ছয় শতাধিক কমলার গাছ আছে সুদত্ত চাকমার বাগানে। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে ফলন হয়েছে মাত্র ১৩০টি গাছে। এসব গাছের কমলা বিক্রি করে এরই মধ্যে ১৭ লাখ টাকা আয় করেছেন সুদত্ত চাকমা। কমলাচাষি সুদত্ত চাকমা রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার সদর ইউনিয়নের তৈ-চাকমা মৌজার হেডম্যান (মৌজাপ্রধান)। তাঁর বাগানটি অবস্থিত ওই এলাকায় রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক ঘেঁষে ১৭ মাইলের দোসরপাড়ায়।
সুদত্ত চাকমার মতো কমলা চাষ করেছেন নানিয়ারচর উপজেলার অর্ধশতাধিক চাষি। সুস্বাদু, সুমিষ্ট ও রসে ভরপুর হওয়ায় সারা দেশে নানিয়ারচরের কমলার খ্যাতি রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের চাষিদের উৎপাদন করা কমলা সরবরাহ হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে কেবল নানিয়ারচর নয়, এর বাইরেও জেলার বিভিন্ন স্থানে কমলার চাষাবাদ রয়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, সাধারণত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসকে কমলার মৌসুম ধরা হয়। সেই হিসেবে এখন কমলা বিক্রি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
কৃষি কর্মকর্তাদের হিসাবে, চলতি বছর রাঙামাটি জেলার ২ হাজার ১০০ একর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। এসব বাগান থেকে উৎপাদিত কমলার বাজারমূল্য প্রায় দুই শ কোটি টাকা। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে পাহাড়ে অপার সম্ভাবনা রয়েছে কমলা চাষের।
নানিয়ারচর উপজেলায় এবার কমলার চাষ হয়েছে প্রায় ৬০০ একর জমিতে। কৃষকেরা জানিয়েছেন, উপজেলাটিতে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কমলার ব্যাপক ফলন হচ্ছে। আগে জোড়া হিসেবে চাষিরা কমলা বিক্রি করতেন, এখন কেজিতে বিক্রি হয়। ফলে চাষিরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। খুচরা বাজারে আকারভেদে স্থানীয় কমলা ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এবার।
নানিয়ারচরের তৈ-চাকমা মৌজার সুদত্ত চাকমা জানান, ২০২০ সালে ৪ একর জমিতে কমলা চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথমে মাত্র ১৫০টি কমলার চারা রোপণ করেন। ২০২১ সালে আরও ২০০ চারা রোপণ করা হয়। পরবর্তী বছর ৩০০ কমলার চারা রোপণ করেন। সুদত্ত চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার ১৩০টি গাছের ফলন থেকেই ১৭ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছি। আশা করি, আগামী মৌসুমে আরও বেশি ফলন ও আয় হবে।’
বাগান থেকে কমলা সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য রাঙামাটি শহরে আনা হয়েছে। সম্প্রতি শহরের সমতা ঘাট এলাকায়
নানিয়ারচর ইউনিয়নের যাদুখাছড়া গ্রামে সবিনয় চাকমার রয়েছে তিন একরের কমলাবাগান। ২০১৮ সালে এ বাগান করেন তিনি। বাগানে তিন শতাধিক কমলার গাছ রয়েছে। সবিনয় চাকমা বলেন, তিন বছর ধরে তাঁর বাগানে কমলার ফলন হচ্ছে। গত বছর ছয় লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। এ বছর বিক্রি করেছেন ১২ লাখ টাকার কমলা। একই ইউনিয়নে সুমন্ত চাকমা, উত্তম চাকমাসহ ১০ থেকে ১৫ জন চাষির সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই চলতি মৌসুমে কমলা বিক্রি করে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় করেছেন বলে প্রথম আলোকে জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় কমলার ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয়। এর বাইরে বর্তমানে বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, লংগদু, জুরাছড়ি উপজেলায় কমলার চাষ করা হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, রাঙামাটিতে চলতি মৌসুমে কমলার উৎপাদন হয়েছে ৮৫ লাখ কেজি। গড়ে প্রতি কেজি ২৪০ টাকা করে বিক্রি হলেও অন্তত ২০০ কোটি আয় হবে চাষিদের।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মুনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ে একসময় ঘন বন ছিল। এখন ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। যার কারণে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে কমলার ফলনে প্রভাব পড়েছে। অতিরিক্ত উষ্ণতায় কমলার ভালো ফলন হয় না। এরপরও রাঙামাটির কিছু কিছু এলাকায় ভালো ফলন হচ্ছে। নানিয়ারচরে কমলার ফলন সবচেয়ে ভালো। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হিসাব করে দেখেছি, চলতি মৌসুমে কমলা বিক্রি করে চাষিদের ন্যূনতম ২১০ কোটি টাকা আয় হওয়ার কথা।’