ক্ষুব্ধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারেরও ক্ষোভ
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 18-12-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতির কোটা, বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারভুক্ত না রাখার বিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করেছে, তা মানতে চাচ্ছেন না তিন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। পৃথক সভা ও বিবৃতিতে তাঁরা বলছেন, কমিশনের এমন সুপারিশ সমস্যা সৃষ্টি করবে।

গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এই কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের কাছে এ কমিশনের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।

কমিশনের সুপারিশের মধ্যে থাকছে, জনপ্রশাসনে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি, উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ বরাদ্দ করা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা রাখা।

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ বরাদ্দে সুপারিশ নিয়ে আজ বুধবার বিবৃতি দিয়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। তাঁরা উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত সব পদে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়ন চান।

 

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে আজ সংগঠনের জেলা শাখা সভাও করেছে। পদাধিকারবলে জেলা প্রশাসকেরা ওই সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

জেলা প্রশাসকেরা সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে কার্যবিবরণী পাঠিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছেন। সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, তাঁরা বলেছেন, উচ্চ আদালতের একটি মীমাংসিত বিষয়ে কমিশনপ্রধানের আকস্মিক বক্তব্য সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। তাঁরা বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারকে আলাদা করে আগের মতো শতভাগ উপসচিব বা তার ওপরের পদ অন্তর্ভুক্ত করে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছেন।

বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। এই ২৫ শতাংশের ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যাডার থেকে আবেদন আহ্বান করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সুপিরিয়র সিলেকশন কমিটির (এসএসবি) মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বর্তমানে কর্মরত উপসচিবের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০।

সরকারের উপসচিব ও তার ওপরের পদে ‘কোটাপদ্ধতি’ বাতিল করে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগসহ বেশ কিছু দাবি করে আসছে ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’। সংস্কার কমিশন এখন উপসচিব পদে পদন্নোতির কোটা প্রশাসন ক্যাডারের জন্য অর্ধেক, বাকিদের জন্য অর্ধেক করতে চাচ্ছে।

 

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, কমিশনের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়ার আগেই আকস্মিকভাবে এ ধরনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেন প্রকাশ্য নিয়ে আসা হলো সেই প্রশ্ন তুলেছেন। কোনো মহলের ইন্ধনে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস কি না, তা খতিয়ে দেখতেও বলছেন তাঁরা।

আমলাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে সব সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে জারি করা এক নীতিমালায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে ২৫ শতাংশ উপসচিব পদে অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসকে আনুপাতিকভাবে কোটা প্রদান করে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রত্যাখ্যান

বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা কমিশনে রাখার যে সুপারিশ করা হচ্ছে, তার প্রতিবাদ জানিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছে এই দুই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন। তাঁরা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

কর্মকর্তাদের সংখ্যার দিক দিয়ে বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বড় ক্যাডার। শিক্ষা ক্যাডারে কর্মকর্তা প্রায় ১৬ হাজার। আর স্বাস্থ্য ক্যাডারের সদস্য ৩০ হাজারের বেশি। এ দুটিকে ক্যাডারে রাখা না-রাখা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা আছে। এখন বিসিএসে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার হিসেবে না রেখে আলাদা করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সংস্কার কমিশনের পরিকল্পনা হলো, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন যেমন আলাদা হয়েছে, একই রকমভাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারকে আলাদা করা যায়। বিশেষায়িত হিসেবে এ দুটি বিভাগে প্রয়োজনে বেতন বাড়ানো হতে পারে বলেও মনে করে সংস্কার কমিশন।

আজ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন এক বিবৃতিতে সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে অবিলম্বে এই প্রচেষ্টা বন্ধ করার দাবিও জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘২০১২ সালে অনুরূপ একটি প্রচেষ্টা আমরা প্রতিহত করেছি। বিষয়টি মীমাংসিত। এ ধরনের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের বৈষম্যবিরোধী মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এই সুপারিশ প্রত্যাহার করা না হলে কার্যকর প্রশাসনিক সংস্কার ব্যর্থ হবে।’

বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন ও সদস্যসচিব উম্মে তানিয়া নাসরিন এক বিবৃতিতে এই সংস্কার প্রস্তাবকে ‘হঠকারী সুপারিশ’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, স্বাস্থ্যের নীতিনির্ধারণী পর্যায়গুলোতে পুরোপুরি অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পদায়ন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যকে বিজ্ঞানভিত্তিক ও যুগোপযোগী না করে বরং উল্টো পথে হেঁটে আমলাতান্ত্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কায়েম করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ও নীতিনির্ধারণী পদগুলোতে স্বাস্থ্য ক্যাডারের দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন করে বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব।

শেয়ার করুন