রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিষিদ্ধঘোষিত চরমপন্থী পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির আঞ্চলিক নেতা সুশীল কুমার সরকার (৫৮) হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতেই নিহতের ছোট ভাই সুনীল সরকার অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। পুলিশ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে পারেনি।
রোববার সন্ধ্যার পর উপজেলার কাটাখালী বাজারের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা তাঁকে গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার পর এলাকা এখনো থমথমে। আশপাশের লোকজনের মধ্যে ভর করেছে আতঙ্ক।
আজ সোমবার কাটাখালী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে মানুষ কম। রোববার সন্ধ্যায় এমন ঘটনার পর খুব দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানালেন বাজারে থাকা লোকজন। এত মানুষ তখন বাজারে ছিল, এর মধ্যে এ ঘটনা ঘটে গেল। এখন বাজারে নতুন কেউ এলেই তাঁদের ভয় করছে। ঘটনাস্থলের পাশে চায়ের দোকানে বসে থাকা বেঞ্চটি পড়ে আছে। পাশে মাটিতে রক্তের দাগ লেগে আছে।
চা–দোকানি ইমদাদুল বেপারী বলেন, সন্ধ্যার আগে অপরিচিত এক ব্যক্তিকে নিয়ে সুশীল চা খেতে বসেন। চা পান শেষে সিগারেট চাইলে পাশের দোকান থেকে সিগারেট এনে দেন তিনি। এরপর অদূরে রাস্তার ধারে নলকূপে পানি আনতে যান। এ সময় দোকানের ভেতর আরও কয়েকজন চা পান করছিলেন। পানি নিয়ে রাস্তায় ওঠার আগ মুহূর্তে গুলির শব্দ পান। ভয়ে তখন লোকজন দিগ্বিদিক ছুটতে থাকলে তিনিও ভয় পেয়ে যান। তাই আর দোকানের দিকে আসেননি। কিছুক্ষণ পর সন্ত্রাসীরা চলে গেলে তিনি দ্রুত দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যান। এ সময় রাস্তার ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় সুশীল সরকার পড়ে ছিলেন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মাগরিবের নামাজের সময় অটোরিকশায় করে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার যুবক চায়ের দোকানের সামনে এসে বেঞ্চে বসে থাকা সুশীলকে পেছন থেকে গুলি করেন। এতে সুশীল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে আঘাত করা হয়। এরপর আরও দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসীরা বলে, ‘পার্টির (সর্বহারা) নির্দেশে সুশীলকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসবেন না। প্রায় ১০ মিনিট অবস্থানের পর সন্ত্রাসীরা আবার অটোরিকশা করে চলে যায়। তাই আশপাশের কেউ এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাননি।’
নিহতের ছোট ভাই সুনীল সরকার রোববার রাতে বলেন, গোয়ালন্দ থেকে যাত্রী নিয়ে তিনি কাটাখালী বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে খবর পান বড় ভাইকে সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে। দ্রুত যাত্রী নামিয়ে কাটাখালী বাজারে ছুটে যান। এসে দেখেন বাজারের ইমদাদুলের চায়ের দোকানের পাশে রাস্তার ঢালে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় কাতরাচ্ছেন। বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ। দু-চারজন থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। এক যাত্রীর সহায়তায় ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।
থানা-পুলিশ জানায়, নিহত সুশীল সরকার চরমপন্থী পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির রাজবাড়ী, পাবনা, কুষ্টিয়া ও মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন। তাঁর নিজের নামে নিজস্ব বাহিনী ছিল। কয়েক বছর আগে রাজবাড়ীসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ চরমপন্থী নেতা আজিজুল ইসলাম ওরফে আবদুস সামাদ মেম্বার ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হওয়ার পর সুশীল বাহিনী এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত। ২০১১ সালের ৮ এপ্রিল রাজবাড়ী পুলিশ ঢাকার আশুলিয়া থেকে সুশীলকে তাঁর সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে। এক বছর আগে তিনি কারাগার থেকে বের হন। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি এলাকাতেই ছিলেন। জেলা পুলিশ ও র্যাবের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন তিনি।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকালে সুশীলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় তিনটি অস্ত্র ও দুটি হত্যা মামলা রয়েছে। নিহতের ভাই বাদী হয়ে রোববার রাতে হত্যা মামলা দায়েরের পর জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।