গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা ঠেকাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মুসল্লিরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় মাওলানা সাদ অনুসারীদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন তাঁরা। এতে আহত হন সাদ অনুসারীদের দুই মুসল্লি।
পুলিশ ও তাবলীগ জামাত সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা পালন করেন বাংলাদেশি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। তাঁদের দেখাদেখি ইজতেমা মাঠে ২০ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের জোড় পালনের ঘোষণা দেন মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীরা। কিন্তু মাওলনা জুবায়ের অনুসারীরা মাওলানা সাদ অনুসারীদের ইজতেমা মাঠে জোড় পালন করতে দেবেন না। পাশাপাশি সরকার থেকেও অনুমতি নেই। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে বিরাজ করছিল উত্তেজনা।
এর মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার মাওলানা সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করবেন, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে বা মাওলানা সাদ অনুসারীদের ইজতেমা মাঠে জোড় ঠেকাতে বেলা একটার দিকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন জুবায়ের অনুসারীরা। এ সময় মাওলানা সাদ অনুসারীদের একটি গাড়ি রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা সেটিতে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এ সময় সাদ অনুসারীদের দুই মুসল্লি আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
সাদ অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. সায়েম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইজতেমা মাঠে জোড় পালনের বিষয়ে আজ সকালে আমাদের চারজন প্রতিনিধি গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনের সঙ্গে দেখা করেন। জেলা প্রশাসক গাজীপুর মহানগর পুলিশের দক্ষিণের উপকমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। এর মধ্যেই আমরা উপকমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে আগে থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন জুবায়ের অনুসারীরা। এ সময় মন্নুগেট এলাকায় আমাদের গাড়িটি পৌঁছাতেই লাঠিসোঁটা নিয়ে জুবায়ের অনুসারীরা আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এ সময় আমাদের দুই সাথি মো. বশির ও আতাউর আহত হন। পাশাপাশি আমাদের গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।’
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের শীর্ষ পর্যায়ের মুরব্বি মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাদ অনুসারীরা কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। গতকাল (বুধবার) রাতেও তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন, আজ ফজরের নামাজের পর তাঁরা ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করবেন। এটা শুনে আমাদের অনেক সমর্থক, মাদ্রাসার ছাত্র তাঁদের ঠেকাতে রাস্তায় নামেন। এ সময় সাদ অনুসারীদের একটি গাড়ি ইজতেমা মাঠের দিকে যেতে চায়। পুলিশ তাদের ঘুরিয়ে দেয়। কিন্তু তারপরও তারা গাড়ি নিয়ে আমাদের সাধারণ ছাত্রদের ওপর দিয়ে চলে যেতে চায়। এ সময় আত্মরক্ষার্থে ছাত্ররা তাদের বাধা দেয়।’
এদিকে সড়ক অবরোধের কারণে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বন্ধ থাকে মহাসড়কের যান চলাচল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রী ও পথচারীরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপকমিশনার (টঙ্গী জোন) এন এম নাসিরুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইজতেমা মাঠে জোড় পালনের বিষয়ে সাদ অনুসারীদের এখনো সরকারিভাবে অনুমতি নেই। তাঁদের একটি দল এ বিষয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। আমি তাদের সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে বলি। এর মধ্যেই সাদ অনুসারীরা মাঠে প্রবেশ করছেন—এমন খবরে জুবায়ের অনুসারীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তাঁদের (সাদ অনুসারী) গাড়িটি বেরিয়ে যাওয়ার সময় অবরোধের মুখে পড়ে। এ সময় একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালান অবরোধকারীরা। অবরোধে বেশ কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে আমরা গিয়ে বুঝিয়ে তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিই। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’
তাবলিগ জামাত দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী, অন্য ভাগে শুরায়ী নেজাম বা বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা। তাঁদের মধ্যে বিবদমান বিরোধে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে আলাদাভাবে। প্রথম পর্বে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা করবেন। চার দিন বিরতি দিয়ে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা করবেন সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। কিন্তু এর মধ্যেই জোড় পালনকে কেন্দ্র করে হামলা ও ভাঙচুরের এ ঘটনা ঘটে।