সিলেট নগরের বালুচর এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে ইফতারের আয়োজন করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মী, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী, উন্নয়ন সংগঠক, আলেম-ওলামা, ক্রীড়া-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠকসহ নানা শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। তবে স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এই আয়োজনে দেখা যায়নি।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে আরিফুল হক চৌধুরী দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু)।
স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, সিলেটে বিএনপির রাজনীতি এখন দুটি বলয়ে বিভক্ত। একটির নেতৃত্বে আছেন আরিফুল হক চৌধুরী। অন্যটির নেতৃত্বে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ (নগর ও সদর উপজেলা) আসনে দলীয় প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর। স্থানীয় রাজনীতিতে মুক্তাদীর ও আরিফুল একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত।
গতকাল আরিফুলের দোয়া ও ইফতার মাহফিলে হাজারো মানুষ উপস্থিত থাকলেও খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর ছিলেন না। তিনি গতকাল মহানগরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি আয়োজিত গণ ইফতার কর্মসূচিতে যোগ দেন। এ ছাড়া আরিফুলের ইফতার আয়োজনে অংশ নিতে দেখা যায়নি সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী এবং সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীকে।
এ বিষয়ে আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তাঁদের দাওয়াত করেছি। হয়তো তাঁরা আরও জরুরি কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন। তাই আসেননি।’
আরিফুলের ইফতার মাহফিলে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ এই চার নেতার সঙ্গে। এর মধ্যে এমরান আহমদ চৌধুরী কল ধরেননি। আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও ইমদাদ হোসেন চৌধুরী জানান, আগে থেকেই তাঁদের নিজস্ব কিছু ইফতার কর্মসূচি নির্ধারিত ছিল। তাই তাঁরা সাবেক মেয়রের কর্মসূচিতে যেতে পারেননি। এখানে বলয়কেন্দ্রিক কোনো রাজনীতি ছিল না বলে তাঁদের দাবি।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে আরিফুল হক চৌধুরী দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির অন্তত পাঁচজন নেতা বলেন, আরিফুলের ইফতার মাহফিলে স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত না থাকার বিষয়টি সবার নজরে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বলয়কেন্দ্রিক রাজনীতির কারণেই তাঁরা কর্মসূচিতে যোগ দেননি। এ ঘটনায় ভবিষ্যতে সিলেটে বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতার বলয়কেন্দ্রিক বিভেদ ও দূরত্ব আরও বাড়বে বলে তাঁরা মনে করেন।
স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনা করে দোয়া ও ইফতার মাহফিল আয়োজনের আড়ালে আরিফুল হক চৌধুরী গতকাল মূলত নিজের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সফল শোডাউন করেন। দলের বাইরেও যে তাঁর একটি ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতা আছে, সেটা দেখানোও ছিল একটা কৌশল। এ কৌশলের অংশ হিসেবেই ইফতার মাহফিলে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে অনেকেই ইফতারে অংশ নেন।
আরিফুল হক চৌধুরীর ইফতার মাহফিলে নানা শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন
এদিকে সিলেট বিএনপির শীর্ষ চার নেতা ইফতার মাহফিলে উপস্থিত না হলেও আরিফুল বলয়ের প্রায় সবাই কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন। যাঁরা ইফতার মাহফিলে যোগ দেন, তাঁদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম, সহক্ষুদ্রঋণ ও কুটিরশিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।