এফবিআইয়ের সাবেক পরিচালক জেমস কমির ইনস্টাগ্রাম পোস্টছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) সাবেক পরিচালক জেমস কমি। ওই ছবিতে দুটি সংখ্যা লেখা ছিল। সেগুলো হলো ৮৬ ও ৪৭। সমালোচকেরা বলছেন, এই দুটি সংখ্যার মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার আহ্বান জানিয়েছেন কমি।
ট্রাম্পের বড় সমালোচক হিসেবে পরিচিত কমি। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবির মাধ্যমে সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছেন—এমন কথা বিবৃতি দিয়ে অস্বীকার করেছেন তিনি। তিনি এ–ও বলেছেন, ‘আমি যেকোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে।’ এমনকি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবিটিও সরিয়ে নিয়েছেন জেমস কমি।
তবে কমির এমন প্রচেষ্টা ট্রাম্পের সমর্থকদের শান্ত করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর ও প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা দেওয়া সংস্থা সিক্রেট সার্ভিস বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে তারা। চলুন দেখে নেওয়া যাক আসলে কী ঘটেছে—
এফবিআইয়ের সাবেক পরিচালক জেমস কমিফাইল ছবি: রয়টার্স
কমির পোস্টে কী ছিল
ইনস্টাগ্রামে জেমস কমি যে ছবিটি পোস্ট করেছেন, তাতে সাগরের তীরে একের পর এক ঝিনুক সাজিয়ে ৮৬ ও ৪৭—সংখ্যা দুটি লেখা দেখা যায়। ওই ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘সৈকতে হাঁটার পথে সুন্দরভাবে সাজানো এই ঝিনুকগুলো ছিল।’
এর পরপরই সমালোচকেরা বলেন, ছবিতে থাকা ‘৮৬’ সংখ্যাটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো একটি সংকেত বোঝানো হয়েছে। এর অর্থ ‘কোনো কিছু থেকে মুক্তি পাওয়া’ অথবা ‘কাউকে সরিয়ে দেওয়া’। গত শতকের ত্রিশের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের রেস্তোরাঁগুলোয় এই সংখ্যা ব্যবহার করা হতো। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের বোঝানো হতো, মেনুর কোনো একটি খাবার আর অবশিষ্ট নেই।
আর ‘৪৭’ সংখ্যাটি নিয়ে সমালোচকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রে এর আগেও ৮৬৪৭ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। যেমন গত মার্চ মাসেই ট্রাম্পের পদত্যাগ চেয়ে তৈরি বিভিন্ন পোস্টারে এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের মিত্ররা কী বলেছেন
জেমস কমির ওই পোস্টের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। তাঁরা বলছেন, এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে ‘হত্যা’র আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘কমি আমার বাবাকে হত্যার আহ্বান জানিয়েছেন।’
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সহকারী ‘গ্রক’–এর কাছে অনেকেই এই সংখ্যা দুটির ব্যাখ্যা চেয়েছেন। জবাবে গ্রক বলেছে, এটি মূলত ট্রাম্পকে ‘সরিয়ে দেওয়ার ধূর্ত কৌশল’ বলেই মনে হচ্ছে। এআই এই কথাও বলেছে, সংখ্যাগুলো ‘ট্রাম্পকে হত্যা করার’ ইঙ্গিত নয়; বরং তাঁকে ‘রাজনৈতিকভাবে সরিয়ে দেওয়ার’ ইঙ্গিত দেয়।
তুলসী গ্যাবার্ডের মতে, এমন পোস্টের জন্য কমিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং কারাবন্দী করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের কাছে জানতে চেয়েছিল সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ। তিনি বলেন, জেমস কমি ‘৮৬ ৪৭’ সংখ্যা দুটির অন্তর্নিহিত ‘সহিংস’ অর্থ জানেন না—এমনটা তাঁর কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। গ্যাবার্ডের মতে, এমন পোস্টের জন্য কমিকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে ও কারাবন্দী করতে হবে।
কমির ওই পোস্টের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য অ্যান্ডি ওগলেস। তাতে কমির পোস্টটি তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কমি এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের আইন ভঙ্গ করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে এক্সে ওগলেস লিখেছেন, আইন ভাঙলে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
কমির পোস্ট নিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে এক্সে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম। আর এফবিআইয়ের বর্তমান পরিচালক ক্যাশ পাটেল এক্সে বলেছেন, এফবিআই তদন্তে যেকোনো সহায়তা করবে। কমির পোস্টের কড়া সমালোচনা করেছেন হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ জেমস ব্লেয়ারও।
গত বছরের জুলাইয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করা হয়ছবি: এএফপি
কমি–ট্রাম্পের সম্পর্ক কেমন
কমিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সেটি ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগের কথা। সে সময় হিলারি ক্লিনটন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ব্যক্তিগত ই–মেইল সার্ভার ব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করেছিলেন কমি। ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেকে এই যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে নির্বাচনের আগে ওই তদন্ত হিলারির পরাজয়ের একটি কারণ ছিল। সেবারের নির্বাচনে হিলারিকে পরাজিত করে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় বসেছিলেন ট্রাম্প।
আত্মজীবনীতে ট্রাম্পকে ‘নৈতিকভাবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য’ এবং ‘গণতন্ত্রের রীতিনীতির জন্য একটি হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন কমি।
২০১৬ সালের ওই নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও তদন্ত করেছিলেন জেমস কমি। পরের বছর ২০১৭ সালে তাঁকে চাকরিচ্যুত করেন ট্রাম্প। কমি কংগ্রেসে বলেছিলেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের প্রমাণ পেয়েছেন তিনি। আর তাঁকে চাকরিচ্যুত করার কারণ হিসেবে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কমি ‘কার্যকর ভূমিকা’ পালন করতে পারেননি। এ থেকে মূলত হিলারির তদন্ত নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অসন্তোষের বিষয়টি ফুটে উঠেছিল।
এফবিআইপ্রধানের পদ থেকে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর ট্রাম্পের কড়া সমালোচকে পরিণত হন জেমস কমি। ২০১৮ সালে স্মৃতিকথা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তাতে তিনি ট্রাম্পকে ‘নৈতিকভাবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য’ এবং ‘গণতন্ত্রের রীতিনীতির জন্য একটি হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।