সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যে কারণে আগুনে এত ক্ষয়ক্ষতি
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 26-02-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে (সাজেক ভ্যালি) আগুন লাগার পর টানা আড়াই ঘণ্টা ধরে জ্বলেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে পৌঁছানোর আগেই পুড়ে যায় ৩৪টি রিসোর্ট, ৩৫টি বসতবাড়ি, ২০ দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৭টি রেস্তোরাঁ।

দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই পর্যটন এলাকায় কোনো ফায়ার স্টেশন না থাকায় আগুনে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বেশি। এ ছাড়া অপরিকল্পিত রিসোর্ট-কটেজ নির্মাণ, কটেজ-রিসোর্টে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার কারণেও আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো অগ্নিমহড়া হয়নি এই পর্যটনকেন্দ্রে।

সাজেকের বাসিন্দা ও রিসোর্ট-কটেজ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সোমবার বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথমে রুইলুই ভ্যালির হেডম্যানের বাসভবনের পাশে অবস্থিত ইকো ভ্যালি রিসোর্টে আগুন লাগে। সেখানকার গ্যাসের সিলিন্ডারের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর পাশে অবকাশ রিসোর্টেও আগুন ধরে যায়। পরে একের পর এক স্থাপনায় আগুন ছড়ায়।

 

 

বেলা পৌনে একটার দিকে আগুন লাগলেও সাজেক থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দীঘিনালা ফায়ার স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে পৌঁছায় বেলা তিনটার দিকে। এর আধা ঘণ্টা পর ৫৭ কিলোমিটার দূরের খাগড়াছড়ি ফায়ার স্টেশনের গাড়ি আসে। এরপর রাঙামাটি, বান্দরবান ও মাটিরাঙ্গা ফায়ার স্টেশন থেকেও গাড়ি আসে সন্ধ্যার আগে। সব মিলিয়ে ১১টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হয়। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

তীব্র পানির সংকটের কারণে সাজেকে আগুন নেভানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পাননি বাসিন্দারা। তাই দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে দেখা ছাড়া তাঁদের আর কিছুই করার ছিল না। পর্যটনকেন্দ্রের শিবমন্দির এলাকা থেকে গির্জা পর্যন্ত প্রায় আড়াই শ মিটার এলাকায় রিসোর্ট-কটেজ, বসতঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সড়কের দুই পাশে কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। সব মিলিয়ে আগুনে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকার মতো বলে দাবি করেন রিসোর্টের মালিকেরা।

সাজেকে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পর্যটনকেন্দ্রটিতে ১২৬টির মতো রিসোর্ট গড়ে উঠলেও কোনোটিতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার) নেই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো অগ্নিমহড়াও হয়নি এখানে। আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জরুরি পরামর্শও কখনো তাঁরা পাননি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। এ কারণে এই কেন্দ্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকবার আগুন লেগেছে। গত ২০১৭, ২০২১ ও ২০২৩ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সাজেকে।

আগুনে পুড়ে বিরানভূমিতে পরিনত হয়েছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক রুইলুই পর্যটন কেন্দ্র।গতকাল দুপুরে তোলা

আগুনে পুড়ে বিরানভূমিতে পরিনত হয়েছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক রুইলুই পর্যটন কেন্দ্র।গতকাল দুপুরে 

 

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, সাজেক ভ্যালিতে এমনিতেই পানির সংকট। এরপর ভয়াবহ আগুন নেভানো স্থানীয়দের পক্ষে কোনোভাবে সম্ভব নয়। সব পুড়ে যাওয়ার পর দূর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসেছেন। রুইলুই ভ্যালিতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।

পর্যটনকেন্দ্রে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার কথা স্বীকার করে সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, তাঁদের সমিতির পক্ষ থেকে কয়েকটি পানির মোটর কেনা হয়েছিল আগুন নেভানোর জন্য। আগুন নেভাতে সেসব ব্যবহার করা যায়নি, উল্টো কিছু যন্ত্র পুড়ে গেছে।

সাজেক ভ্যালির রুইলুই মৌজার হেডম্যান লাল থাংয়া লুসাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন জরুরি হয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলে বহু রিসোর্ট-কটেজ ও বাড়িঘর রক্ষা করা যেত। এ ছাড়া ঘনবসতির কারণেও দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে পরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি নির্মাণে অনুরোধ জানানো হবে।


 

শেয়ার করুন