সৌম্য সরকারকে রহস্যই বলতে হবে। দ্রুত রান তুলতে পারেন, মারতে পারেন বড় বড় ছক্কা, মানে টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ এক ব্যাটসম্যান। অথচ টি–টোয়েন্টিতে তাঁর রেকর্ডে এর কোনো প্রতিফলন নেই। টি–টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ, সেই স্ট্রাইকরেটও ভালো নয়।
জাতীয় দলের কথা ছাড়ুন, স্বীকৃত কোনো টি-টোয়েন্টি লিগেও বলার মতো খুব বেশি পারফরম্যান্স নেই। আজ গায়ানায় শেষ হওয়া গ্লোবাল সুপার লিগটা এদিক থেকেই ব্যতিক্রম। এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, ফাইনালে সেরা, সিরিজ–সেরা—সবই সৌম্য। বাঁহাতি এই ওপেনারের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে কি তাহলে টার্নিং পয়েন্ট হতে যাচ্ছে এই টুর্নামেন্ট?
গ্লোবাল সুপার লিগে সৌম্য কী করেছেন, তা আগে দেখে নেওয়া যাক। ৫ ম্যাচে ১৮৮ রান করেছেন। স্ট্রাইকরেট ১৪২.৪২, টুর্নামেন্টে কমপক্ষে ১০০ রান করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ ৪৭ ব্যাটিং গড়ও। টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ৯টি ছক্কাও এসেছে সৌম্যর ব্যাটিংয়ে।
পুরো টুর্নামেন্টে তাঁর ক্যারিয়ারের সঙ্গে ব্যতিক্রমী ধারাবাহিক। প্রথম ম্যাচে ২০ বলে ২৭ রান করার পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার দল ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে পান ফিফটি। যা এসেছে ৩৯ বলে। এই দুই ম্যাচে অবশ্য সৌম্যর দল জেতেনি। তবে সৌম্য তাঁর কাজটা ঠিকই করেছেন। স্বাগতিক অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচটাতেই শুধু দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি, আউট হওয়ার আগে করতে পেরেছেন মাত্র ২ রান।
গ্লোবাল সুপার লিগে ৫ ম্যাচে ১৮৮ রান করেছেন সৌম্যরংপুর রাইডার্স
লাহোরের বিপক্ষে পরের ম্যাচেই খেলেছেন ১৩ বলে ২২ রানের ইনিংস। আর আজ প্রভিডেন্সে ফাইনালে ভিক্টোরিয়াকে পেয়ে তো অপরাজিত ছিলেন ৫৪ বলে ৮৬ রানে। সব মিলিয়ে এমন টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট এর আগে খেলেছেন বলে মনে হয় না।
জাতীয় দলের হয়ে তাঁর সেরা টি–টোয়েন্টি পারফরম্যান্স বলতে হবে ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটিকে।
তিন ম্যাচের দুটিতেই ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন। হয়েছিলেন সিরিজ–সেরাও। তবে পুরো ক্যারিয়ার রেকর্ডের দিকে তাকালে এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনাই বলতে হবে। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ৮৫ ম্যাচ খেলে সৌম্যর গড় ১৭.৬০, স্ট্রাইকরেট ১২২.৭৫। ফিফটি নেই সর্বশেষ ২৮ ইনিংসে। সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতেও গড়টা বিশের নিচে। স্ট্রাইকরেটও ১২০–এর কম।
বাংলাদেশের জার্সিতে ছন্দে দেখা যায়নি সৌম্যকেআইসিসি
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে আরও ভাঙলে বিপিএলের পারফরম্যান্সে চোখ দেওয়া যায়। সেখানকার অবস্থা আরও বাজে। ৯৯টি ম্যাচে গড় মাত্র ১৮.০৭, স্ট্রাইকরেট ১১৩। বিপিএলে রান কম ওঠে, এটা একটা যুক্তি হতে পারে। তবে এই বিপিএলেই লিটন দাস ১২৭ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন। আহামরি না হলেও বিপিএলে এটা খারাপ নয়। আর প্রতিভা ও সামর্থ্যের বিচারে লিটনের পাশে মনে হয় সৌম্যকে রাখাই যায়।
সৌম্য নিজেও নিশ্চয়ই নিজের পরিসংখ্যান সম্পর্কে জানেন। সে কারণেই দেশের বাইরে খেলা প্রথম টুর্নামেন্টে ভালো পারফরম্যান্সকে দেখছেন টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে। সিরিজ–সেরার পুরস্কার হাতে নিয়ে বলেছেন, ‘সুযোগ দেওয়ার জন্য রংপুর রাইডার্সকে ধন্যবাদ। প্রথমবারের একটি গ্লোবাল টুর্নামেন্টে খেলেছি। এটা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট।’
দারুণ ছন্দ কাজে লাগানোর মঞ্চ অবশ্য সৌম্য খুব দ্রুতই পেতে যাচ্ছেন। আগামীকালই সেন্ট কিটসে বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামার কথা সৌম্যর। সংস্করণ ভিন্ন হলেও একই কন্ডিশনে খেলা হওয়ায় সৌম্যর দিকে প্রত্যাশাভরে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।
রংপুরের শিরোপা জয়ের নায়ক সৌম্যরংপুর রাইডার্স
ওয়ানডেতে সৌম্য একেবারে খারাপও করছেন না। সর্বশেষ আফগানিস্তান সিরিজে তিন ম্যাচেই রান করেছেন। বড় রান পাননি, তবে দলকে ভালো শুরু এনে দিয়েছেন। তিন ম্যাচে করেছেন ৩৩, ৩৫ ও ২৪ রান।
অবশ্য সামর্থ্যের বিচারে সৌম্যকে নিয়ে এসব ইনিংসে খুশি হওয়ার সুযোগ নেই। গ্লোবাল সুপার লিগ ফাইনালে অপরাজিত ৮৬ রানের ইনিংসটি যদি সত্যিকারের অর্থেই তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য টার্নিং পয়েন্ট হয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য তা বড় একটা পাওয়াই হবে।