম্পৃক্ত ছিলেন। ফলে অন্য অনেক দেশের মতোই ভারত এখনো কাবুলে তালেবান শাসনকে স্বীকৃতি দেয় না। তালেবান ক্ষমতা দখলের পরে ভারত তার সব কূটনীতিককে প্রত্যাহার করে।
কিন্তু এক বছর পর ২০২২ সালের জুনে ভারত তার কূটনৈতিক অফিস আবার চালু করে এবং একটি দল সেখানে মোতায়েন করে কাবুলে তার আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি আবার প্রতিষ্ঠা করে।
এর প্রধান কারণ, ইসলামি আমিরাতের সরকারকে চীনের স্বীকৃতি থেকে ভারত বুঝতে পারে, অতীতে তাদের যারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী বলেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসাটা এখন বড় ধরনের ভুল হবে। গোটা ২০২৩-২৪ সালে এ লক্ষ্যে কাজ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর ফলে গত নভেম্বর মাসের শেষের দিকে পশ্চিম ভারতের মুম্বাইয়ে আফগানিস্তানের অন্যতম কনস্যুলেট অফিসে অস্থায়ী কনসাল জেনারেল হিসেবে একরামউদ্দিন কামিল নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে ইসলামি আমিরাতের সরকার। কামিল ভারত সরকারের বৃত্তি পেয়ে দিল্লিতে অবস্থিত সাউথ এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে পিএইচডি করছেন।
নভেম্বর মাসের গোড়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরান বিভাগের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব জে পি সিং কাবুলে গিয়ে ইসলামি আমিরাতের অস্থায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে দেখা করেন।
মুহাম্মদ ইয়াকুব আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসের প্রধান জাতীয় নায়ক মোল্লা মুহাম্মদ ওমরের সন্তান। ২০১৩ সালে মৃত্যু হয় মোল্লা ওমরের। কিন্তু সে দেশে তিনি এক কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন।
২০২১ সালে যুদ্ধে জয়ের পর তাই এখন মোল্লা ওমরকে জাতীয় নায়কের সম্মান দিচ্ছে আফগানিস্তান এবং তাঁর ছেলের সঙ্গে বৈঠক করতে হচ্ছে ভারতকে। জে পি সিং কাবুলে আমির খান মুত্তাকি এবং আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভি আমির খান মুত্তাকি। দুবাই, ৮ জানুয়ারিছবি: এক্স (টুইটার)
এরপরই বুধবার মিশ্রি বৈঠক করলেন মুত্তাকির সঙ্গে। বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ভারত আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত এ পর্যন্ত ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম, ৩০০ টন ওষুধ, ভূমিকম্প–পরবর্তী পরিস্থিতিতে ২৭ টন ত্রাণ সহায়তা, ৪০ হাজার লিটার কীটনাশক, ১০ কোটি পোলিও টিকার ডোজ, ১৫ লাখ ডোজ কোভিড টিকা, মাদকাসক্তি ছাড়ানোর ১১ হাজার সামগ্রী ছাড়াও শীতবস্ত্র ও শিশুদের বিভিন্ন সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং বিশেষত শরণার্থীদের পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে ভারত সেখানে বড় ভূমিকা আগামী দিনে রাখতে চলেছে বলে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্রিকেটের উন্নতিতেও ভারত আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়াবে। এ ছাড়া বিবৃতিতে বলছে, আফগানিস্তানের জন্য মানবিক সহায়তার উদ্দেশ্যসহ বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সহায়তার জন্য চাবাহার বন্দর ব্যবহারের বিষয়েও সমঝোতা হয়েছে।
বিবৃতির শেষ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান ভারতের নিরাপত্তার উদ্বেগের প্রতি তার সংবেদনশীলতার কথা জানিয়েছে। উভয় পক্ষ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার ব্যাপারে একমত হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখতেও তারা সম্মত হয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে আজ থেকে সাড়ে তিন বছর আগে আফগানিস্তান থেকে যখন যুক্তরাষ্ট্র বিদায় নিয়েছিল, সে সময় পাকিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা বিভাগ আইএসআইয়ের (ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন।
গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলায় ৪৬ জন মারা গেছেন। নতুন বছরের শুরুতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অন্তত ১২ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে। এর জন্য আফগান জঙ্গিদের দায়ী করছে পাকিস্তান। পাকিস্তান বলছে, তারা বাধ্য হয়েই মারছে জঙ্গিদের (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান ও আফগান তালেবান)।
আফগানিস্তানের বক্তব্য, পাকিস্তান জঙ্গি নিধনের নামে হত্যা করছে সাধারণ মানুষকে। বলাই বাহুল্য, সম্পর্কের দ্রুত অবনতি হয়েছে গত কয়েক মাসে এবং এখনো হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যবর্তী প্রায় ২ হাজার ৭০০ কিলোমিটার সীমান্তের বড় অংশই কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
পাকিস্তানের বর্তমান সমস্যা অনেকটাই সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যার মতো। আফগানিস্তানে আধুনিক জঙ্গিবাদ যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি) এবং আইএসআইয়ের সমঝোতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের বিদায়ের (১৯৮৯) পর এই জঙ্গিবাদ ধীরে ধীরে আমেরিকা ও ইউরোপের বিরুদ্ধে কাজ করতে শুরু করে।
পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেকটা সেই রকম। ওয়াশিংটন পোস্ট বুধবারের তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘পাকিস্তানের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বারবার একটা অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগটি হলো তারা ২০ বছর ধরে আফগান তালেবানদের আশ্রয় দিয়েছে এবং সহ্য করেছে।’ অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিভিন্ন সময় তালেবানের পাশে দাঁড়িয়েছে ইসলামাবাদ। আবার অনেক সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাহায্যও নিয়েছে। ফলে এখন পাকিস্তানকে এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে। কারণ, পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে; কিন্তু সমস্যার চরিত্র একই। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে।
আল–কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব–কন্টিনেন্ট (একিউআইএস) নামে আল–কায়েদার দক্ষিণ এশিয়া শাখা বাংলাদেশ নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর ৪১ পাতার যে পুস্তিকা বের করেছে, সেখানে তারা পাকিস্তানকে প্রবল আক্রমণ করে বলেছে, পাকিস্তান ১৯৭১ সালে এটা ভুলে গিয়েছিল যে ‘গায়ের রং, বর্ণ এবং নিজের মতাদর্শ একটি ভিন্ন জাতির ওপরে চাপিয়ে তাকে দমিয়ে রাখা যায় না’। এ কারণেই বাংলাদেশ বিদ্রোহ করেছিল ১৯৭১ সালে।
কিন্তু পাকিস্তানের ‘স্বল্পসংখ্যক বিত্তবান মানুষ এবং সেনাবাহিনীর জেনারেল’ সেই একই পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করে চলেছেন। সশস্ত্র ইসলামি সংগঠন আল-কায়েদা ২০২৪ সালে বিভিন্ন লেখায় বারবার বলেছে, ‘পাকিস্তান এখন একাধারে আফগান এবং অন্যদিকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সেটাই করছে, যা তারা ১৯৭১ সালে বাঙালি এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করেছিল। এর ফলে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিয়মিত সেনাবাহিনীর সদস্য এবং সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছেন।’
পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘পাকিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য আমাদের এক হয়ে এখনই কাজে নামতে হবে।’ অর্থাৎ, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান ও আফগান তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও জোরালো করতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই এটা বোঝা যাচ্ছে যে আগামী দিনে ওই অঞ্চলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের তীব্রতা আরও বাড়বে।
ঠিক সেই একই সময়ে ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের কর্তারা নিয়মিত ইসলামি আমিরাতের নেতৃত্বের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন, সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, চেষ্টা করছেন অতীতের আল–কায়েদা ও বর্তমানে ইসলামি আইনে বিশ্বাসী জনপ্রতিনিধিদের হাত ধরার। কোথাকার জল এখন কোথায় গড়ায়, সেটাই দেখার।
ভারতের পর্যবেক্ষকদের মধ্যে যাঁরা সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে বিশ্বের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে মিলিয়ে দেখতে অভ্যস্ত, তাঁদের একাংশের ধারণা, ভারতের আফগানিস্তানের সঙ্গে সৌহার্দ্য এবং সহযোগিতা বাড়ানোর প্রধান কারণ চীন। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর অন্যতম চীন গত এক থেকে দুই বছরে আফগানিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা ১২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছে। আফগানিস্তানের পণ্য ১০০ শতাংশ করমুক্ত করে চীনের বাজারে প্রবেশের অনুমতিও দিয়েছে বেইজিং।
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ের পরে চীন প্রথম ‘সুপারপাওয়ার’ হিসেবে সেখানে রাষ্ট্রদূত পাঠিয়েছে এবং আফগান রাষ্ট্রদূতকে বেইজিংয়ে স্বাগত জানিয়েছে। ফলে কিছুটা বাধ্য হয়েই দিল্লিকে হাত মেলাতে হয়েছে এমন এক সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যাঁরা শরিয়তে বিশ্বাসী, জিহাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত এবং বিশ্বব্যাপী ইসলামি ভ্রাতৃত্বের বোধকে বারবার তাঁদের লড়াইয়ের ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ভারতের হিন্দুবাদী বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এবং তার দিকনির্দেশক সংগঠন হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ নির্দিষ্টভাবে এই চিন্তাভাবনার যে ঘোর বিরোধী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তা সত্ত্বেও মোল্লা ওমরের ছেলের সঙ্গে হাত মেলাতে হচ্ছে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবকে। অভ্যন্তরীণ সামাজিক-রাজনৈতিক নীতি এবং বিদেশনীতির মধ্যে যে বিরোধ, তা মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যে এসে নির্দিষ্ট রাষ্ট্রকে একটা ঘোর অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে যে ফেলে দেয়, এটা তার ভালো উদাহরণ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের গণ–অভ্যুত্থানকেও এই সখ্যের একটা কারণ হিসেবে দেখছেন। ভারতে সার্বিকভাবে মনে করা হচ্ছে, আগামী কিছু বছর বাংলাদেশে পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে। ভারতের সাবেক কূটনীতিক এবং পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন না যে এই প্রভাব স্থায়ী হবে। এর কারণ আগামী দিনে পাকিস্তানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়বে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানের প্রভাব যে কিছুটা বাড়বে, তা অনস্বীকার্য। এটা মাথায় রেখেই পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্তের প্রধান শত্রু আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার লক্ষ্যে এগোতে চাইছে ভারত।
তবে এর পাল্টা যুক্তি হলো আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার লক্ষ্যে মোটামুটিভাবে ২০২৩ সাল থেকেই ভারত সক্রিয়। আর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিদায় নিয়েছে ২০২৪-এর আগস্টে। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, ভারত কি আগেই কিছুটা আন্দাজ করছিল যে হাসিনা সরকার অদূর ভবিষ্যতে টিকবে না এবং পূর্ব ও পশ্চিম দুই সীমান্তেই একটা অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হবে? আর সে কারণে আফগানিস্তানের সঙ্গে আগেই সম্পর্ক উন্নত করার ওপর জোর দিয়েছিল?
ভারতের এক সাবেক কূটনীতিবিদের মতে, ‘এটা একটু কন্সপাইরেসি থিওরির (ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব) মতো শোনাচ্ছে। তবে সে যা–ই হোক, উপমহাদেশসহ এশিয়ার রাজনীতির পট যে দ্রুত পাল্টাবে, সেটা আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ের পরে স্বাভাবিকভাবেই ভারত বুঝতে পেরেছিল। আমার ধারণা, সেটা মাথায় রেখেই কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে সচেষ্ট হয়েছিল দিল্লি।’
আপাতত তাই পাকিস্তানকে ‘এনগেজড’ রাখতে দিল্লির তাস শরিয়তনির্ভর ইসলামি রাষ্ট্র আফগানিস্তান।