বাসিত খান মুসার বয়স সাত বছরের কাছাকাছি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে তাঁর জীবনটা প্রায় থেমে গেছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) অচেতন সে। একমাত্র ছেলে কবে চোখ মেলে তাকাবে, সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন মা–বাবা।
রাজধানীর রামপুরা থানার সামনে মেরাদিয়া হাট এলাকার ছয়তলা বাসা থেকে মুসা ওই দিন দুপুরে দাদির সঙ্গে নিচে নেমেছিল আইসক্রিম কিনতে। তখন আন্দোলন চলছিল। হঠাৎ গুলি এসে লাগে মুসার মাথার সামনের দিকে। সেই গুলি মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে মুসার দাদি মায়া ইসলামের (৬০) তলপেটে ঢুকে যায়। এতে মৃত্যু হয় মায়া ইসলামের। আর মুসাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখান থেকে গত ২৬ আগস্ট তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসিইউতে নেওয়া হয়।
আজ সোমবার মুসার বাবা মুস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মুসা কাউকে চিনতে পারে না। দুই হাসপাতাল মিলে এখন পর্যন্ত তার মাথায় ছয়টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। কবে ছেলের জ্ঞান ফিরবে, তা চিকিৎসকেরাও বলতে পারছেন না।
নিরুপায় মুসার বাবা বললেন, ‘ছেলেটাকে আইসিইউ থেকে কবে বের করতে পারব, কবে বাড়ি ফিরতে পারব জানি না। ছেলের জন্য হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে, ফলে নিজের কাজকর্মও সব বন্ধ।’ তিনি জানালেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসায় কোনো খরচ লাগছে না। তবে এর আগেই চিকিৎসায় খরচ হয়ে গেছে ৩ লাখ টাকা।
মুস্তাফিজুর বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসার পেছনে খরচ না হলেও হাসপাতালে দুজন মানুষের খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর তো কোনো উপায় দেখছি না। আর কত দিন হাসপাতালে থাকতে হবে, তা তো অজানা।’