যেখানে পুরুষ ছাড়া নারীদের কোথাও যেতে মানা
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 30-05-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে নারীদের ওপর শুধু ‘না’ আর ‘না’ আরোপ করা হয়েছে। এতটাই যে তাঁরা একা দূরে কোথাও যেতে পারবেন না। একা উড়োজাহাজে চড়তে পারবেন না। এমনকি সরকারি কোনো দপ্তরেও যেতে পারবেন না, যদি না সঙ্গে কোনো পুরুষ থাকে।

আফগানিস্তানে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধের কারণে লাখ নারী স্বামীহারা হয়েছেন। তাই অনেক নারীর জন্যই মাহরাম খুঁজে পাওয়া কঠিন।

নারীদের কেউ একা বাইরে যেতে চাইলে তাঁকে স্বামী কিংবা ভাই, কিংবা চাচা, কিংবা বাবাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। একে বলা হচ্ছে ‘মাহরাম’। যাঁর অর্থ পুরুষ সঙ্গী। যাঁর সামনে ওই নারীর হিজাব পরা বাধ্যতামূলক নয়। এবং যাঁকে তাঁর অভিভাবক বা রক্ষাকারী হিসেবে মনে করা হয়।

 

সম্প্রতি মারিয়াম (ছদ্মনাম) ও তাঁর আরেক বান্ধবী মিলে কাবুলে তাঁদের সাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন ট্রান্সস্ক্রিপ্ট আনতে। কিন্তু ভবনে ঢোকার মুখেই তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।

বার্তা সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মারিয়াম বলেন, ‘ঢোকার মুখে তালেবান আমাদের বলল, সঙ্গে মাহরাম থাকতে হবে। কিন্তু  সে সময় আমার ভাই কাজে ছিল, আমার বান্ধবীর ভাইও ছোট। আর তাঁর বাবাও নেই।’

মারিয়াম বলেন, ‘আমি দেখলাম, এক পুরুষ ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁকে গিয়ে সমস্যার কথা বলতে তিনি সাহায্য করতে রাজি হলেন। এরপর তাঁকে আমাদের ভাই পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সাহস পেলাম।’

আফগানিস্তানে কড়া নিয়মকানুনে নারীরা কী করতে পারবেন, আর পারবেন না, তা বলা হয়েছে। আর এসব নিয়ম প্রণয়নকারীরা দাবি করেন, তাঁরা ওই নারী ও তাঁর পরিবারের সম্মান রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে এই নিয়মকানুন বলবৎ করেছেন।

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় এসেই এ ধরনের যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, বিভিন্ন দেশ সেসব পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। জবাবে তালেবান বলেছে, আফগানিস্তান ইসলামি আইন অনুসরণ এবং শরিয়ার অধীনে সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা করে থাকে।

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এএফপিকে বলেন, বাইরের দেশগুলোর নিজেদের মতো করে সংবেদনশীলতা রয়েছে। তারা হিংসা ও কুসংস্কারের ওপর ভিত্তি করে ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে। তাদের উচিত ইসলামি আইনের ও এর মূল্যবোধের প্রতি সম্মান দেখানো।

  বাড়ি যাও

আফগানিস্তানে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধের কারণে লাখ নারী স্বামীহারা হয়েছেন। তাই অনেক নারীর জন্যই মাহরাম খুঁজে পাওয়া কঠিন। শিরিন নামে ২৫ বছর বয়সী এক তরুণী বলেন, ‘অনেক নারীর বাড়িতে কোনো পুরুষ নেই।’ শিরিন অনলাইনে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন, কারণ নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষেধ।

শিরিন বলেন, তাদের স্বামী মারা গেছে, বা তাদের ছেলে সন্তান থাকলেও তারা অনেক ছোট। এ অবস্থায় এই নারীরাই বাড়ির প্রধানের ভূমিকায়। তাহলে তারা কোথায় মাহরাম পাবে।

আফগানিস্তানের বেশ কয়েকজন নারী এএফপিকে বলেন, মাহরাম ছাড়া ভ্রমণ করলে একজন নারী গ্রেপ্তার হতে পারেন। শহর ও গ্রামীন এলাকায় তল্লাশিচৌকিগুলোতে ব্যাপক তল্লাশি হয়।

শিরিন বলেন, গত বছর তিনি ও তাঁর পরিবারের সব নারী মিলে মিনিবাসে করে বনভোজনে যাচ্ছিলেন। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তাঁদের এক পুরুষ ভাই। তিনি কারও মাহরাম না হওয়ায় তালেবান কর্তৃপক্ষ তাঁদের সেই যাত্রা আটকে দিয়েছিল।

তালেবানের এক সদস্য শিরিনের সেই ভাইয়ের শার্টের কলার চেপে ধরে নিয়ে যান আর নারীদের বাড়ি ফিরতে নির্দেশ দেন।

শেয়ার করুন