কৌশলে টাকা তুলছেন এস আলম, তাঁর গৃহকর্মী ও গাড়িচালককে বেতন দিচ্ছে আভিভা ফাইন্যান্স
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 02-02-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আভিভা ফাইন্যান্স থেকে পাঁচ মাস আগে বিতর্কিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলমকে (এস আলম) সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়নি। এখনো এস আলমের দুই গৃহকর্মী ও এক গাড়িচালককে বেতন দিচ্ছে আভিভা ফাইন্যান্স।

পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে এস আলমের যেসব আমানত ছিল, তার সুবিধাভোগী পাল্টে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এস আলমের এক সময়কার সহযোগী প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের সঙ্গে কাজ করতেন, এমন লোকেরাই এখন আভিভা ফাইন্যান্সের মূল হর্তাকর্তা। এতে এখন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদটি খালি। প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রামের দুটি শাখা ঘুরে ও প্রধান কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বহুল আলোচিত পি কে হালদার একসময় আভিভা ফাইন্যান্সের এমডি ছিলেন, আর এস আলম ছিলেন চেয়ারম্যান। অনিয়ম–দুর্নীতির জেরে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ২০২০ সালে নাম বদলে হয় আভিভা ফাইন্যান্স। এর আগে ২০১০ সালে ওমান বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির নাম পাল্টে করা হয় রিলায়েন্স ফাইন্যান্স। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আভিভা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে এস আলমকে সরিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলম ২০০৯ সাল থেকে আভিভা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান ছিলেন।

 

 

জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরের শেষে আভিভা ফাইন্যান্সের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে খেলাপি ছিল ২ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৮৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনমতে, প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকার ঋণই নামে-বেনামে তুলে নেওয়া হয়েছে। ঋণের ৬৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ ঋণ গেছে এস আলমের পকেটে। এটির গ্রাহকেরা অনেক দিন ধরেই টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।

সম্প্রতি সরেজমিনে আভিভা ফাইন্যান্সের চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অবস্থিত আগ্রাবাদ শাখায় গিয়ে জানা যায়, সেখানে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত কুলসুম আক্তারের মাসিক বেতন ৩৫ হাজার টাকা ও গাড়িচালক লালু মিয়ার বেতন ৩০ হাজার টাকা। কুলসুম আক্তার এস আলমের চট্টগ্রামের সুগন্ধার বাসায় কর্মরত। আর লালু মিয়া এস আলমের বাড়ির গাড়িচালক।

ওআর নিজাম সড়কের ইকুইটি সেন্ট্রিয়াম ভবনে আভিভা ফাইন্যান্সের জিইসি শাখা। সেই শাখার অফিস সহকারী মর্জিনা আক্তার। কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অফিস থেকে বেতন নিলেও এঁরা কখনো অফিসে আসেননি।

এস আলমের দুই গৃহকর্মী ও এক গাড়িচালককে বেতন দিচ্ছে আভিভা ফাইন্যান্স, এ ঘটনা জানা নেই বলে দাবি এর এমডি মো. মোস্তফিদুজ্জামানের।

 

এর আগে সাইফুল আলমের গৃহকর্মী মর্জিনা আকতারের ব্যাংক হিসাবে এক কোটি টাকা জমা থাকার তথ্য পায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেই গৃহকর্মীর স্বামী সাদ্দাম হোসেনকে ইসলামী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ মুখ্য কর্মকর্তা (এসপিও) পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় এস আলম গ্রুপ। গত বছরের ১৩ মে নিয়োগের পর সাদ্দাম হোসেনকে প্রথমে পদায়ন করা হয় ব্যাংকটির চট্টগ্রামের দক্ষিণ জোনে। সরকার পতনের পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।

মর্জিনা আকতারের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে বেশ কয়েকটি হিসাব খোলা হয়। চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড়ে অবস্থিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শাখায় মর্জিনা আকতারের হিসাবে গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে নথিপত্রে দেখা গেছে। ইসলামী ব্যাংকে মর্জিনা আকতারের নামে থাকা ২২টি হিসাবে এক কোটি টাকার বেশি স্থায়ী আমানতের হদিস মিলেছে।

নথিপত্রে দেখা যায়, গত বছরের মার্চ-জুন সময়ে সাইফুল আলমের নামে চারটি স্থায়ী হিসাব খোলা হয়। এসব হিসাব খোলেন আভিভা ফাইন্যান্সের কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামে এস আলমের সহযোগী হিসেবে পরিচিত এস এম ফজলুল কাদের রিপন। হিসাব নম্বরগুলো হলো ২১৩-৫১, ২১৩-১০৮, ২১৩-৫৬ ও ২১৩-৫৪। এসব হিসাবে ৬ কোটি টাকা ১ লাখ ৮৬ হাজার ৪২৫ টাকা জমা করা হয়। তবে সরকার পরিবর্তনের পর একটি হিসাব জিএম এন্টারপ্রাইজ ও তিনটি হিসাব ইমপালস ট্রেডিংয়ের নামে পরিবর্তন করা হয়। এরপর টাকাও তুলে নেওয়া হয়। এমন আরও অনেক হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এস আলমের নিজ নামের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এমন কৌশল নেওয়া হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

এ নিয়ে জানতে চাইলে আভিভা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) মো. মোস্তফিদুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, এস আলমের কর্মচারীকে বেতন দেওয়া ও আমানতের হিসাব পাল্টে টাকা তোলার ঘটনা তাঁর জানা নেই। ঋণ আদায়ের ও গ্রাহকদের চাহিদামতো টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা চলছে।


 

শেয়ার করুন