এবার ইসি নিজেই আইন পর্যালোচনা করছে
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 30-01-2025
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

এবার নিজেরাই নির্বাচন–সংক্রান্ত আইনবিধি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব তৈরির কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটার তালিকা আইন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালার মতো বিষয় পর্যালোচনা করছে তারা। যদিও এসব বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ রয়েছে।

পর্যালোচনা শেষে ইসি কিছু আইনবিধি সংস্কারের জন্য নিজেদের একটি প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়ার চিন্তা করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ইতিমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন সংস্কার কমিশনের অন্তত চারটি সুপারিশ নিয়ে জোরালো আপত্তি তুলেছেন। তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের অনেকগুলো সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ইসির স্বাধীনতা খর্ব হবে। এরপর সামনে এল নিজেদের মতো করে আইন পর্যালোচনার বিষয়টি।

আজ বৃহস্পতিবার ইসি এমন চারটি আইন ও নীতিমালা পর্যালোচনায় বসছে, যেগুলোর বিষয়ে সংস্কার কমিশনের নিজস্ব সুপারিশও আছে। সেসব সুপারিশ এখনো বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আসার আগে ইসির এমন উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংস্কার কমিশন আর ইসির প্রস্তাবের মধ্যে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয় কি না বা ইসি সংস্কার কমিশনকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে পারে।

নির্বাচনী ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে গত অক্টোবরে বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন কমিশনসহ অংশীজনদের মতামত নিয়ে ১৫ জানুয়ারি কমিশন তাদের সুপারিশের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে। এই কমিশনসহ প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়ার পর ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে সরকার। তার মধ্য দিয়ে সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। এর মধ্যে ইসির এই উদ্যোগ সামনে এল।

আজ বৃহস্পতিবার ইসি এমন চারটি আইন ও নীতিমালা পর্যালোচনায় বসছে, যেগুলোর বিষয়ে সংস্কার কমিশনের নিজস্ব সুপারিশও আছে। সেসব সুপারিশ এখনো বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।

একই বিষয়ে পর্যালোচনায় বসছে ইসি

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের ১৬টি বিষয়ে ১৫০টির মতো সুপারিশের সারসংক্ষেপে প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করা, সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা এবং ভবিষ্যতে সীমানা নির্ধারণের জন্য আলাদা একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ গঠন করা, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা সংশোধনের সুপারিশ আছে। এসব সুপারিশের বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত আইনে কী আছে, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা কেমন হবে, সেসব প্রকাশ করা হয়নি।

ইসি সূত্র জানায়, আজ সকালে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনের সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভার আলোচ্যসূচি রাখা হয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ভোটার তালিকা আইন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালা ও নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা পর্যালোচনা আছে। তবে এসব বিষয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নয়, বিদ্যমান আইন ও বিধি নিজেদের মতো করে পর্যালোচনা করবে ইসি। কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার দরকার তা চিহ্নিত করে পরবর্তী সময়ে সরকারের কাছে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।

ইসি আইন সংশোধন নয়, পর্যালোচনা করছে। এটি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার প্রাথমিক কারণ নেই। বৃহত্তর আলোচনায় যদি মনে হয়, এসব বিষয় অপেক্ষমাণ রাখা যায়, তাহলে কমিশন সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। এটি মূলত কাজ এগিয়ে রাখা।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ

সীমানা নির্ধারণ আইন, ভোটার তালিকা আইনসহ বিভিন্ন জায়গায় কিছু কিছু সংস্কার দরকার উল্লেখ করে গত রোববার এক অনুষ্ঠানে সিইসি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সংস্কার কমিশন হোক বা না হোক ইসির নিজেদের প্রয়োজনে কিছু সংস্কার আনতে হবে। ইসির নিজেদের প্রয়োজনে যেসব সংস্কার দরকার, সে প্রস্তাবগুলো তাঁরা সরকারকে দেবেন।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনসহ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বিদ্যমান আইন–বিধি পর্যালোচনা করে নতুন আইন ও নীতিমালার প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। সেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর একটি কাঠামো দাঁড়াবে। তখন ইসি সেগুলো দেখে নিজেদের মতো করে পর্যালোচনা করতে পারে। তার আগে এ ধরনের উদ্যোগে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন সংস্কার কমিশনের কেউ কেউ।

অবশ্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ইসি আইন সংশোধন নয়, পর্যালোচনা করছে। এটি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ার প্রাথমিক কারণ নেই। বৃহত্তর আলোচনায় যদি মনে হয়, এসব বিষয় অপেক্ষমাণ রাখা যায়, তাহলে কমিশন সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। এটি মূলত কাজ এগিয়ে রাখা।

সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে সীমানা নির্ধারণ আইনের একটি খসড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ও দেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে নীতিমালা, ভোটার তালিকা আইন ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন নিয়েও তাঁদের বিস্তারিত সুপারিশ আছে। আগামী সপ্তাহে সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হতে পারে।

নির্বাচন–বিশেষজ্ঞ মো. আব্দুল আলীম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে তা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে সরকার ঘোষণা করেনি। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।

ইসি সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তারা মনে করছে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে অক্টোবরের মধ্যে নিজেদের সব প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনসংক্রান্ত কিছু আইন, বিশেষ করে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন ও ভোটার তালিকা আইনে কিছু সংশোধনী আনা জরুরি।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য নির্বাচন–বিশেষজ্ঞ মো. আব্দুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে সীমানা নির্ধারণ আইনের একটি খসড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ও দেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে নীতিমালা, ভোটার তালিকা আইন ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন নিয়েও তাঁদের বিস্তারিত সুপারিশ আছে। আগামী সপ্তাহে সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হতে পারে।

আইন–বিধি পর্যালোচনায় ইসির উদ্যোগ নিয়ে মো. আব্দুল আলীম কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে তিনি মনে করেন, এখানে একটি সমন্বয় থাকা দরকার।

শেয়ার করুন