সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গত রাতে রাজধানীর বংশাল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একটি প্রাইভেটকারের পিছনের ডালা হতে বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় তিনটি ব্যাগ ভর্তি ৫০ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ মুকুল হোসেন @ মকবুল আহমেদ (৪৪), পিতা-মৃত আবু বক্কর শেখ, সাং-খাদুলি, থানা-ধুনট, জেলা-বগুড়া এবং তার সহযোগী ২। মোঃ আব্দুল শাহীন @ নোমান হোসেন (৩৩), পিতা-মৃত বসু মিয়া, সাং-চরণল, থানা-বুড়িচং, জেলা-কুমিল্লা, ৩। মোঃ ফয়সাল (২৭), পিতা-মোঃ নবীন, সাং-গোপেরবাগ, থানা-সোনারগাঁও, জেলা-নারায়ণগঞ্জ ও ৪। মোঃ আল-আমিন হোসেন (২৪), পিতা-মোঃ আমীর আলী, সাং-চরণল, থানা-বুড়িচং, জেলা-কুমিল্লাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উক্ত মাদক ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা মোঃ মুকুল হোসেন @ মকবুল আহমেদ নিজেকে কখনো নারায়ণগঞ্জ ভিত্তিক লোকাল পত্রিকা ‘‘দৈনিক মাতৃভ‚মির খবর’’ এর একজন সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে চতুরতার মাধ্যমে কুমিল্লাসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা হতে প্রাইভেটকার যোগে অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজার চালান বহন করে নিয়ে এসে তার অপরাপর তিন সহযোগীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিজ হেফাজতে রেখে ক্রয়-বিক্রয় করত। তার প্রধান সহযোগী ফয়সাল বাংলাদেশ ব্যাংক এর একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। ছুটির দিনে বা অবসর সময়ে সুযোগ বুঝে সে এই গাড়িটিকে ব্যবহার করে উক্ত চক্রটির সাথে মিলে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের কাজ করে থাকে। গাড়ির মালিকের ব্যবহৃত আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এর স্টিকার ব্যবহার করে সে নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আনা-নেয়া করে থাকে। চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক পরিবহনের সময় পথিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টের তল্লাশী হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দেয় যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের মাদক পরিবহনের গাড়িটি তল্লাশী না করে।
ধৃত আসামীদের মধ্যে মূলহোতা মুকুল হোসেন @ মকবুল আহমেদ বিগত ২৫ বছর ধরে বিভিন্ন পরিবহনের চালক হিসেবে কাজ করত। অবৈধ পথে সহজেই অধিক অর্থ উপার্জনের আশায় ২০১৬ সাল থেকে সে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হয়। বিভিন্ন পরিবহনে চাকুরী নেয়া স্বত্তেও মাদকের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে সে বারবারই চাকুরীচ্যুত হয়। চাকুরীচ্যুত হয়ে ২০২২ সালের শুরুর দিকে সে নতুন পথ খুজতে থাকে। এসময় চলতি বছরের জুন মাস থেকে নারায়ণগঞ্জ ভিত্তিক লোকাল পত্রিকা “দৈনিক মাতৃভ‚মির খবর” এর ড্রাইভার হিসেবে চাকুরী শুরু করে। উক্ত চাকুরীর পাশাপাশি সে সাংবাদিকতার লগো ব্যবহার করে খুব সহজেই মাদকদ্রব্য চোরাচালানের কাজ চালাতে থাকে। একপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে এসকল অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে গত ০২ মাস পূর্বে চাকুরী থেকে বহিষ্কার করা হয়। চাকুরীচ্যুত হওয়ার সময়ে সে লুকিয়ে “দৈনিক মাতৃভ‚মির খবর” পত্রিকার লগো সম্বলিত একটি মাউথস্পীকার নিয়ে আসে যা ব্যবহার করে বর্তমানে সে মাদকদ্রব্য বহনকারী গাড়ি চালানোর সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশীর মুখে পড়লে সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে সহজেই পার পাওয়ার চেষ্টা করে। এছাড়াও ভ‚য়া সাংবাদিক পরিচয়পত্র তৈরি করে নারায়ণগঞ্জসহ কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৌশলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজা এনে তার তিন সহযোগীসহ মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করে। এভাবে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে আসছে। তার নামে ২০০৮ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় জনৈক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানোর দায়ে হত্যা মামলাসহ একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে এপর্যন্ত একাধিক মামলায় সে বিভিন্ন মেয়াদে হাজতবাস করে।
গ্রেফতারকৃত ফয়সাল একজন উর্দ্ধতন সরকারি কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক। ছুটির দিনে বা অবসর সময়ে সুযোগ বুঝে সে উক্ত গাড়িটিকে ব্যবহার করে চক্রটির সাথে মিলে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের কাজ করে থাকে। গাড়ির মালিকের ব্যবহৃত আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এর স্টিকার ব্যবহার করে সে নিয়মিত বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আনা-নেয়া করে থাকে। ধৃত মুকুল এবং ফয়সাল উভয়েই দুইটি ভিন্ন ভিন্ন সম্মানজনক সংস্থার ভূয়া পরিচয় ব্যবহার করে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের মত গর্হিত কাজ করে রাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রতারণা করে আসছে।
এছাড়াও উক্ত চক্রের অপরাপর দুই সহযোগী মোঃ আব্দুল শাহীন @ নোমান হোসেন এবং মোঃ আল-আমিন হোসেন বিভিন্ন জায়গা থেকে গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রধান ভ‚মিকা পালন করে থাকে। তাদের প্রত্যেকের নামেই বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।