কারসাজির শেয়ারের দাপট দিয়েই শেয়ারবাজারে শুরু হলো নতুন অর্থবছরের লেনদেন। আজ মঙ্গলবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে থাকা প্রথম তিনটি কোম্পানি ছিল যথাক্রমে বিচ হ্যাচারি, সালভো কেমিক্যাল ও আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ। এই তিনটি কোম্পানিই শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে কারসাজির শেয়ার হিসেবে পরিচিত।
লেনদেনের শীর্ষে থাকার পাশাপাশি চলতি অর্থবছরের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানি তিনটিরই শেয়ারের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে বিচ হ্যাচারির প্রতিটি শেয়ারের দাম এদিন ২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৩ শতাংশের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ টাকা ১০ পয়সায়। সালভো কেমিক্যালের প্রতিটি শেয়ারের দাম ২ টাকা বা সাড়ে ৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪৪ টাকা। আর আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিটি শেয়ারের দাম আজ ৪ টাকা ৭০ পয়সা বা সোয়া ৪ শতাংশের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৩ টাকায়।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি চক্র বেশ কিছুদিন ধরে কারসাজির মাধ্যমে বিচ হ্যাচারি ও আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছে। আর সালভো কেমিক্যালের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নামে প্রাইভেট প্লেসমেন্টে নতুন শেয়ার ইস্যুর ঘোষণা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, বাজারের মন্দাভাবের মধ্যেও গত ছয় মাসে বিচ হ্যাচারির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩৩ টাকা বা ৭২ শতাংশ বেড়েছে। গত ৩ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল সাড়ে ৪৫ টাকা। আজ মঙ্গলবার দিন শেষে যা বেড়ে হয়েছে ৭৮ টাকা। একই সময়ের ব্যবধানে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ৩৯ টাকা বা ৫২ শতাংশ বেড়েছে। এ মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। যে সময়ে কোম্পানিটি দুটির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে, সে সময়ে বাজারে টানা দরপতন হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ দুটি কোম্পানির শেয়ারের দাম হু হু করে বেড়েছে।
অন্যদিকে সালভো কেমিক্যালের পরিচালনা পর্ষদ সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১০ টাকা দামে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে নতুন করে প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার শেয়ার ইস্যু করা হবে। বাজারমূল্যের চেয়ে চার গুণ কম দামে উদ্যোক্তাদের কাছে এসব শেয়ার ইস্যু করা হচ্ছে। ফলে বাজারে শেয়ারের দাম যত বাড়বে, তত বেশি লাভবান হবেন উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, যে বাজারে লেনদেনে বিচ হ্যাচারি ও আলিফের মতো কোম্পানি দিনের পর দিন আধিপত্য বিস্তার করে, সেই বাজারে ভালো বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না—এটাই স্বাভাবিক। আবার কারসাজির শেয়ারের দাম যখন অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে, তখন ভালো শেয়ারের বিনিয়োগকারীরাও বাজার নিয়ে হতাশায় ভোগেন। পাশাপাশি আস্থাহীনতাও দেখা দেয়।
এদিকে অর্থবছরের প্রথম কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে ছিল লেনদেন–খরা। ডিএসইতে মঙ্গলবার দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৪১ কোটি টাকা, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ২৭২ কোটি টাকা বা ৩৮ শতাংশ কম। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) এদিন লেনদেন হয় সাড়ে ১৩ কোটি টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে ৬১১ কোটি টাকা বা প্রায় ৯৮ শতাংশ কম। লেনদেন কমলেও দুই বাজারে এদিন সূচকের সামান্য উত্থান হয়েছে। ব্যাংক বন্ধের কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম দিন গতকাল সোমবার শেয়ারবাজারেও লেনদেন বন্ধ ছিল। সেই হিসাবে আজই অর্থবছরের প্রথম লেনদেন হয় শেয়ারবাজারে।