৯৩ বছর বয়সে পঞ্চমবারের মতো ‘আই ডু’ বললেন মিডিয়া মোগল ও ধনকুবের রুপার্ট মারডক। কনে ৬৭ বছর বয়সী জীববিজ্ঞানী এলেনা জুকোভা। এই বিয়ে নিয়ে বিশ্বব্যাপী যখন চলছে তুমুল আলোচনা, তখন তাতে অংশ নিলেন আমার এক সহকর্মীও। প্রশ্ন তুললেন, এই বয়সে ওরা কেন বিয়ে করল? কিসের টানে? শরীরের প্রেমে পড়াটা এখন অনেকটাই ‘সেকেলে’।
আসলে সময়ের সঙ্গে প্রেমের ধরন বদলেছে। এসেছে নানা পরত। মানুষ এখন কেবল সংসার পাতা বা সন্তান উৎপাদনের জন্য প্রেম, বিয়ে করে না। অনেকের কাছেই শারীরিক সৌন্দর্য ছাপিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে বুদ্ধিমত্তা। যাঁরা একটা মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রেমে পড়েন, তাঁদেরই ডাকা হয় স্যাপিওসেক্সুয়াল। আর সেই বুদ্ধিমত্তা হতে পারে কৃত্রিম। আর এ কারণেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর সংখ্যাটাও বাড়ছে হু হু করে। এঁদেরকে সংক্ষেপে ডাকা হয় স্যাপিও। জেনে নেওয়া যাক স্যাপিওদের বৈশিষ্ট্য—
সামনের দিনগুলোতে এআইয়ের (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যাবেছবি: পেক্সেলস ডটকম
১. স্যাপিওসেক্সুয়ালরা প্রেমে পড়ার জন্য বুদ্ধিমত্তার ওপর গুরুত্ব দেন বেশি। অপর পক্ষের গভীর চিন্তাশক্তি, কৌতূহলী মনোভাব, প্রচলিত ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করার মানসিকতা ও ব্যক্তিত্বই তাঁদের টানে বেশি। এদের কাছে আকর্ষণ শরীরে নয়, বরং মেধায় লুকিয়ে থাকে।
২. স্যাপিওদের ধরন দুই প্রকার। এক, এঁরা বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে আকর্ষণ বোধ করেন। দুই, এঁদের কাছে যৌনতা মুখ্য নয়। বরং ওই মানুষটার সঙ্গে বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব, রাজনীতি, দর্শন নিয়ে আলোচনা করতেই ভালোবাসেন তাঁরা। এটাকে বলা যায় প্লেটোনিক প্রেম। যেখানে থাকে না যৌনাকাঙ্ক্ষা কিংবা যৌন আকর্যণ থাকলেও সেটি মুখ্য নয়।
৩. স্যাপিওরা হুট করে প্রেমে পড়েন না। যেহেতু শারীরিক আকর্ষণ এখানে গৌণ। তাই ‘প্রথম দর্শনেই প্রেম’ তাঁদের জন্য মুখ্য নয়। তাই প্রেমে পড়তে এঁদের সময় লাগে। ফলে শুরুতে স্যাপিওদের হয় বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব সময়ের সঙ্গে প্রেমে গড়ায়।
শুরুতে স্যাপিওদের হয় বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব সময়ের সঙ্গে প্রেমে গড়ায়ছবি: কবির হোসেন
৪. স্যাপিওরা মনে করেন, তাঁদের প্রেমটাই সেরা। কেননা সময়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ক্লিশে হয়ে আসে, সৌন্দর্য হারিয়ে যায়, টিকে থাকে কেবল বুদ্ধিমত্তা। তাই বুদ্ধিমত্তাটাই শেষ কথা। আর এটাই প্রেমে পড়ার উপযুক্ত কারণ হওয়া উচিত।
৫. স্যাপিওরা সাধারণত অন্তর্মুখী স্বভাবের হন। আর যাঁর প্রেমে পড়েন, সে সাধারণত তাঁর শিক্ষক, মেন্টর, বস, উচ্চপদস্থ কেউ বা পুরোনো বন্ধু হন। হতে পারেন সহকর্মীও। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মনের কথাটা বলে ওঠা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই স্যাপিওদের প্রেম বিবাহবহির্ভূতও হয়। একমুখী (ওয়ান সাইডেডও) হয়। সময়ের সঙ্গে একমুখী প্রেম হারিয়েও যায়।
৬. সঠিক সময়ে, উপযুক্ত পরিবেশে স্যাপিওদের প্রেম হলে সেটা সাধারণত টেকসই হয়।
৭. সামনে এআইয়ের (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কারণ, বাস্তব ও ভার্চ্যুয়ালের পার্থক্য অনেকটাই কমে আসবে ধীরে ধীরে। ধারণা করা হচ্ছে, সময়ের সঙ্গে কুত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গ প্রেম করাটাই হয়ে উঠবে চলতি ধারা। ইতিমধ্যে ‘এক ঘণ্টা এক ডলার’ হিসেবে বিভিন্ন অ্যাপে পছন্দসই চেহারার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কথা বলা, মনের ভাব আদান–প্রদানের সেবা চালু হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরও জনপ্রিয়তা পাবে এ ধরনের অ্যাপ।
সূত্র: ইউএসএ টুডে, ভেরি ওয়েল মাইন্ড