ট্রাম্পের শুল্ক কেন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 02-02-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপের হুমকি অবশেষে বাস্তবরূপ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গতকাল শনিবার এ-সংক্রান্ত তিনটি পৃথক নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প সই করেছেন। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের এই আদেশ আগামী মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে।

ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে চীনা পণ্যে বর্তমান হারের চেয়ে বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি।

ট্রাম্প আগে থেকেই গর্ব করে বলে আসছেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এই শুল্ক আরোপের বিষয়টি মার্কিন অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হবে।

 

 

তবে ট্রাম্পের এই কথার সঙ্গে একমত নন বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ।

অনেক অর্থনীতিবিদ ইতিমধ্যেই বলেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের এই পদক্ষেপ মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে। এমনকি তা মার্কিন কর্মী-শ্রমিকদের ক্ষতি করবে। ট্রাম্পের শুল্কের জন্য খোদ মার্কিন ভোক্তাদেরই মাশুল গুনতে হবে।

শুল্ক আরোপের বিষয়ে ট্রাম্পের ঘোষণার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জোসেফ স্টিগলিৎজ বলেন, কার্যত সব অর্থনীতিবিদ মনে করেন, শুল্কের প্রভাব আমেরিকা তো বটেই, বিশ্বের জন্যও খুব খারাপ হবে।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে প্রায় নিশ্চিতভাবেই মুদ্রাস্ফীতি হবে বলে মত দেন অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী জোসেফ স্টিগলিৎজ।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোছবি: এএফপি

 

গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। অভিষেকের দিনই তিনি ১ ফেব্রুয়ারি কানাডা ও মেক্সিকো থেকে পণ্য আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার হুমকি দিয়েছিলেন। কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেছিলেন, এই দুই দেশ বিপুলসংখ্যক লোককে (অবৈধ অভিবাসী) যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার সুযোগ দিচ্ছে। এ ছাড়া দেশ দুটি যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইল নামের ভয়ংকর মাদক ঢুকতে দিচ্ছে।

একই সঙ্গে চীনকেও হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বলেছিলেন, চীন যদি ফেন্টানাইলের চালান যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বন্ধ না করে, তাহলে তিনি চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।

এ ছাড়া ট্রাম্প তাঁর দীর্ঘদিনের পুরোনো হুমকিও দিয়েছিলেন। আর তা হলো, তিনি চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।

বিল ক্লিনটন মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তাঁর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন জোসেফ স্টিগলিৎজ। তিনি আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি অসম্ভব কিছু নয়। আর কোনো সরকার পাল্টা ব্যবস্থা নিতে না চাইলেও তারা নিজেদের জনগণের দিক থেকে চাপে পড়বে। নিজ নিজ দেশের রাজনীতিই সরকারগুলোকে কিছু করতে বলবে।

জোসেফ স্টিগলিৎজের আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, তা ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পরপরই স্পষ্ট হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা, মেক্সিকো ও চীন।

গতকাল কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ১৫৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে তাঁর সরকার। মঙ্গলবার থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর এই শুল্ক কার্যকর হবে। আর বাকি ১২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কার্যকর হবে ২১ দিনের মধ্যে।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেনবাউম

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেনবাউমছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা গতকাল দেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেনবাউম। তিনি বলেন, শুল্ক আরোপসহ নিজস্ব অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে মেক্সিকো এই পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।

এ ছাড়া মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মেক্সিকো সরকারের মৈত্রী রয়েছে বলে ওয়াশিংটনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন ক্লাউদিয়া শেনবাউম। তিনি এই অভিযোগকে ‘অপবাদ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, শুল্ক আরোপ, উত্তেজনা ও পাল্টা ব্যবস্থা, বাণিজ্যযুদ্ধ সম্ভবত অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পরিকল্পিত বিনিয়োগ কমিয়ে দেবে।

অর্থনীতিবিদেরা বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে আঘাত হানবে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তন প্রতিষ্ঠান পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্কাস নোল্যান্ড বলেন, এই শুল্ক আরোপের প্রভাব মার্কিন অর্থনীতির ওপর পড়বে। পদক্ষেপটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রাখবে। আর অন্য দেশগুলো পাল্টা ব্যবস্থা নিলে এই প্রভাব আরও বাজে রূপ নেবে।

ট্রাম্প জোর দিয়ে বলে আসছেন, তাঁর আগ্রাসী বাণিজ্যনীতি আমেরিকানদের জন্য সর্বাত্মক লাভজনক হবে।

চীনা পণ্যের ওপরও বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

চীনা পণ্যের ওপরও বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পছবি: রয়টার্স

ট্রাম্পের অভিষেকের দিনই হোয়াইট হাউস তাঁর ‘আমেরিকা প্রথম বাণিজ্যনীতি’ জারি করে।

স্মারক প্রকাশ করে। স্মারকে বলা হয়, তিনি একটি শক্তিশালী ও পুনরুজ্জীবিত বাণিজ্যনীতি প্রতিষ্ঠা করছেন। এই নীতি বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতাকে বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও প্রযুক্তিগত সুবিধা বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সুরক্ষা দেবে। সর্বোপরি আমেরিকান কর্মী, উৎপাদনকারী, কৃষক, র‍্যাঞ্চার, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেবে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থার ঘোষণা কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের

 

কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ, বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা

কিন্তু অনেক অর্থনীতিবিদ ইতিমধ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ট্রাম্পের শুল্ক অনেক মার্কিন উৎপাদনকারী, কৃষক ও কর্মী-শ্রমিকদের ক্ষতি করবে।

কানাডার বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জিম স্ট্যানফোর্ড। তিনি দীর্ঘদিন কানাডার অটো (গাড়ি) শ্রমিক ইউনিয়নের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ছিলেন। তিনি আগেই সতর্ক করে বলেন, কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার অটো শিল্পের ক্ষতি করবে।

শেয়ার করুন