নারীদের ওপর সম্প্রতি যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীর উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ এর যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা এ নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আমাদের সব শক্তি প্রয়োগ করে এ অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৫ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দেশের মেয়েরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। শত বাধা পেরিয়ে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, কয়েক দিন আগে তারুণ্যের শক্তিকে উজ্জীবিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশজুড়ে আয়োজিত ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ এ রেকর্ডসংখ্যক নারী ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়েছেন। এ উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৭ লাখ ৪০ হাজার মেয়ে প্রায় ৩ হাজার খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। সর্বস্তরের মানুষ দর্শকসারিতে বসে তাঁদের উৎসাহ জুগিয়েছেন। হাজার হাজার দর্শকের এমন উপস্থিতিই প্রমাণ করে, বাংলাদেশের সমাজে নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠায় পুরুষদেরও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন রয়েছে।
নারীবিরোধী যে শক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে, তা দেশের সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে অবশ্যই মোকাবিলা করা হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে এখনো এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে তাঁদের খাটো করে দেখেন, অবজ্ঞার চোখে দেখেন। অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে, বৈষম্যহীন, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে নারীর পাশে দাঁড়ানোর, তাঁদের সমর্থন জানানোর কোনো বিকল্প নেই।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সমাজে নারীকে খাটো করে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে, তা না হলে আমরা জাতি হিসেবে এগোতে পারব না।’
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে অদম্য নারী পুরস্কার তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
পুরস্কার পাওয়া নারীরা হলেন, অর্থনীতিতে শরিফা সুলতানা, শিক্ষা ও চাকরিতে হালিমা বেগম, সফল জননী মেরিনা বেসরা, জীবন সংগ্রামে জয়ী লিপি বেগম, সমাজ উন্নয়নে মো. মুহিন (মোহনা) এবং বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।