মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে দানা জাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন করেছেন মন্তব্য করে কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, এখন আমাদের লক্ষ্যই হলো বাংলাদেশের কৃষিকে বানিজ্যিকীকরণ করা। আর এক্ষেত্রে কৃষিকে আধুনিকিকরণ করতে হবে। সেই লক্ষে আমরা এখন কৃষিখাতে মেকানাইজেশন যান্ত্রিকিকরনের দিকে এগুচ্ছি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল কৃষি খাতে অপার সম্ভাবনাময় এলাকা মন্তব্য করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে আমি কৃষি বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করেছি। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় কৃষিখাতকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে বর্তমান সরকার।
এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য যাতে সহজে বিক্রি করতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং এটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। পাহাড়ের কৃষকদেরকে সনাতন পদ্ধতির জুম চাষ থেকে বের হয়ে এসে উন্নত চাষাবাদের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বাড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী রাঙামাটি সফরে এসে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে কৃষি আবহাওয়া ভিত্তিক এফএম ৯৮.০ রেডিও ও ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডের উদ্বোধন পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন।
এরআগে মন্ত্রী সকালে রাঙামাটি সদর উপজেলা কুতুকছড়ি ধর্মঘর ও নানিয়ারচর উপজেলাধীন দ্বীচান পাড়া এলাকায় কাজু বাদাম ও সূর্যমুখী ফুলের গাছ পরিদর্শন ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করেন। সভায় কৃষকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, গতানুগতিক কৃষিকাজ করে মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হবে না। কৃষি আধুনিক হলেই মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। সেজন্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে কাজ করছে। কৃষি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানি বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকার সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। নানান উদ্যোগের ফলে কৃষি এখন যান্ত্রিকীকরণ হচ্ছে, কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাত বাড়ছে ও রপ্তানিও বাড়ছে।
মন্ত্রী বলেন, ভিয়েতনাম কাজুবাদাম রপ্তানি করে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা আয় করে। দেশটি যে পরিমাণ রপ্তানি করে, তার ৪০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে। বাকী ৫০-৬০ ভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করে থাকে। আমাদের দেশেও কাজুবাদাম উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করে ভিয়েতনামের মতো আয় করা সম্ভব। সেজন্য, পাহাড়ের বিশাল এলাকায় এসব ফসলের চাষ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। সেলক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, কৃষিকে আরো লাভজনক করতে হলে ধান, গম, শাকসবজিসহ প্রচলিত ফসলের পাশাপাশি কফি, কাজুবাদাম, গোলমরিচ, আনারস, আমসহ বিভিন্ন অপ্রচলিত অর্থকরী ফসলের চাষ করতে হবে।
এদিকে উক্ত মতবিনিময় সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, সিলেট ও মৌলভীবাজার যেমন চায়ের জন্য নামকরা, তেমনি কাজুবাদাম ও কফির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা পরিচিত হয়ে উঠবে। কফি-কাজু বললেই মানুষ পাহাড়কে চিনবে। পাহাড়ে কাজুবাদাম ও কফি চাষের সম্ভাবনা অনেক। এসব ফসল একবার লাগালে অনেকদিন টিকবে, বছর বছর ফসল লাগাতে হবে না। এতে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল হওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন এগিয়ে চলেছে। এ উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত থাকলে পার্বত্য অঞ্চল দেশের জন্য বোঝা নয়, দেশের জন্য সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকায় পরিণত হবে বলেও পার্বত্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন।
এসময় রাঙামাটির সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার-এমপি, সরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদ আখতার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সম্ভাবনাময় কাজু বাদাম ও কফি আবাদ, সম্প্রসারণ এবং বিভিন্ন জাতের ফলসহ টেকসই ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি কর্মসূচি নিয়ে স্থানীয় স্টেকহোল্ডার ও সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন মন্ত্রী।
মতবিনিময় সভা প্রার্ন্তিক কৃষকরা তাদের কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এই সকল সমস্যা সমাধানে কাজ করা হবে বলে মন্ত্রী আশ্বাস প্রদান করেন।