‘ছবি কেন তুলছিস, তোকে মেরে ফেলব’
সিএইচটি টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিত : 26-06-2024
ফাইল ছবি : সংগৃহীত

ছেলেকে বাঁচাতে গিয়েছিলেন দাঁতের চিকিৎসক কুরবান আলী। তাঁকে জনসমক্ষে পিটিয়ে খুন করেন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ আবাসিক এলাকায় গত ৫ এপ্রিল ঘটে যাওয়া আলোচিত এই হত্যা মামলার আসামি কিশোর গ্যাংয়ের নেতা গোলাম রসুল ওরফে নিশান আজ বুধবার চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে আসেন ৫০ থেকে ৬০ জন সহযোগী ও অনুসারী নিয়ে। এ সময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের ছবি তুলতে বাধা দেন।

গোলাম রসুলের সঙ্গে থাকা সুমন খান নামে তাঁর এক অনুসারী ও ছাত্রলীগ নেতা ছবি তুলতে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্র সাংবাদিক সৌরভ দাশকে বাধা দেন। অশালীন ভাষায় গালাগালের পাশাপাশি তাঁকে হত্যারও হুমকি দেন।

আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনের বারান্দায় এ ঘটনা ঘটে। আত্মসমর্পণ করতে আসা কিশোর গ্যাং নেতা গোলাম রসুলের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

গোলাম রসুল ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসভাপতি। তিনি নিজেকে পরিচয় দেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে। নগরের আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ এলাকায় তাঁর বাড়ি। নগরের বিভিন্ন থানায় রসুলের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, মারামারির সাতটি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ দাঁতের চিকিৎসক হত্যা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। মেয়াদ শেষ হওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আত্মসমর্পণ করে গোলাম রাসুল ও আরিফ উল্লাহ নামের দুই আসামি জামিনের আবেদন করেন। আদালত তা নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আদালতে ৫০–৬০ জন অনুসারী নিয়ে যান কিশোরগ্যাং নেতা গোলাম রসুল। এ সময় তাঁর অনুসারীরা সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা দেন। আজ সকালে চট্টগ্রাম আদালতে

আদালতে ৫০–৬০ জন অনুসারী নিয়ে যান কিশোরগ্যাং নেতা গোলাম রসুল। এ সময় তাঁর অনুসারীরা সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা দেন। আজ সকালে চট্টগ্রাম আদালতেছবি: সৌরভ দাশ।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোলাম রাসুল তাঁর অনুসারীদের নিয়ে বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় আত্মসমর্পণ করতে আসেন। এ সময় আদালতের বারান্দায় তাঁর ৫০ থেকে ৬০ জন অনুসারী ছিলেন। জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা তাঁদের আদালতের নিচতলায় হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় ছবি তোলেন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার ফটোসাংবাদিকেরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যান গোলাম রসুলের অনুসারীরা। একপর্যায়ে তাঁরা উপস্থিত সাংবাদিকদের হুমকি দেন।

ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ভিডিওগ্রাফার মো. মামুন প্রথম আলোকে বলেন, গোলাম রসুলকে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় ৫০ থেকে ৬০ জন অনুসারী বারান্দায় অবস্থান নেন। এ সময় সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে তাঁরা বাধা দেন। সাংবাদিকদের ধাক্কা দেন। যমুনা টেলিভিশনের ভিডিওগ্রাফার মো. রিপন বলেন, ছবি তুলতে গেলে তাঁদের বাধা দেন গোলাম রসুলের অনুসারীরা।

প্রথম আলো চট্টগ্রাম অফিসের জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্র সাংবাদিক সৌরভ দাশ ছবি তোলার সময় গোলাম রসুলের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা সুমন খান বাধা দেন। ফেসবুকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসভাপতি লেখা রয়েছে তাঁর পরিচয় হিসেবে। সৌরভ দাশ জানান, ছবি তোলার সময় সুমন তাঁকে গালাগাল করেন। হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুই প্রথম আলোর সাংবাদিক? ছবি কেন তুলছিস? তোকে মেরে ফেলব।’

প্রথম আলোর আলকচিত্র সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দেওয়া ছাত্রলীগ নেতা সুমন খান (ডানে)

প্রথম আলোর আলকচিত্র সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দেওয়া ছাত্রলীগ নেতা সুমন খান (ডানে)ছবি: সৌরভ দাশ

জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার প্রসিকিউশন মফিজুর রহমান দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। হাজিরার জন্য আদালতের বারান্দায় প্রতিদিন লোকজনের ভিড় থাকে। জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা যখন গোলাম রসুলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কিছু অনুসারী সাংবাদিকদের বাধা দেন। পরে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাঁদের সরিয়ে দেন। কারা এ ঘটনায় জড়িত, তাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

গত ৫ এপ্রিল নগরের আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ আবাসিক এলাকায় দাঁতের চিকিৎসক কুরবান আলীকে পিটিয়ে আহত করেন গোলাম রসুলের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। মাদ্রাসাপড়ুয়া ছেলে আলী রেজাকে বাঁচাতে এসে হামলার শিকার হন কুরবান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল কুরবান আলী মারা যান। এ ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে আকবর শাহ থানায় হত্যা মামলা হয়। এরপর পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা কারাগারে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন মো. সামি, মো. রিয়াদ ও আকবর। ঘটনার পর পুলিশ গোলাম রসুলের একটি টর্চার সেলেরও সন্ধান পায়।

মামলার বাদী ও নিহতের ছেলে আলী রেজার অভিযোগ, জামিনে এসে আসামিরা এলাকায় মহড়া দিচ্ছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের ভয় দেখানোয় তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। এই ঘটনায় তাঁরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

শেয়ার করুন