এ রকম একটা অর্জনে বিশেষ উদ্যাপন তো হবেই। বেন কারেনকে ফেরানোর পরই মেহেদী হাসান মিরাজকে ঘিরে সতীর্থরা সে রকমই কিছু করলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আজ সেঞ্চুরির পর বল হাতেও নিয়েছেন ৫ উইকেট। টেস্টে বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন মিরাজ, যাঁর হাত ধরে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনেই জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারিয়ে সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ দল। সিলেটের প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়ে জিতেছিল ৩ উইকেটে।
এর আগে একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেটের কীর্তি বাংলাদেশ দলে ছিল সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর। মিরাজের নাম এই তালিকায় তৃতীয় সংযুক্তি। তবে আজ চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে মিরাজ কীর্তি গড়েছেন আরও। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ২০০০ রান ও ২০০ উইকেটের ক্লাবেও ঢুকেছেন তিনি, যা সব মিলিয়ে ২৬তম।
আজ প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছে ১১১ রানে। তাতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষ হলো ১–১ ব্যবধানে। চট্টগ্রামের উইকেটে শুরু থেকেই স্পিনারদের জন্য ভালো টার্ন ছিল। তৃতীয় দিনে এসে সেটা বেড়েছে আরও। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২১৭ রানের লিডই তাই টেস্টের গতিপথ অনেকটা ঠিক করে দেয়। তিন স্পিনার তাইজুল, মিরাজ ও নাঈমের সামনে এই উইকেটে ২১৭ রানের লক্ষ্য টপকানো তো আর সহজ কাজ নয়।
সেঞ্চুরির পর ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজশামসুল হকে
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন নতুন বল তুলে দেন তাইজুলের হাতে। অন্য প্রান্তে পেসার হাসান মাহমুদ ২ ওভার বোলিং করার পর বোলিংয়ে আসেন আরেক স্পিনার মিরাজও। এরপর তিন স্পিনার মিলেই করেছেন দিনের বাকি সব ওভার।
তাইজুল উইকেটের দেখা পান ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে। ওই ওভারে তিন বলের মধ্যে ফেরেন ব্রায়ান বেনেট ও নিক ওয়েলচ। চার ওভার পর নাঈম বোলিংয়ে এসে আউট করেন শন উইলিয়ামসকে। তবে এরপর জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন ও ওপেনার বেন কারেন মিলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন। যদিও তাতে ছিল ভাগ্যের ছোঁয়া। দলীয় ৫১ রানের সময় মিরাজের বলে ক্যাচ ছাড়েন নাজমুল। বাকি গল্পটা বোলার মিরাজেরই।
ম্যাচে ৯ উইকেট পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম
ইনিংসের ৩০তম ওভারের প্রথম বলে ক্রেইগ আরভিনকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে চতুর্থ উইকেট এনে দেওয়া মিরাজ ওভারের শেষ বলে এলবিডব্লু করেন ওয়েসলি মাধেভেরেকে। তাতে ৩ উইকেটে ৬৯ থেকে ৬ বলের মধ্যে ৬৯/৫ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। পরের ওভারে এসে মিরাজ ফেরান তাফাদজাওয়া সিগাকে। পরে আউট করেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা আর কারেনকেও। এনগারাভাকে আউট করেছেন তাইজুল। শেষ উইকেট জুটিতে মুজারাবানি ও মাসেকেসা ২২ বলে ১১ রানের জুটি গড়েন, যেটি ভাঙে রানআউটে।
অবশ্য আজ প্রথম ইনিংসে মিরাজ যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন উইকেট বেশি কঠিন মনে হয়নি। জিম্বাবুয়ের দুর্বল বোলিংয়ের সঙ্গে তাঁর দুর্দান্ত ব্যাটিংও এর কারণ। ১৬ রানে দিন শুরু করা মিরাজ সেঞ্চুরি করেছেন তাইজুল, তানজিম ও হাসানকে নিয়ে।
তাইজুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে আজ সকালে মিরাজ যোগ করেন ৫১ রান। তাইজুল ২০ রানে ফিরে গেলেও তানজিমের সঙ্গে গড়েন ৯৬ রানের জুটি। তাতে ঘরের মাঠে প্রায় দুই বছর ও ১৫ ইনিংস পর ৪০০ করতে পারল বাংলাদেশ। তাতে তানজিমের কৃতিত্বও গুরুত্বপূর্ণ। এই বোলিং অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ৪৩ রান।
সেঞ্চুরির পর মিরাজের উদ্যাপন
তানজিমের আউটের পর মিরাজের সেঞ্চুরিটা এসেছে নাটকীয়ভাবে। শেষ উইকেটে মিরাজকে ৯৯ রানে নন–স্ট্রাইকে রেখে হাসান মাহমুদ যেভাবে ভিনসেন্ট মাসেকেসার ৫টি বল কোনোমতে ঠেকালেন, তাতে এই সেঞ্চুরিতে তিনিও কিছু অবদান দাবি করতে পারেন। টেস্টে মিরাজ সেঞ্চুরি পেলেন চার বছরের বেশি সময় পর। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, এই চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
জিম্বাবুয়ে: ২২৭ ও ৪৬.২ ওভার ১১১ (কারেন ৪৬, আরভিন ২৫; মিরাজ ৫/৩২, তাইজুল ৩/৪২, নাঈম ১/৩৪)। বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১২৯.২ ওভারে ৪৪৪ (সাদমান ১২০, মিরাজ ১০৪, তানজিম ৪১, মুশফিক ৪০, এনামুল ৩৯, মুমিনুল ৩৩, নাজমুল ২৩, তাইজুল ২০; মাসেকেসা ৫/১১৫)। ফল: বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী। সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজ ১–১ ড্র। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ। ম্যান অব দ্য সিরিজ: মেহেদী হাসান মিরাজ।