‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানোর পর ভারত এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ (ঠেলে পাঠানো) করেছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এসব ব্যক্তি ‘অবৈধভাবে’ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করছিলেন।
এ ছাড়া আরও দুই হাজার ব্যক্তিকে ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় রাখা হয়েছে। ভারত দাবি করছে, এসব মানুষ নাকি ধরপাকড় ও হাজত বাস এড়াতে নিজে থেকে বাংলাদেশে চলে যেতে চাইছেন।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর ৭ মে ভারত পাকিস্তানে হামলা চালায়। ১০ মে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। সেই থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী কথিত ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ ধরতে ধরপাকড় অভিযান শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্য সরকারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, অবৈধভাবে যাঁরা বসবাস করছেন, সেই বিদেশিদের চিহ্নিত করে যেন দ্রুত ফেরত পাঠানো হয়। সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, এই দুই হাজার ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ সেই অভিযানেরই অংশ।
উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তবর্তী রাজ্য ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসাম ছাড়াও বিদেশি বাছাই অভিযান বেশি চলছে গুজরাট, হরিয়াণা, দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানে। সবার আগে সবচেয়ে বেশি ‘অবৈধ’ বসবাসকারী ফেরত পাঠায় গুজরাট। ঠেলে পাঠানো দুই হাজার ব্যক্তির মধ্যে অর্ধেক ওই রাজ্যের। যাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং যাঁরা সীমান্তে অবস্থান করছেন, সবাইকে ‘বাংলাদেশি’ বলে দাবি করছে ভারত।
অধিকাংশ রাজ্য কেন্দ্রীয় নির্দেশ পালন করছে বলে সরকারি সূত্র জানালেও ঘটনা হলো, যেসব রাজ্য থেকে অবৈধভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ‘বাংলাদেশি’ বলে জবরদস্তি ফেরত পাঠানো হচ্ছে, মেঘালয় ছাড়া সেগুলোর প্রতিটিই বিজেপিশাসিত রাজ্য। মেঘালয়ে সরকারের সমর্থক ও শরিক বিজেপি।
সরকারি সূত্রের বরাতে ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘অবৈধ অভিবাসী’ সন্দেহে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সরকারি খরচে উড়েজাহাজ বা ট্রেনে করে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাঁদের তুলে দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে। বিভিন্ন রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় তাঁদের থাকার জন্য অস্থায়ী আস্তানাও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে তাঁদের খাদ্য-পানীয় দেওয়া হয়। প্রয়োজনে দেওয়া হয় বাংলাদেশি টাকাও। তারপর সময় ও সুযোগ বুঝে তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
ওই প্রতিবেদককে এক সরকারি কর্তা বলেছেন, মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরা দিয়ে বাংলাদেশে বেশি ‘পুশ ইন’ করা হচ্ছে। কারণ, ওই রাজ্যগুলো দিয়ে ঠেলে পাঠানো ভৌগোলিক কারণে সহজতর। পশ্চিমবঙ্গে সেই সুবিধা নেই। এ ছাড়া ‘অবৈধ অভিবাসী’দের ঠেলে পাঠানোর সময় নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতির ওপরেও নজর রাখা হয়।
সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ‘অবৈধ অভিবাসী’দের অনেকেই নিজে থেকেই বাংলাদেশে ফিরতে আগ্রহী। অন্তত দুই হাজার ব্যক্তি নিজে থেকে চলে যেতে চাইছেন। তাঁরা বুঝেছেন, ভারতের মনোভাব অত্যন্ত কড়া। অযথা ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই। ধরা পড়লে হাজত বাস করতে হবে।
ওই সরকারি সূত্রের দাবি, এসব মানুষের সবাই দরিদ্র। বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক। অনেকেই অনেক বছর ধরে নানা রকম কাজ করে রোজগার করছেন। সীমান্তে গিয়ে তাঁরা বাড়ির লোকজনকে খবর পাঠাচ্ছেন। তাঁরা সবাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতে না থেকে দেশে ফিরে পরিবারের সঙ্গে থাকা ভালো মনে করছেন।
তবে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাসহ কয়েক শ ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’-এর ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে নয়াদিল্লিকে। চিঠিতে পুশ ইনের পুনরাবৃত্তি বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়েছে।