বাজারে নতুন ‘পরিবেশবান্ধব’ প্লাস্টিক ব্যাগ পরিবেশের জন্য কতটা ভালো
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 10-04-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

দেখতে পলিথিন ব্যাগের মতোই। কিন্তু সাদা এই ব্যাগের ওপর বড় করে লেখা—‘আই অ্যাম নট প্লাস্টিক’। এই বার্তার নিচেই লেখা—‘১০০ ভাগ বায়োডিগ্রেডেবল, মেড ফ্রম প্ল্যান্টস, মেড ইন বাংলাদেশ’। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সুপারশপ ‘স্বপ্ন’-তে বাজার করতে গিয়ে এমন ব্যাগ দেখা গেছে। এই ব্যাগে পণ্য নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন ক্রেতারা। পলিথিন ব্যাগের মতো ক্ষতিকর নয় এবং পরিবেশবান্ধব দাবি করে সম্প্রতি বাজারে এসেছে এই বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ।

স্বপ্নে সরবরাহকারী বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক বা পচনশীল প্লাস্টিক ব্যাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইকোস্পিয়ার প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের ব্যাগ বায়োডিগ্রেডেবল এবং কম্পোস্টেবল (মাটিতে মিশে সার হয়ে যায়)। তাদের এই পণ্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) পরীক্ষায় পরিবেশবান্ধব হিসেবে ছাড়পত্র পেয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) ইএন-১৩৪৩২ স্ট্যান্ডার্ডে (ভলান্টারি স্ট্যান্ডার্ড) আছে।

 

 

এই ব্যাগের ওপর লেখা—‘আই অ্যাম নট প্লাস্টিক। ১০০ ভাগ বায়োডিগ্রেডেবল, মেড ফ্রম প্ল্যান্টস, মেড ইন বাংলাদেশ’

এই ব্যাগের ওপর লেখা—‘আই অ্যাম নট প্লাস্টিক। ১০০ ভাগ বায়োডিগ্রেডেবল, মেড ফ্রম প্ল্যান্টস, মেড ইন বাংলাদেশ’ছবি: ইকোস্পিয়ারের সৌজন্যে

এদিকে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, এই ব্যাগও পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই ব্যাগ বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে দেখা করে পলিথিন ব্যাগের পাশাপাশি বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যাগ বাজারজাতকরণ বন্ধেরও দাবি জানিয়েছে।

বায়োডিগ্রেডেবল কী

প্লাস্টিক সহজে পচে না, মাটি বা পানিতে মিশে পরিবেশে শত শত বছর থেকে যায়। ধীরে ধীরে প্লাস্টিক ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরা হয়ে পরিণত হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিকে। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে উদ্ভাবন করা হয়েছে বায়োডিগ্রেডেবল বা পচনশীল প্লাস্টিক। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়; পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক উপকরণ, যেমন গম, ভুট্টা, কাসাভার (শিকড়জাতীয় একধরনের আলু) শ্বেতসার (স্টার্চ)।

 

এই ব্যাগের ব্যবহার শুরু

ইকোস্পিয়ার প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির রাজধানীর দিয়াবাড়ি ও চট্টগ্রামের হালিশহরে কারখানা আছে। ইকোস্পিয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রায়হান উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পণ্য জার্মান প্রযুক্তিতে তৈরি। এটা বায়োডিগ্রেডেবল ও কম্পোস্টেবল। এই ব্যাগ ১৪৭ দিনের মধ্যে মাটিতে মিশে সার হয়ে যাবে।

রায়হান উল ইসলাম আরও বলেন, ২০১৬ সালে তিনি বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক দেশে আনার উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে পণ্যটি বিসিএসআইআরের গবেষণায় পাস করে। গত বছরের আগস্টে স্বপ্ন সুপারশপের সঙ্গে তাঁদের চুক্তি হয়। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই উদ্যোগ অনেকটা থেমে যায়। পরে পবিত্র ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে স্বপ্ন ১২ টন ব্যাগ কিনে ঢাকার আউটলেটগুলোয় দেয়। ৭ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রামের স্বপ্ন আউটলেটগুলোতেও এই ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে। সুপারশপ মীনা বাজার ও ক্যানটিন স্টোরস ডিপার্টমেন্টের (সিএসডি) সঙ্গে তাঁদের চুক্তি হতে যাচ্ছে।

পণ্য দেওয়া হচ্ছে এই ব্যাগে

পণ্য দেওয়া হচ্ছে এই ব্যাগেছবি: ইকোস্পিয়ারের সৌজন্যে

এক থেকে পাঁচ কেজি পণ্য বহনের উপযোগী চার আকৃতির ব্যাগ তৈরি করছে ইকোস্পিয়ার। মাছ-মাংসের মতো পণ্যের জন্য হাতল ছাড়া চার ধরনের ব্যাগ দেড় টাকা থেকে সাড়ে চার টাকা এবং অন্য পণ্য বহনের জন্য হাতলসহ চার ধরনের ব্যাগ আড়াই টাকা থেকে এগারো টাকায় বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

পরিবেশবাদীদের আপত্তি

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) মহাসচিব শাহরিয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক বা পচনশীল প্লাস্টিক হিসেবে যা বলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। এই প্লাস্টিক ডিগ্রেডেড (ভেঙে ক্ষুদ্রাকৃতি হয়ে যাওয়া) বা কোনোভাবে পচে না। বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক (১৮ থেকে ২২ ধরনের) মেশানো থাকে, এর মধ্যে ১২টিই বিষাক্ত। আর থাকে প্রাকৃতিক কিছু উপাদান। এই দুইয়ের পরিমাণ ৫০ শতাংশ করে থাকতে পারে। দেখা যায়, বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যাগের উপকরণের প্রাকৃতিক অংশ বা ৫০ শতাংশ পচে যায়। আর বাকি ৫০ শতাংশে যে পলিমার থাকে, সেটা পচে না, দীর্ঘ সময় ধরে তা ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। প্লাস্টিক কখনো কম্পোস্টেবলও হয় না।

শাহরিয়ার হোসেন আরও বলেন, একদিকে এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর; অন্যদিকে এটা মাটিতে ও পানিতে মিশে খাদ্যশৃঙ্খলে (ফুড চেইন) ঢুকে যায়। গাছপালা ও প্রাণীর মাধ্যমে ক্ষতিকর পদার্থ মানবদেহে ঢুকে রক্তপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। পাকস্থলীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া বাতাস থেকে নিশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে ফুসফুসের ক্ষতি করে। তাই বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যবহারের মাধ্যমে প্লাস্টিক হটিয়ে পরিবেশ রক্ষা একটা ভ্রান্ত ধারণা। এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। তিনি সরকারের প্রতি বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান।

দেখতে পলিথিন ব্যাগের মতোই এই ব্যাগ

দেখতে পলিথিন ব্যাগের মতোই এই ব্যাগছবি: ইকোস্পিয়ারের সৌজন্যে

ব্যাগ ছাড়া ভেজা পণ্য বহন করার ক্ষেত্রে ক্রেতার অসন্তোষের প্রসঙ্গ তুললে শাহরিয়ার হোসেন বলেন, যখন পলিথিন ব্যাগ আসেনি, তখন যেভাবে মাছ-মাংস বহন করা হতো, সেই অভ্যাস ফিরিয়ে আনা দরকার। ভেজা জিনিস নিউজপ্রিন্টে মুড়িয়ে নিলে পানিটা শুষে নেবে। ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ভারতের কিছু অংশে কলাপাতা ও অন্যান্য বড় পাতা দিয়ে মাছ-মাংস মুড়িয়ে তারপর কাগজের ব্যাগে ভরে বহন করা হয়। কাগজের ব্যাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিএসআইআরের একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যাগ পরীক্ষা করার জন্য যে নমুনা ওই প্রতিষ্ঠান (ইকোস্পিয়ার) দিয়েছিল, সেটা আমরা পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পেয়েছিলাম। সেটা ২০১৮ সালের কথা। বিসিএসআইআর একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান। তাই এই প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রতিষ্ঠানকে পণ্যের বাজারজাতকরণের অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার নেই।’

এদিকে বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিসিএসআইআরে রাবার অ্যান্ড প্লাস্টিক শিরোনামে একটি কমিটি আছে। ওই কমিটি ২০০৪ সালে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যাগের ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড ইএন ১৩৪৩২–কে বাংলাদেশ জাতীয় মান হিসেবে নির্ধারণ করে। পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড আপডেট করা হলে ওই কমিটি ২০২০ সালে হালনাগাদ স্টান্ডার্ডটিকে বাংলাদেশের জাতীয় মান হিসেবে নির্ধারণ করে। বিডিএস ইএন ১৩৪৩২: ২০২০ মান অনুযায়ী বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক পণ্যকে চারটি পরীক্ষায় পাস করতে হয়। সেগুলো হলো বায়োডিগ্রেবিলিটি, ডিসইন্টিগ্রেশন ডিউরিং বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট, ইফেক্ট অন দ্য বায়োলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্রসেস এবং ইফেক্ট অন দ্য কোয়ালিটি অব দ্য রেজাল্টিং কম্পোস্ট।

বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন এই ক্রেতা

বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন এই ক্রেতাছবি: ইকোস্পিয়ারের সৌজন্যে

বিএসটিআইয়ের কর্মকর্তারা আরও বলেন, দেশে কিছু প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যাগ অনুমোদনের জন্য আবেদন করলেও সব শর্ত পূরণ করে পাস করতে পারেনি। আর বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক পণ্যের জন্য বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়। তাই ইকোস্পিয়ারসহ কিছু প্রতিষ্ঠান পণ্য বহন করার জন্য যেসব ব্যাগ বাজারজাত করছে, সেগুলোর জন্য বিএসটিআইয়ের অনুমোদন বা লাইসেন্স গ্রহণের প্রয়োজন নেই। ইকোস্পিয়ার বিএসটিআই ইএন-১৩৪৩২ স্ট্যান্ডার্ডে (ভলান্টারি স্ট্যান্ডার্ড) আছে। তাই আইন অনুসারে পণ্য বাজারজাত করতে তাদের বাধা নেই।

 

আইন যা বলে

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন ২০০২–এর ৬ (ক) অনুসারে, পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাত করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা এবং ৬ (খ) অনুসারে, পলিথিন ব্যাগ বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুত ও বিতরণ করলে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে।

এ আইন হওয়ার অনেক পরে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যাগ বাজারে এসেছে। এ ক্ষেত্রে এই ব্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ কীভাবে সম্ভব, তা জানতে চাইলে শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলেছি, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ, তা একবার ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই একই কারণে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকও নিষিদ্ধ করা যায়।’

পরিবেশবাদীদের আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ইকোস্পিয়ারের এমডি রায়হান উল ইসলাম বলেন, ‘শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালি কাজ—এই দুই পর্যায়ে বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। আমরা গৃহস্থালির কাজের উপযোগী ব্যাগ তৈরি করছি। সাধারণ প্লাস্টিক ২০০ বছরের বেশি সময় লাগে পচতে। বিসিএসআইআর পরীক্ষা করে দেখেছে, আমাদের ব্যাগটি ১৪৭ দিনে পচে গেছে। এটা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। আমরা জার্মানি ও উত্তর আমেরিকায় এই ব্যাগ রপ্তানি করছি।’

রায়হান উল ইসলাম আরও বলেন, ‘গাছ কেটে কাগজের ব্যাগ তৈরি হয়। সেটা কি পরিবেশবান্ধব? পরিবেশবিদেরা বায়োডিগ্রেডেবলের বিরুদ্ধে শতাধিক গবেষণা প্রতিবেদন দেখান। অথচ বায়োডিগ্রেডেবলের পক্ষেও দেড় শ গবেষণা প্রতিবেদন আছে।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ কেমিস্ট (রাসায়নিক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) কাজী সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ব্যাগ পরিবেশবান্ধব কি না, তা বলা যাচ্ছে না।

শেয়ার করুন