যুক্তরাষ্ট্রে গত মে মাসে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। দেশটিতে এপ্রিল মাসে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডধারীরা খরচ করেন ৬৬ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬ কোটি টাকায়। হিসাবে এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে ১০ কোটি টাকা বা ১৪ শতাংশের বেশি।
দেশে-বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা শেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ দেশের ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী ৪৪টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। মাস ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিবেদনটিতে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের এবং দেশের ভেতরে বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের তথ্য তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ সবচেয়ে বেশি বাড়লেও সার্বিকভাবে দেশের বাইরে কার্ড ব্যবহার আগের মাসের চেয়ে কমেছে। মে মাসে সব মিলিয়ে দেশের বাইরে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছেন ৪৫৬ কোটি টাকা, যা এপ্রিলে ছিল ৫০৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসে বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশি নাগরিকদের খরচ কমেছে ৫১ কোটি টাকা বা ১০ শতাংশের বেশি। মূলত প্রতিবেশী ভারত থেকে শুরু করে সৌদি আরব, থাইল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) খরচ কমে যাওয়ায় সার্বিকভাবে মে মাসে বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, মে মাসে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে সৌদি আরব ও ভারতে। সৌদি আরবে এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমেছে ২৪ কোটি টাকা বা ৬৫ শতাংশ। ওই মাসে সৌদি আরবে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ৩৭ কোটি টাকা, যা মে মাসে কমে ১৩ কোটি টাকায় নেমে আসে। একই সময়ে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ২২ কোটি টাকা বা সাড়ে ২২ শতাংশ। এপ্রিলে ভারতে যেখানে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছিলেন ৯৮ কোটি টাকা, সেখানে মে মাসে তা কমে হয় ৭৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া থাইল্যান্ডে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে ৯ কোটি টাকা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) ৪ কোটি টাকা ও মালয়েশিয়ায় দুই কোটি টাকা কম খরচ করেন এ দেশের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে কিছু দেশে বাংলাদেশিরা কম ভ্রমণ করেছেন। এ কারণে সেসব দেশে ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে।
এদিকে বিদেশের পাশাপাশি দেশেও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমেছে। এপ্রিলে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে এ দেশের নাগরিকেরা খরচ করেন ২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা, যা মে মাসে কমে হয় ২ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ৪১ কোটি টাকা বা দেড় শতাংশ। দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল পোশা কে-পরিচ্ছদ কেনার খরচ কমে যাওয়া।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে মোটাদাগে ১১টি খাতে ক্রেডিট কার্ড বেশি ব্যবহৃত হয়। এসব খাতের মধ্যে রয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খুচরা কেনাকাটা, বিভিন্ন পরিষেবার বিল প্রদান, নগদ উত্তোলন, ওষুধ ও ফার্মেসি, পোশাক-আশাক কেনাকাটা, অর্থ স্থানান্তর, পরিবহন খাতে ব্যয়, বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও পেশাদারি সেবা এবং সরকারি সেবার বিল প্রদানে। এসব খাতের মধ্যে শুধু পোশাক-আশাক কেনায় মে মাসে খরচ কম করেছেন ক্রেডিট কার্ডধারীরা। এপ্রিলে পোশাক-আশাক কেনায় ক্রেডিট কার্ডে খরচ করা হয় ২৫৪ কোটি টাকা, যা মে মাসে কমে ১১২ কোটি টাকায় নেমে আসে। এই এক খাতেই এক মাসে খরচ কমেছে ১৪২ কোটি টাকা বা ৫৬ শতাংশ।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এপ্রিলে দেশে ঈদুল ফিতর কে সামনে রেখে উৎসবকেন্দ্রিক পোশাক-আশাক কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেশি হয়েছিল। ফলে মে মাসে আর এ জন্য বাড়তি খরচ হয়নি। সে জন্য এ খাতে খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে।
স্থানীয় কার্ডধারীদের পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকেরাও মে মাসে ক্রেডিট কার্ডে কম খরচ করেছেন। এ দেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকেরা এপ্রিলে যেখানে খরচ করেন ১৯৯ কোটি টাকা, সেখানে মে মাসে করেন ১৭০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসে বিদেশি নাগরিকেরা এ দেশে ক্রেডিট কার্ডে ২৯ কোটি টাকা বা সাড়ে ১৪ শতাংশ কম খরচ করেছেন।