পেঁয়াজ আমদানির জন্য শেষ পর্যন্ত ভারতকেই বেছে নিল সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আজ রোববার ভারত থেকে ১ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
আমদানি অনুমতিকে সংক্ষেপে আইপি বলা হয়। মোট ৫০ জন আমদানিকারককে এ আইপি দেওয়া হয়। তবে কোনো আমদানিকারকই ৩০ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন না। আবার কেউ দ্বিতীয়বারের জন্য আমদানির আবেদন করতে পারবেন না। আমদানির অনুমতির বা আইপির মেয়াদ থাকবে ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণে গতকাল শনিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছিল, গত ১ আগস্ট থেকে যেসব আমদানিকারক আইপির জন্য আবেদন করেছেন, তাঁরাই পাবেন এই সুযোগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আইপির জন্য এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০০টি আবেদন জমা আছে। আজ ৫০টি আবেদন বাছাই করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে। সার্ভারে যাঁরা আগে ঢুকতে পেরেছেন, তাঁরাই আইপির জন্য বিবেচিত হয়েছেন।
হিলি সীমান্তের কাছে অবস্থিত বিজয় এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বন্টি জয়সয়াল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ তিনি সারা দিন চেষ্টা করেও সার্ভারে ঢুকতে পারেননি। কাল আবার চেষ্টা করবেন। একজনের জন্য ৩০ টন, পরিমাণটা কম হয়ে গেছেও বলে মনে করেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত ৯ নভেম্বর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাজারে দাম না কমলে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের আইপি দেওয়া হবে। তবে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে তা আর দেওয়া হবে না। বাণিজ্য উপদেষ্টার এমন ঘোষণা কার্যকর হয়েছে এক মাস পর।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) এক বছর আগে পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প উৎস খোঁজার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল। উৎসগুলো হচ্ছে পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসর, চীন ও মিয়ানমার। বাংলাদেশ এত বছর ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করে আসছিল। এ ছাড়া চীন ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছিল, তবে তা পরিমাণে কম।
গত ২৮ নভেম্বর ভারতের দ্য ইকোনমিকস টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের বরাতে বলা হয়েছে, একসময় ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া পেঁয়াজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। তবে গত আট মাসে বাংলাদেশ খুবই সামান্য পরিমাণ পেঁয়াজ কিনেছে ভারত থেকে। যদিও ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম ভারতের স্থানীয় বাজারের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৩৭ লাখ ৯০ হাজার টন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৪২ লাখ ৫০ হাজার টন এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষ না হতেই ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন। মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের কিছু থাকে বীজের জন্য, কিছু পচে যায়। ফলে মৌসুম শেষে সরবরাহে একটু টান পড়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোক্তাস্বার্থের কথা ভেবে আজ ৫০টি আইপি দেওয়া হয়েছে, আরও দেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে পরিস্থিতি অনুযায়ী এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। তবে পেঁয়াজের দাম কমে এলেই আমদানির অনুমতি বন্ধ করা হবে। কারণ, কৃষকের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।’
এদিকে প্রথম আলোর দিনাজপুরের বিরামপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ বিকেল সোয়া চারটায় ভারত থেকে ৩০ টন পেঁয়াজবোঝাই একটি ট্রাক হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের ৩০ আগস্ট ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।
পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রকি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আতিক হাসান জানিয়েছেন, ভারত থেকে প্রতি টন পেঁয়াজ আমদানিতে ২৫০ মার্কিন ডলারে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ছে ১২ রুপি এবং গাড়িভাড়াসহ বন্দর পর্যন্ত খরচ পড়তে পারে কেজিপ্রতি ১৮ রুপি।
এদিকে আমদানির ঘোষণায় এক দিনের ব্যবধানে আজ ঢাকার খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৪০ টাকায়। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারের চিত্রও প্রায় একই। আমাদের চট্টগ্রাম অফিস জানায়, আমদানি অনুমতির খবরে দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ আড়ত খাতুনগঞ্জের মোকামগুলোতে কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম।