ট্রাম্প শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের জন্যও হুমকি
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 30-10-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারেন, এই ভেবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্রদের ঘুম প্রায় হারাম হওয়ার জোগাড়। তারা এই ভেবে ভীত, ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত বৈদেশিক নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। সবচেয়ে লাভ হবে রাশিয়ার একনায়ক ভ্লাদিমির পুতিনের। এই দুজনের চলতি সখ্য রাতারাতি কৌশলগত অংশীদারত্বে পরিণত হতে পারে, যার ফলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ন্যাটোভিত্তিক যে আন্ত-আটলান্টিক নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা হয় ভেঙে যাবে, নয়তো দুর্বল হবে।

ইউরোপের দক্ষিণমুখী মোড়

ট্রাম্প জিতলে সবচেয়ে উৎসাহী হবেন ইউরোপের সেসব রাজনীতিক, যাঁরা নিজ দেশে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালিসহ ডজনখানেক ইউরোপীয় দেশে অভিবাসন সংকটকে কেন্দ্র করে দক্ষিণপন্থীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এমনকি জার্মানিতেও দক্ষিণপন্থীরা অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। এদের প্রত্যেকের কাছে ট্রাম্প যেন ঈশ্বরপ্রদত্ত একটি উপহার।

 

ট্রাম্প দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হলে ইউরোপের দক্ষিণমুখী মোড় আরও বেগবান হবে, সে আশঙ্কা ব্যক্ত করে সাংবাদিক ও লেখক ফরিদ জাকারিয়া সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, এত দিন বিশ্ব মার্কিন গণতন্ত্রকে ‘আশার আলোকবর্তিকা’ ভেবে এসেছে। সেই আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যদি আইনকানুনের থোড়াই তোয়াক্কা করেন, চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের ধার না ধারেন, তাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব নেতা স্বেচ্ছাচারী বা কর্তৃত্ববাদী হতে চান, তাঁরা উৎসাহী হবেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যু

আশু ভয় ইউক্রেন নিয়ে। ট্রাম্প যে পুতিনের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চলগুলো তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্মত হবেন, তা ভাবার কারণ রয়েছে। কিছুদিন আগেও তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করা ইউক্রেনের ঠিক হয়নি। অথচ এ কথা সবার জানা, যুদ্ধ ইউক্রেন নয়, রাশিয়াই শুরু করেছিল। ট্রাম্পের এমন মন্তব্য অজ্ঞতাপ্রসূত নয়, রাশিয়ার প্রতি পরিকল্পিত পক্ষপাতদুষ্টতা। ট্রাম্প এমন কথাও বলেছেন, ইউক্রেন নিয়ে পুতিন ‘তাঁর যেমন খুশি তাই করতে পারে।’

ফিলিস্তিন প্রশ্নে ট্রাম্পের মনোভাব মোটেই গোপন কোনো ব্যাপার নয়। ঠিক যেমন গোপন ব্যাপার নয় ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব। গত সপ্তাহে তাঁদের মধ্যে টেলিফোনে কথা হয়।

তিনি ঘোষণা করেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের এক দিনের মধ্যে এই যুদ্ধের সমাধান করবেন। কীভাবে, তা অবশ্য খোলাসা করে বলেননি, তবে তার বিস্তর ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইউক্রেনকে বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে, তিনি নিশ্চিতভাবেই অপছন্দ করেন। প্রথম দফা ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি জেলেনস্কিকে বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘ময়লা’ খুঁজে বের করতে বলেছিলেন। জেলেনস্কি তা করেননি বলেই উল্টো তিনি কংগ্রেসে অভিশংসিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হলে তিনি সুযোগ পেয়ে বদলা নেবেন।

 

মধ্যপ্রাচ্য

এ কথা ভাবার কারণ রয়েছে যে নির্বাচিত হলে ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রশাসনে মার্কিন প্রশ্রয়ে ইসরায়েলি আগ্রাসন আরও বেপরোয়া হবে। তাঁর প্রথম দফায় ট্রাম্প আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর সময় ওয়াশিংটনে পিএলওর দপ্তর বন্ধ করে দেওয়া হয় ও জাতিসংঘের ফিলিস্তিন ত্রাণ সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) চাঁদা আটকে দেওয়া হয়।

প্রথম দফায় নির্বাচিত হয়ে ট্রাম্পের প্রথম বড় সিদ্ধান্ত ছিল তথাকথিত ‘মুসলিম ব্যান’। সন্ত্রাসী অভিযোগে তিনি সাতটি মুসলিম দেশের মানুষের যুক্তরাষ্ট্র আগমন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।

ফলে ফিলিস্তিন প্রশ্নে ট্রাম্পের মনোভাব মোটেই গোপন কোনো ব্যাপার নয়। ঠিক যেমন গোপন ব্যাপার নয় ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব। গত সপ্তাহে তাঁদের মধ্যে টেলিফোনে কথা হয়। ট্রাম্প তাঁকে জানান, ‘মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রয়োজনে তোমার যা খুশি করতে পারো, আমার কোনো আপত্তি নেই।’ এর দুই দিন পরেই ইসরায়েল ইরানের একাধিক সামরিক স্থাপনার ওপর হামলা চালায়।

মিশিগানে যেসব আরব ও মুসলিম কমলা হ্যারিসকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তাঁদের এই টেলিফোন বার্তাটি মাথায় রাখতে বলি। প্রথম দফায় নির্বাচিত হয়ে ট্রাম্পের প্রথম বড় সিদ্ধান্ত ছিল তথাকথিত ‘মুসলিম ব্যান’। সন্ত্রাসী অভিযোগে তিনি সাতটি মুসলিম দেশের মানুষের যুক্তরাষ্ট্র আগমন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। হ্যামট্রমিক শহরের মুসলিম মেয়র সম্প্রতি ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছেন, তিনি এ ঘোষণা মাথায় রাখলে ভালো করবেন। উল্লেখযোগ্য, এই একই শহরের সিটি কাউন্সিলে বাংলাদেশি সদস্য মোহাম্মাদ হাসান সমর্থন জানিয়েছেন কমলা হ্যারিসকে এবং তাঁর পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


 

শেয়ার করুন