কৃষকের ৮ টাকার লেবু কয়েক হাত বদলের পর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 03-03-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

দেশের উত্তরাঞ্চলে সবজির অন্যতম বড় পাইকারি মোকাম বগুড়ার মহাস্থান হাট। পাইকারি এ বাজারে আজ সোমবার বাগানের বড় আকারের একটি লেবু বিক্রি করে চাষি দাম পেয়েছেন ৮ টাকা। ব্যাপারীর একহাত ঘুরে এই লেবু আড়তদারের গুদামে পৌঁছার পর দাম বেড়ে খরচ পড়ে ১০ টাকা। আড়ত থেকে পাইকারদের হাত ঘুরে খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানের পসরা পর্যন্ত যেতে এই লেবুর দাম বেড়ে হয় ১২ থেকে ১৩ টাকা।

পাঁচ হাত বদলের পর ১২ কিলোমিটার দূরে বগুড়ার শহরের ফতেহ আলী ও রাজাবাজারে এই লেবু খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে প্রতিটি ২০ টাকা দরে। সেই হিসাবে প্রতিটি লেবুতে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ করছেন ১২ টাকা।

বগুড়ার মহাস্থান ও রাজাবাজারে লেবু বিক্রি করতে আসা কৃষক, ব্যাপারী, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে লেবুর উৎপাদক পর্যায়ে থেকে শুরু করে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত ধাপে ধাপে দাম বৃদ্ধির এই চিত্র পাওয়া গেছে।

মহাস্থান হাটে আজ সকালে গিয়ে দেখা যায়, বাগান থেকে লেবু তুলে বস্তায় ভরে হাটে বিক্রি করতে এসেছেন চাষিরা। ব্যাপারীরা চাষিদের কাছ থেকে দরদাম করে এই লেবু কিনছেন।

 

হাটে আসা পাইকার রিফাত হাসান বলেন, স্বাভাবিক সময়ে হাটে ১ লাখ লেবুর সরবরাহ হয়। রোজা উপলক্ষে লেবুর চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু এখন লেবুর মৌসুম না হওয়ায় সরবরাহ আগের মতোই আছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় লেবুর দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী।

সদর উপজেলার কাজী নুরইল গ্রামের কৃষক ও লেবুচাষি আসহানুল কবির বলেন, তিনি এ বছর ৩ হাজার ৫০০ গাছের লেবুবাগান গড়েছেন। এক মাস পর বাগানের লেবু পুরোদমে বিক্রি করা সম্ভব হবে। এবার লেবুর ফলন খুব কম। ইতিমধ্যে বাগানের কিছু লেবু বাজারে বিক্রিও করেছেন। এবার বাগান থেকে প্রতিটি লেবু বিক্রি করে গড়ে আট টাকা দাম পেয়েছেন।

নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা গ্রামের লেবুচাষি শাহনাজ বেগম বলেন, রোজার আগে বাগানের লেবু বিক্রি করে দাম পেয়েছেন গড়ে দুই থেকে আড়াই টাকা। এখন বাগানে নতুন করে ফুল এসেছে। দেড় মাস পর বাগান থেকে লেবু বিক্রি করা শুরু হবে। এখন বাজার থেকে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে লেবু কিনতে হচ্ছে।

 

মহাস্থান হাটের আড়তদার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চাষি ও পাইকারদের হাত ঘুরে আড়ত পর্যন্ত আসার পর একটি লেবুর খরচ পড়ে ১২ টাকা। আড়ত থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই লেবু কিনে নিয়ে আরও ২ থেকে ৩ টাকা লাভ করেন। আরও এক হাত বদলের পর খুচরা ব্যবসায়ীরা এই লেবু প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করছেন।

প্রতিটি লেবুতে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ করছেন ১২ টাকা। আজ সোমবার বিকেলে বগুড়া সার্কিট হাউসের সামনের সড়কে

প্রতিটি লেবুতে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ করছেন ১২ টাকা। আজ সোমবার বিকেলে বগুড়া সার্কিট হাউসের সামনের সড়কে

বগুড়ার রাজাবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, রোজার মাসে বগুড়া শহরে প্রতিদিন গড়ে লেবুর চাহিদা ৫ লাখ। মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ জোগান আসে নাটোর থেকে। ২৫ শতাংশ লেবু আসে টাঙ্গাইল থেকে। আর চাহিদার ৫ শতাংশ লেবু বগুড়ায় চাষাবাদ হয়।

রাজাবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী বাবু মিঞা বলেন, সোমবার পাইকারি পর্যায়ে প্রতিটি বড় লেবু ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে এই লেবু বিক্রি হয়েছে প্রতিটি ২০ টাকা।

কলা ও তরমুজের দাম দ্বিগুণ

লেবুর পিছু পিছু দাম বেড়ে দ্বিগুণ তরমুজ ও কলার। মহাস্থানহাটে সোমবার এক কেজি তরমুজ বিক্রি হয়েছে আকার ভেদে ২৫ ও ৩০ টাকায়। একহাত বদলের পর বগুড়া শহরে এই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। রোজার আগে এই তরমুজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে। অন্যদিকে রোজার আগে বড় আকারের অনুপম কলা বিক্রি হয়েছে প্রতিটি সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ টাকায়। সেই কলা এখন বিক্রি হচ্ছে আকার ভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকায়।

শসা ও বেগুনের দামও বাড়তি

রোজা শুরুর আগে বগুড়ার মহাস্থান হাটে পাইকারি পর্যায়ে যে শসার দাম ২০ টাকা ছিল, সোমবার তা ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১২ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরে খুচরা পর্যায়ে সেই শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

একইভাবে পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকার বেগুন ও করলা সোমবার ৪৫ টাকা বিক্রি হয়েছে, খুচরা বাজারে যা দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ের ৩৫ টাকা কেজি দরের কাঁচা মরিচ খুচরা পর্যায়ে দ্বিগুণ দমে বিক্রি হয়েছে।

ফতেহ আলী বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, রোজার আগে প্রতি কেজি শসা ও কাঁচা মরিচ ৩০ টাকা, গোল বেগুন ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এখন প্রতি কেজি শসা ৬০, কাঁচা মরিচ ৭০ ও গোল বেগুন ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।


 

শেয়ার করুন