দুবাইয়ে গতকাল রাতে দুটি মুহূর্ত দেখে মনে হলো, বিরাট কোহলি পৃথিবীর সুখী মানুষদের একজন।
এক. ফাইনালে ভারতের জয়ের পর স্টাম্প নিয়ে মাঠে রোহিত শর্মার সঙ্গে লোকনৃত্য। গুজরাট অঞ্চলে নবরাত্রিতে নাচটা জনপ্রিয়। অনেকটাই তলোয়ারযুদ্ধের মতো। কোমর ঘুরিয়ে হাসতে হাসতে স্টাম্পে ঠোকাঠুকি করছিলেন দুজন। কেউ কেউ অবশ্য সেটাকে তলোয়ারযুদ্ধ ভেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ফাইনালের সঙ্গেও মিলিয়ে নিতে পারেন। ফাইনালে নিউজিল্যান্ড সেভাবে লড়াই করতে পারল কোথায়! হাসিমুখে ওই তলোয়ারযুদ্ধের মতো ভারতও হাসতে হাসতে ম্যাচটা জিতেছে আরামসে।
দুই. মাঠে পরিবার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ শামি। হাসিমুখে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে শামির মায়ের পা ছুঁয়ে আর্শীবাদ নেন কোহলি। এরপর সবাই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন। আরও কয়েকজন গেলেন কোহলির সঙ্গে ছবি তুলতে। মুখে হাসিটা ধরে রেখেই সবার আবদার মেটালেন কোহলি। দেখে মনে হচ্ছিল, ওই মুহূর্তে তাঁর কাছে যেকোনো আবদারই টিকে যেত। আইসিসির সর্বশেষ তিনটি বড় টুর্নামেন্টেরই ফাইনাল খেলল ভারত। ২০২৩ বিশ্বকাপটা না পেলেও পরের বছর টি–টোয়েন্টি ট্রফি এবং কাল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা উঠল ভারতের ঘরে। কোহলির মানসিকতা রাজার মতো হবে না তো আর কার হবে!
বড় মাপের রাজারা সিংহাসন ছাড়ার আগে রাজত্ব আরও সুসংহত করে যান। কোহলি মনে করেন, ভারত জাতীয় দল এখন তেমন অবস্থানেই আছে। ক্রিকেট মাঠে গোটা পৃথিবীর মুখোমুখি হতেও ভয় পাবে না—কোহলির ভাষায়, ‘রেডি টু টেক অন দ্য ওয়ার্ল্ড।’ এই কথার ক্রিকেটীয় অর্থ, ভারতের বর্তমান দলটি আগামী আট বছর যেকোনো চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।
মোহাম্মদ শামির মায়ের সঙ্গে কোহলিভিডিও থেকে নেওয়া
জাতীয় দলের জার্সিতে ১৭ বছর চলছে ৩৬ বছর বয়সী কোহলির। যখন দলে ঢোকেন, সে সময়ের তুলনায় ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে দলকে আরও ভালো অবস্থানে রেখে যাওয়ার কপাল তো সবার হয় না! কোহলি মনে করেন, তাঁর ক্যারিয়ারের গতিপথ বিবেচনায় ভারতের বর্তমান দলটি এখন সেই কক্ষপথেই আছে, ‘চলে যাওয়ার আগে দলকে সবাই আরও ভালো অবস্থানে রেখে যেতে চায়। আমার মনে হয়, আমাদের এমন একটি স্কোয়াড আছে, যারা আগামী আট বছর যেকোনো চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। শুবমান গিল দুর্দান্ত। শ্রেয়াস আইয়ার সুন্দর। লোকেশ রাহুল ম্যাচ শেষ করছে এবং হার্দিক পান্ডিয়াও ব্যাট হাতে দুর্দান্ত।’
গত ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজ হারের পর ব্যাপক সমালোচনা সহ্য করতে হয় রোহিতের দলকে। কোহলি মনে করেন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দিয়ে সেই সিরিজ হারের কষ্ট এখন ভুলে যাওয়া যায়, ‘অস্ট্রেলিয়ায় কঠিন সফর শেষে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। আমরা বড় একটি টুর্নামেন্ট জিততে চেয়েছি। শেষ পর্যন্ত তা করতে পারার অনুভূতিটা অসাধারণ।’
কোহলির ভেতরে এখনো অনেক ক্রিকেট বাকি। কিন্তু বয়সের দিকে তাকিয়ে মাঝেমধ্যেই তাঁর অবসর নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। সিদ্ধান্তটি একান্তই কোহলির হলেও একদিন তো ব্যাট–প্যাড খুলে রাখতেই হবে আর সে সময়টাও সম্ভবত আলোকবর্ষ দূরত্বে নেই। গিলের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্যাপনের সময় কোহলির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাঁর অবসর নেওয়ার সময়ে ড্রেসিংরুমটা কেমন থাকবে, আরও শক্তিশালী করে সরে দাঁড়ানোর শান্তিটা পাবেন কি না? উত্তর শুনুন কোহলির মুখেই, ‘ড্রেসিংরুমে প্রতিভার ছড়াছড়ি। তারা নিজেদের খেলাটা পরের ধাপে নিয়ে যেতে চায় এবং আমরা সিনিয়ররা তাদের সাহায্য করতে পেরেও আনন্দিত। আমরা অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিই, যে কারণে ভারতের দলটা এত শক্তিশালী।’
ফাইনালে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৫১ রান তুলেছিল নিউজিল্যান্ড। তাড়া করতে নেমে ৬ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে জিতেছে ভারত। কোহলির মুখে নিউজিল্যান্ডের জন্যও প্রশংসা ঝরল, ‘বছরের পর বছর সীমিতসংখ্যক খেলোয়াড় নিয়ে তারা কী করতে পারে, সেটা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। আমাদের বিপক্ষে বড় ম্যাচে তাদের সব সময়ই পরিকল্পনা থাকে। বিশ্ব ক্রিকেটে আর কোনো দল তাদের মতো এতটা ভালোভাবে পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারে না...ফিল্ডিংয়ে তারা নির্দ্বিধায় বিশ্বসেরা।’
নিউজিল্যান্ড দলের তারকা কেইন উইলিয়ামসনকেও সান্ত্বনা দিয়েছেন কোহলি, ‘পরাজিত দলে বন্ধুকে (উইলিয়ামসন) দেখাটা কষ্টের। কিন্তু সে যখন জয়ী হয়েছিল, তখন আমাকেও পরাজিতদের দলে থাকতে হয়েছিল। তাই আমাদের মধ্যে শুধুই ভালোবাসা।’