খুলনায় শিক্ষার্থীদের একাংশের কর্মসূচি প্রত্যাহার, আরেকাংশের চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 31-07-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

খুলনায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়কদের একটি অংশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে খুলনা সার্কিট হাউসে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মেয়র, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা জানান তাঁরা। রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে ১১ জন ছাত্র ও কয়েকজন অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানান। তবে এ বিষয়ে প্রশাসন, মেয়র বা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। কর্মসূচি অনুযায়ী, খুলনা নগরের রয়েল মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন তাঁরা।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বয়ক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছি। তবে খুলনায় আমরা কোনো সহিংসতা করিনি। এখন আন্দোলনটা ভিন্ন খাতের দিকে চলে যেতে পারে, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হলো। আমরা জানিয়ে দিচ্ছি, আমাদের পরবর্তীতে আর কোনো কর্মসূচি নেই।’
তবে রাতেই শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে। অনলাইনে বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে গতকাল রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনা’র গ্রুপে এ তথ্য জানানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মিরাজ অন্য সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কদের পক্ষে এ ঘোষণা দেন।

পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্যাডে ‘স্পষ্ট বিবৃতি’ শিরোনামে আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে ফেসবুক গ্রুপ ‘কেইউ ইনসাইডার’ এবং ‘থট বিহাইন্ড দ্য কেইউ’ প্রকাশ করা হয়। এত দিন এই দুই গ্রুপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাঁদের কর্মসূচি ঘোষণা ও প্রকাশ করতেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চলমান আন্দোলনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনো সমন্বয়ক ছিলেন না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোরপূর্বক যে প্রেস ব্রিফিং করানো হয়েছে, তা নোংরা রাজধানীর অংশ ছাড়া কিছুই নয়। এ অবস্থায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা এই বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করছি।’
সার্কিট হাউসের ওই বৈঠকের পর থেকে ‘প্রত্যাহার’ ও ‘প্রত্যাখ্যান’ করা শিক্ষার্থীদের সবার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ রয়েছে। বৈঠকের আলোচনা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে তাঁদের কাছে বাড়তি কিছু জানা যায়নি।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক
গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে নগরের বিভিন্ন থানা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের ফোন করে রাত ৯টায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। পরে সময় ও স্থান পরিবর্তন করে রাত ১০টায় সার্কিট হাউসে নির্ধারণ করা হয়।

সভায় খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক, খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ডেকে আমরা বলেছি, “তোমাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। খুলনায় পুলিশ যদি তোমাদের নামে কোনো মামলা দিয়ে থাকে, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এই আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে জামায়াত-বিএনপি যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, এটা বন্ধ করতে সহায়তা করো। এই আন্দোলনে যাঁরা নিহত হয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, সব কটি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শিক্ষার্থীরা তা মেনে নিয়েছেন।’


 

শেয়ার করুন