যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনে কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্থিরতা চলার পর গতকাল শুক্রবার দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে দেশের মুখ্য সামরিক নেতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রাজনীতিকেই প্রাধান্য দিলেন তিনি।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা হলেন জেনারেল চার্লস কিউ ব্রাউন জুনিয়র। যুদ্ধবিমানের চার তারকাবিশিষ্ট পাইলট সি কিউ ব্রাউন মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান। তিনি আফ্রিকা বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় কোনো মার্কিন নাগরিক, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন।
এখন সি কিউ ব্রাউনের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন বিমানবাহিনীর তিন তারকাবিশিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ড্যান কেইন। ইরাকে ছয় বছর আগে ট্রাম্পের সঙ্গে এক সাক্ষাতে তিনি নিজেকে তাঁর একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লেখেন, ‘আজ আমি এ ঘোষণা দিতে পেরে সম্মানিতবোধ করছি যে আমি জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে বিমানবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ড্যান “রাজিন” কেইনকে মনোনীত করছি।’ তিনি আরও লেখেন, ‘জেনারেল কেইন দক্ষ পাইলট, জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, সফল উদ্যোক্তা ও “যুদ্ধবাজ”। তিনি আন্তসংস্থা ও বিশেষ অভিযানের ওপর উল্লেখ করার মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।’
সি কিউ ব্রাউনের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন বিমানবাহিনীর তিন তারকাবিশিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ড্যান কেইন। ইরাকে ছয় বছর আগে ট্রাম্পের সঙ্গে এক সাক্ষাতে তিনি নিজেকে তাঁর একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হন।
যুক্তরাষ্ট্রে কোনো প্রেসিডেন্ট যে রাজনৈতিক মতাদর্শেরই হোন না কেন, প্রশাসনের পরির্বতনে জয়েন্ট চিফসের চেয়ারম্যান সাধারণত তাঁর পদে বহাল থাকেন। তবে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা নিজেরা তাঁদের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে চান।
আফ্রিকার দেশগুলোর প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধানদের এক সম্মেলনে বক্তব্য দেন মার্কিন বিমান বাহিনীর জেনারেল ও জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান সি কিউ ব্রাউন। গ্যাবোরোন বতসোয়ানা, ২৫ জুন ২০২৪ছবি: রয়টার্স
জেনারেল ব্রাউনকে বরখাস্ত করার মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের এমন মনোভাবের প্রতিফলন ঘটল যে মার্কিন সামরিক নেতৃবৃন্দ ‘জনশক্তিতে বৈচিত্র্যের সন্নিবেশ’ নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত রয়েছেন এবং তাঁরা দেশকে রক্ষায় একটি যোদ্ধা বাহিনী হিসেবে নিজেদের ভূমিকা হারিয়ে ফেলেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ (সবার আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ) নীতি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের বাইরে আছেন।
জেনারেল ব্রাউনকে বরখাস্ত করার ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, তাঁকে চাকরিচ্যুত করা উচিত। কেননা, সামরিক বাহিনীতে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচিতে (ডিইআই) তাঁর বেশি মনোযোগ।
গত নভেম্বরে একটি অনুষ্ঠানে হেগসেথ বলেছিলেন, ‘সবার আগে আপনাকে জয়েন্ট চিফসের চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘ডিইআই প্রচেষ্টায় যে জেনারেলই যুক্ত থাকবেন, তাঁকেই বরখাস্ত করা উচিত।’
পেন্টাগনে দায়িত্ব পালন শুরু করার প্রথম দিন পিট হেগসেথ জেনারেল ব্রাউনের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়া ব্রাউনের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চান তিনি।
জেনারেল কেইন দক্ষ পাইলট, জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, সফল উদ্যোক্তা ও “যুদ্ধবাজ”। তিনি আন্তসংস্থা ও বিশেষ অভিযানের ওপর উল্লেখ করার মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট
তবে জেনারেল ব্রাউনকে যে ট্রাম্পের আস্থাভাজনদের ঘরানায় স্বাগত জানানো হচ্ছে না, সেটি শিগগিরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কর্মকর্তারা জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছিল না।
জেনারেল ব্রাউনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এখনকার অবস্থান ২০২০ সালের পুরোপুরি বিপরীত। ওই সময় ব্রাউনকে বিমানবাহিনীর প্রধান হিসেবে মনোনীত করা হয়। এ বাহিনীর প্রধান হিসেবে প্রথম কোনো আফ্রিকান আমেরিকান নাগরিককে নিয়োগ দেওয়ার ঐতিহাসিক গুরুত্বও সে সময় তুলে ধরেন তিনি। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছিলেন, ‘এই জেনারেল একজন দেশপ্রেমী ও মহান নেতা।’