রাঙামাটি শহরে অবস্থিত দুটি সরকারি কলেজেই শিক্ষক সঙ্কটের কারণে মানসম্মত শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী রাঙামাটি সরকারি কলেজ এবং সরকারি মহিলা কলেজ দুটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা সদরের বড় দুটি কলেজের এই দৈন্যদশা জেলার শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং নেতৃবৃন্দকে প্রতিনিয়ত মানসিক পিড়া দিচ্ছে। রাঙামাটি জেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায়ও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয় এবং শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে যথাযথ কর্তৃপক্ষে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
সোমবার (২৯ মে) রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন কমিটির এ সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী।
সভায় রাঙামাটি সরকারি কলেজের প্রতিনিধি জানান, সরকারি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বর্তমানে ১২ শ’এর অধিক। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। ফলে মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিত করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অনুরূপভাবে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজেও একই সমস্যা বিরাজ করছে বলে রাঙ্গামাটি সরকারি মহিলা কলেজের প্রতিনিধি জানান।
এ সময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, কলেজ দুটির শিক্ষক সংকটের বিষয়সহ জেলার শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যাদি নিরসনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এবষিয়ে আবারও উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট শিক্ষক সংকট নিরসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হবে।
জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা: আশরাফুল ইসলাম এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় জেলার বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগণ উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন।
সহকারি পরিচালক সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার সার্ভিস জানান যে, ইতিমধ্যে লংগদু ও রাজস্থলী উপজেলায় নতুন ফায়ার স্টেশন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তন্মধ্যে লংগদু উপজেলার ফায়ার স্টেশনটি ইতিমধ্যে চালু করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল পদায়ন করা হলে রাজস্থলী উপজেলা ফায়ার স্টেশনটিও দ্রুত চালু করা হবে। তাতে আগামী মাসের মধ্যে জনবল পদায়ন হতে পারে বলে তিনি জানান। তাছাড়া উপযুক্ত জায়গা প্রাপ্তি সাপেক্ষে রাঙ্গামাটি রিভারইন ফায়ার স্টেশন এবং সাজেকে ল্যান্ড ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতিনিধি জানান যে,রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন কাজ যথারীতি চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি সড়কের রাঙ্গামাটি অংশের টেকসইভাবে উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা উর্ধতন পর্যায়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
জেলা বাজার কর্মকর্তা জানান যে, ইদানীং পেয়াজের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। পেয়াজ ছাড়া অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে পেয়াজের দামও শীঘ্রই কমে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিভাগীয় কর্মকর্তা দক্ষিণ জানান যে, চলতি বছর ১ লক্ষ চারা বিতরণের লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সভাপতি মহোদয় এ জেলার জন্য উপযোগি এবং অধিকতর পরিবেশ প্রতিবেশ বান্ধব গাছ লাগানোর বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বনবিভাগের প্রতিনিধিদের আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি জানান যে, স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে একাধিকবার সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকটি সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বিভাগভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি সকল বিভাগীয় প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতি মহোদয় স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে যথাসময়ে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণ, পরিকল্পিত বনায়ন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন।
গৃহীত সকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা যায় এ সম্বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও তিনি সকলের প্রতি নির্দশনা প্রদান করেন। এজেলায় যাতে ইয়াবাসহ মাদক চোরাচালান ও ব্যবহার বিস্তার লাভ করতে না পারে সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেন।