ভারতের অন্যতম সুপরিচিত ও পুরোনো ব্যবসায়ী গোষ্ঠী গোদরেজ গ্রুপের মালিকেরা তাঁদের ব্যবসা ভাগ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ৭০০ কোটি ডলার বা ৫৯ হাজার কোটি রুপির এই ব্যবসা ভাগ হচ্ছে। আবাসন থেকে শুরু করে তালা ও ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় জড়িত গোদরেজ। এখন তারা দুটো আলাদা গ্রুপে ভাগ হয়ে যাচ্ছে, ভাগ হচ্ছে তাদের সব ব্যবসা আর সম্পদও।
ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত গোদরেজ গ্রুপের পাঁচটি কোম্পানির পূর্ণ মালিকানা পাচ্ছেন আদি গোদরেজ, তাঁর ভাই নাদির গোদরেজ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। এই পাঁচটি কোম্পানি হলো গোদরেজ কনজ্যুমার প্রোডাক্টস, গোদরেজ প্রপার্টিজ, গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, গোদরেজ অ্যাগ্রোভেট ও অ্যাসটেক লাইফসায়েন্সেস।
অন্যদিকে, জামশিদ গোদরেজ তাঁর বোন স্মিতা গোদরেজ কৃষ্ণা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করবেন গোদরেজ অ্যান্ড বয়েস কোম্পানি। এই কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লায়েন্স, অ্যারোস্পেস, তালা ও নির্মাণ ব্যবসায় জড়িত।
আদি গোদরেজ ও জামশিদ গোদরেজ হলেন চাচাতো ভাই। গোদরেজ পরিবার গুজরাটি পারসি। ১৮৯৭ সালে গোদরেজ গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দুই ভাই আরদেশির গোদরেজ ও তাঁর ভাই পিরোজশা বুরজোরজি গোদরেজ। ১২৭ বছর আগে গড়ে তোলা সেই কোম্পানি দিনে দিনে মহিরুহে রূপ নেয় এবং ব্যবসার বিভিন্ন দিকে শাখা–প্রশাখা প্রসারিত করে। বর্তমানে চতুর্থ প্রজন্ম গোদরেজের দায়িত্বে এসেছে।
মূল দুই পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ধারণ করতেন এবং এসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। কিন্তু এখন ঠিক হয়েছে যে তাঁরা যেসব কোম্পানিতে থাকবেন না, সেসব কোম্পানির শেয়ারগুলো হস্তান্তর করবেন। পরিচালনা পর্ষদ থেকেও তাঁরা সরে দাঁড়াবেন। ফলে গোদরেজ গোষ্ঠীতে পরিষ্কার বিভক্তি আসবে।
তবে মূল পরিবারের আরেকজন সদস্য রয়েছেন। তাঁর নাম রিশাদ। গোদরেজ কোম্পানিতে তাঁর মালিকানা আছে, কিন্তু তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক পদে নেই। রিশাদ বিয়ে করেননি। খবরে বলা হয়েছে যে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর মালিকানায় থাকা শেয়ার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হবে।
ঠিক হয়েছে যে ভাগ হওয়ার পরও আলাদা গ্রুপ দুটো গোদরেজ নামটি ব্যবহার করবে। আদি, নাদির, জামশিদ, স্মিতা ও রিশাদ—এই পাঁচজনের প্রত্যেকেই গোদরেজ অ্যান্ড বয়েস কোম্পানিতে ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিক। প্রায় ২৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক পিরোজশা গোদরেজ ফাউন্ডেশন, আর ২৭ শতাংশের মতো শেয়ার আছে গোদরেজ ইনভেস্টমেন্টের হাতে।
গোদরেজ পরিবারের পাঁচ জ্যেষ্ঠ সদস্যের সবাই বয়স্ক। আদির বয়স ৮২ বছর, নাদিরের ৭৩, জামশিদের বয়স ৭৫, বোন স্মিতা গোদরেজের বয়স ৭৪ আর রিশাদের বয়স এখন ৭২ বছর।
যে পাঁচটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত, তাদের মোট বাজার মূলধনের পরিমাণ ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি রুপি বা ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। বছরে তাদের রাজস্ব আয় হয় ৪১ হাজার ৭৫০ কোটি রুপি বা ৫০০ কোটি ডলার। আর এখান থেকে তাদের মুনাফার পরিমাণ ৪ হাজার ১৭৫ কোটি রুপি বা ৫০ কোটি ডলার। গোদরেজ অ্যান্ড বয়েসের বাৎসরিক বিক্রি ২০০ কোটি ডলার, আর তাদের কর–পূর্ব মুনাফা ৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।
পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, গোদরেজ কোম্পানির শেয়ার পুনর্সজ্জার বিষয়টি সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও অর্থপূর্ণ উপায়ে করা হয়েছে। কোম্পানির শেয়ার নতুন করে সাজানোর বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পর কার্যকর হবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট হবেন আদি গোদরেজের ছেলে পিরোজশা। এরপর ২০২৬ সালের আগস্টে তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান নাদির গোদরেজের স্থলাভিষিক্ত হবেন। তবে দেখার বিষয় হবে যে গ্রুপের আবাসন খাতের সম্পদের ভাগ–বাঁটোয়ারা কীভাবে হয়। এই সম্পদের আর্থিক মূল্য তিন হাজার কোটি রুপির বেশি। বর্তমানে তা গোদরেজ অ্যান্ড বয়েসের অধীনে রয়েছে।
গোদরেজ গ্রুপের মূল প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আরদেশির গোদরেজের কোনো সন্তান ছিল না। এরপর কোম্পানি চালাতেন পিরোজশা গোদরেজের তিন ছেলে বুরজর, সোহরাব ও নাভাল। শেষ গ্রুপের ব্যবসা চালাতেন বুরজরের ছেলে আদি ও নাদির এবং নাভালের ছেলে জামশিদ।
পরিবারের পরের প্রজন্ম গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিতে যোগ দিয়েছে এবং এখন গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে। এদের মধ্যে আদি গোদরেজের মেয়ে নিসাবা এখন গোদরেজ কনজ্যুমার প্রোডাক্টস চালাচ্ছেন। আদি গোদরেজের ছেলে পিরোজশা এত দিন গোদরেজ প্রপার্টিজ চালিয়েছেন। গ্রুপের অন্যতম প্রধান কোম্পানি গোদরেজ ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ইমেরিটাস হলেন আদি গোদরেজ আর নাদির হলেন এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।