গাজীপুরে দিনভর শ্রমিক আন্দোলনের পর ১৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানায় ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছয়জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। টঙ্গী ও বাঘেরবাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক কয়েক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকেরা।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে ১৩টি কারখানা বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের (জোন-২) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের মুখে ১৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১২টি পোশাক কারখানা ও একটি খাদ্য উৎপাদন তৈরি কারখানা। খাদ্য উৎপাদন তৈরি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যগুলো এক দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম আরও বলেন, সমস্যা কিন্তু শুধু শ্রমিকদের আছে এমন নয়, সমস্যা মালিকদেরও আছে। আজ টঙ্গীতে যেটা হলো, দেড়–দুই মাসের বেতনের জন্য আন্দোলন হয়েছে। শ্রমিকদের বারবারই বেতন দেবে বলে মালিকপক্ষ আশ্বস্ত করেছে। কিন্তু দিতে পারেনি।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা ১২ দফা দাবি জানিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন। সকাল আটটা থেকে ওই কারখানার শ্রমিকেরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ না দিয়ে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিসহ কয়েকটি দাবি জানিয়ে কারখানার অ্যাসেম্বলি পয়েন্টে অবস্থান নেন। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ আটটি দাবি মেনে নেয়। ১২টি দাবি থেকে আটটি দাবি মেনে নিলেও বাকি চারটি দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়ে তাঁরা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন। পরে চারটি দাবি মেনে নিলে শ্রমিকেরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে গেলে দুপুর ১২টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় একটি খাদ্য উৎপাদন তৈরি কারখানায় বিক্ষোভের সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছয়জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। আজ সকালে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড কারখানা এলাকায় বিক্ষোভের সময় তাঁদের আটক করা হয়। এর আগে শ্রমিকেরা আধা ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেন এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছয়জনকে আটক করেন।
আটক ব্যক্তিরা হলেন খোকন মিয়া, সোহাগ মিয়া, নাজমুল মিয়া, উজ্জল হোসেন, শাকিল আহাম্মেদ ও মোবারক হোসেন।
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌচাক এলাকার কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল রোববার সকালে কাজে যোগদান করেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিকেরা হঠাৎ ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা, সাধারণ ও বাৎসরিক ছুটিসহ ১২ দফা দাবিতে কারখানার ভেতর বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানার পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পরও আবার আজ সকালে শ্রমিকেরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শ্রমিকেরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক কারখানা বন্ধ থাকার পরও কারখানার ভেতরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ভাঙচুর করার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ, থানা–পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ সময় কারখানার ভেতরে অবৈধভাবে প্রবেশ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছয়জনকে আটক করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।