পেঁয়াজ আমদানির বড় উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বিকল্প ৫ দেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর বিকল্প উৎস চীন, তুরস্ক, মিশর, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আনার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে এসব দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের বাণিজ্যিক পরামর্শদাতাদের রপ্তানিযোগ্য পেঁয়াজের পরিমাণ, রপ্তানিকারকের নাম এবং রপ্তানি মূল্যের বিবরণসহ জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
মিশনগুলোর প্রতিবেদনের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের পেঁয়াজের দাম কমে আসবে বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের শুরুতে অস্বাভাবিক ও রাতারাতি বৃদ্ধির পর এখন সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। এ ছাড়াও স্থানীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজ এবং পাতাসহ অপরিপক্ব পেঁয়াজের কারণে দামে কিছ–টা কমতে শুরু করেছে।
এদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী মার্চ পর্যন্ত সময়ে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হলে অতিরিক্ত ২ লাখ ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন। এ জন্য এ চাহিদা মেটাতে ভারতের বিকল্প দেশগুলো থেকে দ্রুত আমদানির জন্য সরকারকে বড় বড় করপোরেট গ্রুপের সহযোগিতা নেওয়ার সুপারিশ করে সংস্থাটি। একই সঙ্গে কমিশন বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হলে ব্যাংক সুদের হার ও এলসি মার্জিন পুনর্নির্ধারণের সুপারিশও করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত স্থানীয় বাজার নিয়ন্ত্রণে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশের জন্য ভারতের বিকল্প আমদানি উৎস হতে পারে মিয়ানমার, মিশর, তুরস্ক, চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডস ও মালয়েশিয়া। এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে দেশগুলোর কমার্শিয়াল কাউন্সিলররা যেন বাংলাদেশের স্থানীয় আমদানিকারদের সহায়তা করতে পারেন তেমন পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৭ থেকে ২৮ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্থানীয় উৎপাদন ৩৩ লাখ ৯০ হাজার টন। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ ফসল সংগ্রহ পরবর্তী ক্ষতি বাদে মূল উৎপাদন দাঁড়ায় ২৫ লাখ ৪৯ হাজার টনে। একই সঙ্গে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ৫ লাখ ৮৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ লাখ ৫৬ হাজার টন বেশি।
সব মিলিয়ে সরবরাহ লাইনে মোট ৩০ লাখ ৭৫ হাজার টন পেঁয়াজ যুক্ত হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় বেশি। তার পরও স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ কারণে স্থানীয় উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তার কথাও পর্যবেক্ষণে তুলে আনে কমিশন।