যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার-এ-লাগো গলফ মাঠের কাছে তাঁকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আটক সন্দেহভাজনের নাম ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো। সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসির মার্কিন সহযোগী প্রতিষ্ঠান সিবিএস নিউজও বলেছে, সন্দেহভাজন বন্দুকধারীর নাম রায়ান ওয়েসলি রুথ।
এ রায়ান ওয়েসলি রুথ আসলে কে, তিনি কী করেন, তাঁর অপরাধকর্মে জড়িত থাকার ইতিহাস আছে কি? এমন বেশ কিছু প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিবিসির সত্য অনুসন্ধানকারী দল বিবিসি ভ্যারিফাইও রায়ান ওয়েসলি রুথের বিস্তারিত পরিচয় জানার চেষ্টা করেছে। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই নামের প্রোফাইল খুঁজে পেয়েছে। সেগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে, রায়ান নামের ওই ব্যক্তির বয়স ৫০-এর কোঠার শেষের দিকে। ইউক্রেনে গিয়ে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য রায়ান বিদেশি যোদ্ধাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে বিবিসি ভেরিফাই।
রায়ানের সামরিক বাহিনীতে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই। ২০২৩ সালে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পরপরই তিনি ইউক্রেনে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর যেসব আফগান যোদ্ধা দেশ থেকে পালিয়েছিল তাঁদের খুঁজে বের করে ইউক্রেন যুদ্ধে কাজে লাগানো।
গত জুলাই মাসে রায়ান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘সৈন্যরা, দয়া করে আমাকে ফোন দেবেন না। ইউক্রেন যাতে আফগান যোদ্ধাদের গ্রহণ করে, সে জন্য আমরা এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, সামনের মাসগুলোতে নিশ্চয়ই আমরা এর কোনো না কোনো উত্তর পাব। দয়া করে ধৈর্য ধরুন।’
এর আগে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রায়ানের অপরাধকর্মে জড়িত থাকার ইতিহাস আছে। সিবিএস সূত্রের তথ্যমতে, গোপনে অস্ত্র বহনসহ অসংখ্য গুরুতর অপরাধের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন এবং তাঁকে দোষীও সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লিংকডইন প্রোফাইলে রায়ান নিজেকে সৃজনশীল প্রকল্প এবং যান্ত্রিক কাজের প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে। তিনি ক্যাম্প বক্স হনুলুলু নামে একটি শেড তৈরির কোম্পানি চালান। রায়ান নর্থ ক্যারোলাইনা অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পাম বিচ এলাকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মালিকানাধীন গলফ মাঠের কাছে গুলির ঘটনার পর অস্ত্রসহ রায়ানকে আটক করা হয়। গতকাল রোববারের এ ঘটনার সময় ওই মাঠেই ছিলেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের (এফইসি) তথ্যমতে, ২০১৯ সালের পর থেকে রায়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য ১৯ বার অনুদান দিয়েছেন। সব মিলিয়ে তাঁর অনুদানের পরিমাণ ছিল ১৪০ ডলার।
রায়ান যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে হাওয়াইয়ের সাবেক প্রতিনিধি টুলসি গ্যাবার্ডের জন্যও অনুদান দিয়েছিলেন। সাবেক ডেমোক্র্যাট গ্যাবার্ড এখন ট্রাম্পের সমর্থক।
যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প। রোববারের গুলির ঘটনার পর তাঁর প্রচারশিবির থেকে জানানো হয়েছিল, ট্রাম্প যেখানে অবস্থান করছিলেন, তাঁর কাছাকাছি গুলি চালানো হয়েছে। তিনি নিরাপদে আছেন। আপাতত এর বেশি কিছু জানানো যাচ্ছে না।
এর আগে গত ১৩ জুলাই পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে এক নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা করার সময় ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল। সে সময় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। গুলিতে কানে আঘাত পেয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই ঘটনার পর সিক্রেট সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে বড় সমালোচনা দেখা দিয়েছিল। এর জেরে পদত্যাগ করতে হয়েছিল বাহিনীর প্রধানকে। এ ছাড়া অন্তত পাঁচ সদস্যকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।