ঘুষ ছাড়া সরকারি দপ্তরে কাজ হয় না—এটা কমবেশি সবাই জানেন এবং মানেন। একসময়ে বলা হয়েছিল, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ালেই দুর্নীতি কমবে। বাস্তবে তা হয়নি। বরং বেতন বা পদমর্যাদা অনুযায়ী ঘুষের হার বেড়েছে। সরকারি কোনো ন্যায্য সেবা পেতে ঘুষ দিতেই হয়, যাকে একসময় প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন ‘স্পিড মানি’। এই ‘স্পিড মানি’র পরিমাণ যে নেহাতই খারাপ নয়, তার প্রমাণ সাবেক পুলিশপ্রধান এবং এনবিআরের দুই কর্মকর্তার বিপুল সম্পদ।
কাজ পেতে ঘুষ যে কেবল সাধারণ মানুষকে দিতে হয় তা নয়, প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও বাদ যান না। আবার ঠিকঠাক তদবির করতে পারলে বিনা ঘুষেই কাজ সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ ঘুষ ছাড়া কাজ করতে চাইলে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য থাকা চাই।
কাজী হাবিবুল আউয়াল এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আগে ছিলেন সিনিয়র সচিব। দীর্ঘ বছর আইন মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। আইনসচিব হয়েছিলেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদের মেয়াদ শেষে ২০১৭ সালে অবসর নিয়েছিলেন। তিনি সম্প্রতি ‘বিচার ও প্রশাসন: ভেতর থেকে দেখা’ নামে একটি বই লিখেছেন। সেখানে তিনি নিজে কীভাবে দুর্নীতির মুখোমুখি হয়েছেন, তার বেশ কিছু ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের দুর্নীতি। শেষ পর্যন্ত ঘুষ ছাড়াই কীভাবে কাজটি করতে পেরেছিলেন, সেই গল্পও চমকপ্রদ।
কাজী হাবিবুল আউয়াল লিখেছেন, ‘আমার পিতা কাজী আব্দুল আউয়াল ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৪০ সালে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কারা বিভাগে নিয়োগ পেয়েছিলেন। চাকরির শেষ প্রান্তে এসে তিনি ঢাকা বিভাগের উপকারা মহাপরিদর্শক ছিলেন। সে সময় তিনি চট্টগ্রামের হালিশহরে ৭ কাঠা জমি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে পেয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালে তিনি কারা মহাপরিদর্শক (বিশেষ দায়িত্ব) পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি আমার মা এবং এক ভাইকে নিয়ে সন্দ্বীপে গ্রামের বাড়িতে স্থায়ীভাবে চলে যান। বাবা ২০০৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। জীবদ্দশায় তিনি তাঁর সে প্লটে কিছুই করতে পারেননি। তেমন ইচ্ছা বা সামর্থ্য তাঁর হয়তো ছিল না।’
সেই জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নেওয়ার গল্পটা এ রকম, ‘২০১০ সালে আমার উদ্যোগে এবং আমার সকল ভাই-বোনের সম্মতিতে উক্ত জমিতে ৪৫: ৫৫ অনুপাতে ডেভেলপারকে দিয়ে একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ২০১৬ সালে নির্মাণ সমাপ্ত হয়। আমরা আমাদের ৪৫ শতাংশ অংশে ৯টি ছোট আকারের ফ্ল্যাট পেয়েছিলাম। ভবন সম্পন্ন হওয়ার পর আমার উদ্যোগে আমি নিজ এবং সকল ভাইবোনের পক্ষে ভূমির খতিয়ান সম্পন্ন করেছিলাম। আমি অবশ্য তখন প্রতিরক্ষার সিনিয়র সচিব। সে কারণেও ভূমি অফিস আমাকে খানিকটা খাই-খাতির করে থাকতে পারে।’