বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন, পরিদর্শন, দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ও চলমান কাজ মিলে বেশ লম্বা সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নির্মাণাধীন রামগড় স্থল বন্দর ও এর ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পণ্যের চালান নিতে স্থলবন্দরটি ব্যবহার করবে ভারত। এই সীমান্তে ইমিগ্রেশনসহ যাবতীয় সুবিধা মিলবে। কিন্তু, মূল প্রকল্পের নকশায় যেসব জমিতে অবকাঠামো তৈরি করার কথা, তা নিয়ে ভারতীয় পক্ষের আপত্তি থাকায় এখন স্থায়ী অবকাঠামোর পরিবর্তে ওপরে ইস্পাতের অবকাঠামোয় তৈরি হচ্ছে রামগড় ইমিগ্রেশন ভবন।
২০১০ সালে রামগড়কে স্থলবন্দর ঘোষণা দেওয়া হয় এবং ২০২১ সালের ৯ মার্চ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে রামগড়ের ফেনী নদীর ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রি সেতু-১ উদ্বোধন করেন। সেতুর এপারে রামগড় স্থলবন্দর। স্থল বন্দরের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও সেতু দিয়ে দুই দেশের যোগাযোগ শুরু হয়নি।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে স্থলবন্দরটি চালুর দিনক্ষণ ঘোষণা করার সম্ভাবনা আছে। প্রধানমন্ত্রী এই সফরে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রামগড় স্থল বন্দর ছাড়াও ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া-কড়ইতলি স্থল বন্দর উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এর মধ্যে বিলোনিয়া ও গোবড়াকুড়া-কড়ইতলি স্থলবন্দরের অবকাঠামো পুরোপুরি প্রস্তুত হলেও পিছিয়ে আছে রামগড় স্থল বন্দর। আপাতত যাত্রী পারাপারের মাধ্যমে এই স্থল বন্দরের উদ্দেশ্যে নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ তার প্রাণ ফিরে পেতে চায়। সে লক্ষ্যেই সেতুর পাশে রামগড় অংশে দ্রুতবেগে স্টিলের স্থাপনার ওপর নির্মিত হচ্ছে একতলা রামগড় ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণকাজ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর জানিয়েছেন, ‘আমরা তিনটি বন্দর পরিচালনা করতে প্রস্তুত, ইতিমধ্যে আমরা তা জানিয়ে দিয়েছি। এসব বন্দর চালু হলে দুই দেশের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য আরও মসৃণ হবে, বাণিজ্য বাড়বে। ‘
রামগড় স্থল বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, ইমিগ্রেশন ভবনটির ওপর ছাউনি দেয়াসহ অন্যান্য কাজগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করতে প্রচুর লোকজন সকাল-সন্ধা কঠোর পরিশ্রমে ব্যস্ত। প্রকল্পের ব্যবস্থাপক রুহুল আমিন মুঠোফোনে জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হচ্ছে রামগড় ইমিগ্রেশন ভবন।
রামগড়ের মহামুনি এলাকায় অধিগ্রহণকৃত ১০ একর জমিতে আপাতত এই স্থলবন্দর বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে, আরও ১৬ একর জায়গা অধিগ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থলবন্দরের জন্য যাত্রী টার্মিনালের পাশাপাশি, কাস্টমস, ইমিগ্রেশনসহ আরও কিছু দপ্তর এবং প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হবে।
বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রকল্প–১ এর আওতায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনিকো লিমিটেডের সঙ্গে গত বছরের ২৮ অক্টোবর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি হলে ডিসেম্বরে এর কাজ শুরু হয় এবং ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর হওয়ায় এসব স্থাপনা নির্মাণের জন্য ভারতের অনাপত্তিপত্র দরকার। ভারতের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় স্থলবন্দরের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। আর সেকারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হতে আরও সময় লাগবে। তাই, আপাতত ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গ যেমনটি আশা করছেন, ঠিক তেমনি রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দিন, পৌর মেয়র রফিকুল আলম কামাল, উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারীসহ স্থানীয় ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিকরা মনে করেন, সেতু উদ্বোধন, পরিদর্শন, দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ও চলমান কাজ মিলে বেশ লম্বা সময় অতিবাহিত হলেও স্থলবন্দরটি চালু হলে উভয় দেশই প্রত্যাশিত লাভবান হবে।